স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ পবিত্র কোরবানির
ঈদের আগে সড়ক-মহাসড়কে পশুর ট্রাক থামিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ বেশ পুরনো। এতদিন পুলিশ,
পরিবহন শ্রমিক, সরকার সমর্থক প্রভাবশালীদের বড় অংকের চাঁদা দিয়েই পশুর ট্রাক রাজধানীতে
আনতে হয়েছে। কেউ চাহিদামতো চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে লাঠিয়াল বাহিনীর হাতে নাজেহাল
হয়েছেন বহু পশু ব্যবসায়ী। এবার কয়েকদিন আগে পুলিশের মহাপরিদর্শক ড. জাবেদ পাটোয়ারি
কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, পথের মধ্যে কোনো পশুর ট্রাক থামানো যাবে না, নেয়া যাবে
না কোনো চাঁদা। শ্রমিক নেতারাও চাঁদা না নেয়ার ব্যাপারে সরকারকে আশ্বস্ত করেছেন। এতকিছুর
পরও বন্ধ হয়নি পশুর ট্রাক থেকে চাঁদাবাজি। তবে এবার পাল্টে গেছে চাঁদাবাজির ধরণ। ট্রাক
ভাড়ার মধ্যেই চাঁদার টাকা যোগ করে দেয়া হচ্ছে। ফলে অনেক জায়গায় পথে কেউ ট্রাক না আটকালেও
পুলিশ ও শ্রমিক নেতাদের কাছে ঠিকই চাঁদার টাকা পৌঁছে যাচ্ছে। এই ট্রাক ভাড়ার পরিমাণ
৪০ থেকে ৫০ ভাগ পর্যন্ত বেড়ে গেছে।
চুয়াডাঙ্গা
থেকে রাজধানীর আফতাব নগরে এক ট্রাক গরু এনেছেন ব্যাপারী সুজন উদ্দিন ব্যাপারী বলেন, আগের বছরও ট্রাক ভাড়া ছিল ২০ হাজার টাকা। এবার সেটা ৩০
হাজার টাকা করা হয়েছে। ট্রাক চালকরা ভাড়া ঠিক করার আগে বলছেন, ‘রাস্তার খরচ’ ব্যাপারী
দিলে ভাড়া ২০ হাজার দিলেই চলবে। আর ‘রাস্তার খরচ’ চালককে দিতে হলে ৩০ হাজার টাকাই লাগবে।
সুজন বলেন, ‘ভাই রাস্তার মধ্যে লাঠিয়াল বাহিনী দাঁড়িয়ে থাকে, চাহিদা মতো টাকা না দিলে
হেনস্থা করে, ট্রাক আটকে রাখে। অনেক সময় মারধর করে। তাই আমরা এবার চালকদের শর্তেই রাজি
হয়েছি।’ ট্রাক চালকরা কি পথে কোনো চাঁদা দিচ্ছে? এমন প্রশ্নের জবাবে সুজন বলেন, ‘ভাই
পথের মধ্যে ৬/৭ জায়গায় ট্রাক থামিয়েছিল। কয় টাকা করে দিয়েছে তা আমি বলতে পারব না। ওটা
ট্রাক চালকই জানেন।’
চুয়াডাঙ্গা
থেকে আফতাব নগরেই এক ট্রাক গরু এনেছেন আরেক ব্যাপারী বাহার উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘ভাই আমরা রাস্তায় কোনো ঝামেলা ছাড়াই এবার গরু এনেছি। ট্রাক ড্রাইভার ভাড়া একটু
বেশি নিয়েছে, কিন্তু আমাদের কোনো ঝামেলায় পড়তে হয়নি। অন্যবার আমাদের মারধর পর্যন্ত
খেতে হয়েছে। লাঠিয়াল বাহিনীর লোকজন টাকা না দিলে ট্রাক আটকে রাখত। এতে করে রাস্তায়
বিশাল যানজট তৈরি হয়ে যেত। ফলে বাধ্য হয়েই আমাদের চাহিদামতো টাকা দিতে হয়েছে।’ গতবার
পথে কত খরচ হয়েছে? এবার কত টাকা বেশি দিতে হল? জবাবে বাহার বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গা থেকে
গরু আনতে গতবার ট্রাক প্রতি ৭/৮ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এর বাইরে হেনস্থা হতে হয়েছে।
এবার ট্রাক ভাড়া ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত বেশি নিচ্ছে। এটা পথের চাঁদা হিসেবেই
আমরা দিচ্ছি।’ তাহলে তো চাঁদা বেড়ে গেছে? জবাবে তিনি বলেন, ‘আপনারা যেভাবে ধরেন, বাড়লে
বেড়েছে। কি আর করা, ব্যবসা করতে হলে এটা দিতেই হবে। আমরা এখন এগুলো মেনে নিয়েই ব্যবসা
করছি। এতে গরুর দামও একটু বেড়ে যায়।’
কয়েকদিন
আগে চট্টগ্রামে পশুবাহী ট্রাক থেকে টাকা নেওয়ার সময় হাতেনাতে এক যুবককে গ্রেফতার করেছে
পুলিশ। তার নাম হূদয় ওরফে বাবু। চট্টগ্রাম নগর ট্রাফিক পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর)
হারুন অর রশীদ হাযারী তখন সাংবাদিকদের বলেন, পশুবাহী ট্রাক থেকে কেউ টাকা নিচ্ছে কি
না তা তদারকি করতে এলে হাতেনাতে এক যুবককে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে ১২০
টাকা উদ্ধার করা হয়। ট্রাক থেকে টাকা নেওয়ার আর সুযোগ পাননি। এই ঘটনায় খুলশী থানায়
পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে।
গাবতলী
পশুর হাটে সাতক্ষীরা থেকে এক ট্রাক গরু এনেছেন ব্যাপারী আইয়ুব হোসেন। বলেন, ‘ভাই এসব বলে লাভ কি? ঝামেলাই বাড়ে।’ এর বাইরে আর কিছু বলতে তিনি
অস্বীকৃতি জানালেও আলাপের ফাঁকে বললেন, ‘এবার পুলিশের ঝামেলা একটু কম। কিন্তু পরিবহন
শ্রমিকরা তো ছাড়ে না। ওদের টাকা দিতেই হয়। যশোরের নাভারণ, ঝিনেদা, মাগুরা, রাজবাড়ি
আর আমিনবাজার ঢোকার আগে ওরা দাঁড়িয়ে থাকে। ওদের টাকা দিয়েই আমরা গরু আনি।’ কত টাকা
খরচ হয়েছে? জবাবে তিনি বলেন, ৩/৪ হাজার টাকা মতো লেগেছে। তারপরও বলব পরিস্থিতি আগের
চেয়ে ভালো।
গাবতলীর
আরেক ব্যাপারী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি সিরাজগঞ্জ থেকে প্রতি বছরই একাধিক
ট্রাক গরু আনি। এবারও তিন ট্রাক গরু এনেছি। আগে ভাড়া লাগত ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকা। এবার
২৪ হাজার টাকার নিচে কোনো ট্রাক আসতে রাজি হয়নি। তবে চালকরা পরিষ্কার বলেছে, পথের খরচ
তাদের। এ কারণে আমাকে কেউ ঝামেলা করেনি। আমার মনে হয়, ট্রাক মালিক সমিতি থেকেই এবার
এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে। সে কারণে কোনো ট্রাক চালক কমে আসতে রাজি না। এখন পথে ওরা কোনো
টাকা না নিলেও হয়ত ওদের ভাগের টাকা পৌঁছে যাচ্ছে। এটা নতুন ধরনের চাঁদাবাজি বলতে পারেন।’
গাবতলী
হাটের ইজারাদার লুত্ফর রহমানের ছেলে রাজু মন্ডল অবশ্য সঙ্গে আলাপকালে বললেন
ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, ‘এবার পরিস্থিতি ভালো। তবে ট্রাকের ভাড়া একটু বেশি। এটাকে আমি
চাঁদাবাজি বলতে পারি না। নানা কারণে খরচ বেড়েছে, এ কারণে হয়ত ট্রাক ভাড়া বেশি নিচ্ছে।’
খবর বিভাগঃ
জাতীয়
0 facebook: