স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ কেনিয়ার ফৌজদারি আইন অনুযায়ী, আত্মহত্যার চেষ্টাকে হত্যার মতো অপরাধের সঙ্গে সংযুক্ত করে রাখা হয়েছে। এরকম চেষ্টাকারীদের কারাদণ্ড, জরিমানা বা উভয় দণ্ডই হতে পারে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের ঘটনা এড়াতে এবং আত্মহত্যা ঠেকাতে সমাজের অন্যান্য ব্যক্তিদের এগিয়ে আনতে হলে এই আইন বদলানো দরকার।
দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, প্রতিবছর দেশটিতে এক হাজার চারশ’ মানুষ আত্মহত্যা করে। দেশটির আইনি কাঠামোর কারণে এসব মানুষকে দরকারি স্বাস্থ্য সহায়তা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
কয়েকবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন তিন সন্তানের মা রোজেলিন। বিবিসি বাংলার কাছে তুলে ধরেছেন কিভাবে সেই অন্ধকার বিপদ তিনি কাটিয়ে উঠেছিলেন। রোজেলিন বলেন, ‘চরম বিষণ্ণতার কারণে চারবার আমি আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলাম। বাইপোলার নামের এই রোগের এটি ছিল অন্যতম একটি চ্যালেঞ্জ। প্রথমদিকে এসব নিয়ে কারো সঙ্গে কথা বলতে আমি লজ্জা পেতাম, মানুষজন আমাকে দেখতে হাসপাতালে আসতো। তারা নিশ্চয়ই দুইয়ের সঙ্গে দুই মিলিয়ে নিতো যে, আমি নিশ্চয়ই কোনো ওভার ডোজ নিয়েছি। কিন্তু তারা আমার সামনে এসব নিয়ে কথা বলতো না। আমরা সবকিছু নিয়েই কথা বলতাম, কিন্তু এটা নিয়ে কোনো আলোচনা হতো না যে, কি জন্য আমি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি।’
‘বিষণ্ণতাই হয়তো এর কারণ, আত্মহত্যার সেই চেষ্টার জন্য আমি অত্যন্ত লজ্জিত অনুভব করতাম, কারণ আমি তা কাটিয়ে উঠতে পারছিলাম না। মানুষ আমাকে দেখে বিচার বিশ্লেষণ করবে, সে জন্য আমি তাদের সামনেও যেতে চাইতাম না।’ অনেক বছর ধরে ঘনিষ্ঠ সবার কাছ থেকে এই গোপন তথ্য লুকিয়ে রেখেছিলেন রোজেলিন। এমনকি তার কিশোর সন্তানদের কাছ থেকেও। ২০১৩ সালে একটি সহায়তা গ্রুপে অংশ নেওয়ার জন্য রোজেলিনের একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু তাকে আমন্ত্রণ জানায়। এটি এমন একটি খোলামেলা কথা বলার জায়গা, যেখানে সে তার গল্প খুলে বলতে পারে এবং তার মতো অন্য যারা এই লড়াই করছে, তাদের কথাও জানতে পারবে।
এরপর সেখানে যেতে শুরু করেন রোজেলিন। তিনি বলেন, ‘যখন আমি আমার কথা বলতে শুরু করলাম, আমি যেন মুক্তির স্বাদ পেলাম। আমি অনুভব করলাম যে আমি একা নই। ওই সহায়তা গ্রুপের সদস্যদের সঙ্গে যেন আমি একাত্মতা বোধ করলাম, কারণ তারাও এই সমস্যাটি গভীরভাবে মোকাবিলা করছে।’ ‘যখন আপনি কারও সঙ্গে পরিচিত হবেন যে, আপনার মতোই অবস্থায় আছে, যে নিজেকে হত্যার চেষ্টা করেছিল, এখন সেই বলছে, চিন্তার কিছু নেই বন্ধু, এটা একদিন ঠিক হয়ে যাবে। কারণ সে একই অবস্থার ভেতর দিয়ে গিয়েছিল এবং এখন সে সেটি কাটিয়ে উঠতে পেরেছে।’
রোজেলিনের এই আত্ম বর্ণনার মাধ্যমে এটাই পরিষ্কার হচ্ছে যে, নিজেকে তুলে ধরতে পারার সুযোগ আর এ ধরনের সমর্থন গ্রুপের ফলাফল এই মানুষদের জন্য কতটা সহায়ক হতে পারে- এই দুর্বল মনের মানুষদের জন্য তাদের কষ্টকর সময়ে এ ধরনের উদ্যোগ তাদের জীবনে কতটা পরিবর্তন এনে দিতে পারে। তার গল্প এটাও তুলে ধরছে যে, কেনিয়া জুড়ে আত্মহত্যার চেষ্টাকারী মানুষদের দোষারোপ আর বিচারের সংস্কৃতিরও পরিবর্তন কতো জরুরি দরকার।
নাইরোবির মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ক্যাথরিন মুতিসা বলেন, ‘আমি জানি, অপরাধের তালিকা থেকে আত্মহত্যার মতো বিষয় আলাদা করার পরিকল্পনা চলছে। কিন্তু সেই প্রক্রিয়া চলতে চলতে আইনটি অন্তত বদলানো যেতে পারে। কারণ এটাকে অপরাধ হিসেবে বিবেচনার কারণে অনেক মানুষ কোনো চিকিৎসা পায় না।’‘আমি যদি আত্মহত্যার চেষ্টা করি, আমি কারও সঙ্গে সেটি নিয়ে কথা বলতে পারব না। সুতরাং আমি কোনো চিকিৎসাও পাবো না। আইনের ফলে মানুষের চিকিৎসা সেবা পাওয়ার সুযোগ কমে যাচ্ছে। যাদেরকে আত্মহত্যা করা থেকে হয়তো ঠেকানো যেতো, তাদেরকেও কোনো সহায়তা দেওয়া যাচ্ছে না।’ এখন কেনিয়ার অনেক প্রশাসক ও বিচারক মনে করছেন এ ধরনের মানুষদের মানসিক সেবা দরকার এবং তাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো উচিত।
খবর বিভাগঃ
আন্তর্জাতিক
0 facebook: