স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ হজ্জ পালন করতে অনেক ধরনের আনুষ্ঠানিকতা পালন করতে হয়। তার প্রায় প্রত্যেকটিতেই শারীরিক পরিশ্রম বা কায়িকশ্রম প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। যার জন্য ধর্মীয় বিধান মতে শারীরিক ও আর্থিকভাবে যোগ্য ব্যক্তিদের বেলায়ই হজ্জকে ফরজ করা হয়েছে, কিন্তু দুঃখের বিষয় আমাদের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে শারীরিক ও আর্থিক যোগ্যতার সমন্বয় ঘটে না। তার মানে আমাদের জনগোষ্ঠীর যখন শারীরিক সামর্থ্য থাকে তখন হয়তো আর্থিক সামর্থ্য অর্জিত হয় না এবং আমরা অনেকেই আর্থিক যোগ্যতা থাকলেও কম বয়সে হজ্জ পালন করতে চাই না, কারণ অনেকেই মনে করেন কম বয়সে হজ্জ পালন করে পরবর্তী সময়ে হয়তো ধর্মীয় বিধি-বিধান ঠিকমতো মেনে চলতে পারব না তাই একটু বেশি বয়স হলেই হজের চিন্তা মাথায় আসে। ফলশ্রুতিতে আমাদের হজ্জযাত্রীদের গড় বয়স প্রায়ই পঞ্চাশের ঊর্ধ্বে থাকে।
আমরা জানি, বয়স পঞ্চাশ বা তারও বেশি হলে শরীরে নানা ধরনের রোগ বাসা বাঁধে। বিশেষ করে হূদরোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপজনিত সমস্যা। হজ্জযাত্রীদের অনেকেই হয়তো জানেন যে, তারা এ ধরনের কোনো না কোনো অসুস্থতায় ভুগছেন, আবার অনেকেই হয়তো জানেন না যে তাদের এ ধরনের কোনো অসুস্থতা আছে। তাই বয়স্ক ব্যক্তিরা যারা হজে যাওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন তাদের আর্থিক প্রস্তুতির পাশাপাশি শারীরিক প্রস্তুতিও নিয়ে রাখতে হবে, তাতে অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঝামেলা এড়িয়ে সুস্থ সুন্দরভাবে হজ্জব্রত পালন করতে পারবেন।
হজে প্রচুর হাঁটাহাঁটি ও ছোটাছুটি করতে হবে যার প্রস্তুতি হিসেবে আপনার পায়ে কোন ধরনের আর্থ্রাইটিস জনিত (বাত ব্যথাজনিত) সমস্যা থাকলে তা চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে আপনার হাঁটাহাঁটির যোগ্যতা বৃদ্ধি করে হজ্জ পালন নির্বিঘ্নে করতে পারবেন। উচ্চরক্তচাপ এমন এক ধরনের অসুস্থতা যার ফলে মানুষের কায়িকশ্রম করার যোগ্যতা কমে যায় এবং উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ না করে অধিক কায়িকশ্রম সম্পাদন করতে গেলে ব্যক্তির স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়, তাই হজ্জযাত্রার আগে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে স্বাস্থ্যের ঝুঁকি কমিয়ে হজ্জ পালন নির্বিঘ্নে করা যেতে পারে।
হজ্জযাত্রীদের মধ্যে অনেকেই পূর্ব থেকেই হূদরোগে আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন। তারা অবশ্যই হজ্জযাত্রার আগে আপনার চিকিৎসকের পরার্মশক্রমে চিকিৎসা গ্রহণ করে হজ্জযাত্রার জন্য শারীরিকভাবে যোগ্য হয়ে হজ্জব্রত পালনের যাত্রা শুরু করবেন। যদি কেউ পরিশ্রম করতে গেলে সহজেই হাঁপিয়ে উঠেন, নিঃশ্বাস ঘন হয়ে আসে বা শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হন বা হয়রান হয়ে যান অথবা বুকে চাপ বা ব্যথা অনুভূত হয় তার সঙ্গে শরীর অত্যধিক ঘেমে যায় তবে অবশ্যই হূদরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করে নিশ্চিত হবেন যে, আপনি উচ্চরক্তচাপ অথবা হূদরোগে ভুগছেন কিনা? তা না হলে হজ্জ পালন করতে গিয়ে আপনি বড় ধরনের অসুস্থতায় আক্রান্ত হয়ে যেতে পারেন। হূদরোগের আরও কিছু লক্ষণ হলো শরীর ফুলে যাওয়া বা হাত-পা-মুখে পানি আসা, বিছানায় শুতে গেলে হালকা কাশি বা শ্বাসকষ্ট হওয়া, ভরা পেটে হাঁটতে গেলে বুকে চাপ বা ব্যথা অনুভব করা, তবে একটু থেমে গেলে বা হাঁটার গতি কমালে ব্যথা বা শ্বাসকষ্ট দূরীভূত হওয়া। এসব ব্যক্তির পেটে অত্যধিক গ্যাস উৎপন্ন হয়ে থাকে। অনেকেই একটু বেশি কাজ করলে অত্যধিক পরিশ্রান্ত হয়ে পড়েন। এসব লক্ষণ অনুভূত হলে চিকিৎসার জন্য হূদরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে এবং সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করে হজ্জযাত্রা শুরু করা উচিত। যারা দীর্ঘদিন ডায়াবেটিসে ভুগছেন তারা স্বাভাবিকভাবেই হূদরোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। তাই হজ্জযাত্রার আগে হার্ট এবং অন্যান্য চেকআপ এবং প্রয়োজনে চিকিৎসা নেওয়া যুক্তিযুক্ত।
ডা. এম শমশের আলী (কার্ডিওলজিস্ট)
সিনিয়র কনসালটেন্ট (প্রা.), ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ঢাকা। সুত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন
খবর বিভাগঃ
জাতীয়
ধর্ম ও জীবন
0 facebook: