05 September 2018

বুধবার সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের নবম মৃত্যুবার্ষিকী


মুহম্মদ তাজুদুর রহমানঃ ৫ সেপ্টেম্বর সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী মরহুম এম সাইফুর রহমানের ৯ম মৃত্যু বার্ষিকী মৌলভীবাজারে বিভিন্ন কর্মসুচীর আয়োজন করা হয়েছে।

৯ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এম.সাইফুর রহমান স্মৃতি পরিষদ ও মরহুমের পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁর গ্রামের বাড়িতে (সদর উপজেলার বাহারমর্দনে) মরহুমের কবরে পুস্পস্তবক অর্পণ, কবর জিয়ারত, কোরানে খতম, মিলাদ, দোয়া, শিরনী বিতরন ও স্মৃতি পরিষদের উদ্যোগে শহরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফলজ বৃক্ষ রোপন কর্মসূচীর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

মরহুম এম. সাইফুর রহমান কর্মময় জীবনে তার অনন্য গুণে মানুষের হ্রদয়ে ঠাঁই করে নিয়ে ছিলেন। তার সাদামাঠা ব্যক্তিগত জীবন মানুষের দৃষ্টি কাড়ত। ছিল না চাওয়া পাওয়ার অস্থিরতা।এমনকি উচ্চ আকাঙ্খা উচ্চ বিলাসিতাও পচন্দ ছিলনা একদমই। কথা বলতেন মারপ্যাচের জটিলতা ছাড়াই সরল সহজ আর ইংরেজী মিশ্রিত আঞ্চলিকতায়। একারনেই দেশ বিদেশে সকল শ্রেণীর মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা ছিল তাঁর। বিশ্বব্যাপী নাম কুড়ানো মৌলভীবাজারের বাহারমর্দনের সাইফুর রহমান দেশের অন্যতম অর্থমন্ত্রী যিনি ১২ বার সংসদে সফলতার সাথে বাজেট পেশ করেছেন। কর্মে তারঁ অনন্য গুণ তিনি উন্নয়নের যে স্বপ্ন দেখতেন তা বাস্তবায়নও করতেন। এটাই ছিলো তার অবিচল আস্থা বিশ্বাস। আর কাজের প্রতি নিখাঁদ আন্তরিকথা ও কর্তব্যকর্মে দ্বায়িত্বশীলতার অনন্য নজির ছিলেন তিনি। নিজ জন্মস্থান মৌলভীবাজার সহ পুরো সিলেট বিভাগেই রয়েছে তাঁর উন্নয়নের চোঁয়া। এম সাইফুর রহমান ১৯৩২ খ্রীষ্টাব্দের ৬ অক্টোবর মৌলভীবাজারের বাহারমর্দনে জন্ম গ্রহন করেন। তার পিতার মোহাম্মদ আব্দুল বাছির, মাতার তালেবুন নেছা। ৩ ভাইয়ের মধ্যে সভার বড় ছিলেন তিনি, মাত্র ৬ বছর বয়সে তাঁর পিতা মারা যান। সে সময়ে তাঁর অভিভাবকক্ত গ্রহণ করেন চাচা মোহাম্মদ সফি। শিক্ষাজীবন, গ্রামের মক্তব ও পাঠশালা শেষ করে তিনি ১৯৪০সালে জগৎসী গোপালকৃষ্ণ উচ্চ ইংরেজী বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এরপর ১৯৪৯সালে কৃতিত্বের সাথে মেট্রিকুলেশনে উর্ত্তীণ হন। সিলেটের এমসি কলেজ থেকে আইকম পাশ করে ১৯৫১ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৫৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েশন ডিগ্রী অর্জন করেন। এরপর তিনি ব্যারীস্টারী পড়ার জন্য লন্ডনে চলে যান সেখানে পৌঁছার পর মত পাল্টে যায় তার, ব্যারিষ্টারীর পরিবর্তে পড়েন র্চাটার্ড একাউন্টেন্সি। ১৯৫৩-৫৮ সময়কালে পড়াশোনার পর ১৯৫৯ সালে ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড একাউন্ট্যান্টস ইংল্যান্ড এন্ড ওয়েলস ফেলোশীপ অর্জন করেন। এছাড়া তিনি আর্থিক ও মুদ্রানীতি এবং উন্নয়ন অর্থনীতিতে বিশেষায়িত শিক্ষা গ্রহণ করেন।

১৯৬০ সালের ১৫ জুলাই বেগম দূররে সামাদ রহমানের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি ৩ পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের জনক। ২০০৩ সালে তার স্ত্রী ইন্তেকাল করেন। ২০০৯ সালের ৫ সেপ্টেম্বর তিনি এক মর্মান্তিক সড়ক র্দূঘটনায় নিহত হন। তার শেষ ইচ্চানুযায়ী বাহারমর্দনে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়। তিনি ২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে মৌলভীবাজার -৩ ও সিলেট-১ আসন থেকে বিপুল ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৬ সালের ৮ই জুন তিনি সংসদে দ্বাদশ বাজেট পেশ করে দেশের সংসদীয় ইতিহাসে সর্বাধিক সংখ্যক বাজেট পেশকারী হিসেবে রের্কড গড়েন। তিনি দীর্ঘদিন দেশের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন ছাড়াও দেশ-বিদেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্টানগুলোতেও নানা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন কৃতিত্বের সাথে। তাঁর জীবদ্দশায় দেশ ও বৃহত্তর সিলেট নিয়ে উন্নয়নের মহা পরিকল্পনা করলেও মৃত্যুজনিত কারনে পুরোটা বাস্তবায়ন করতে পারেন নি।

তাঁর জ্যৈষ্ঠ পুত্র সাবেক এমপি ও মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি এম নাসের রহমান জানান, তার বাবা সবসমই মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পচন্দ করতেন। বৃহত্তর সিলেটে তিন যে দৃষ্টান্তকারী উন্নয়ন করে গেছেন এটিই তার বড় প্রমাণ। সাইফুর রহমান মানুষের হ্রদয়ে ঠাঁই পেয়েছেন মানুষের কল্যাণে করা উন্নয়নমূলক কাজের স্বীকৃতি পেয়েছেন। তিনি মরহুম পিতার জন্য সকলের কাছে দোয়া চান।


শেয়ার করুন

0 facebook: