আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ ইন্দোনেশিয়ায় সুলাওয়েসি দ্বীপের পালু শহরের ভয়াবহ ভূমিকম্প ও সুনামিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৮৩২ জনে দাঁড়িয়েছে। এ ঘটনায় আজ রোববার সকাল পর্যন্ত অন্তত ৫৪০ জনকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থার কর্মকর্তারা।
কর্মকর্তাদের আশঙ্কা, মৃতের সংখ্যা এক হাজার ছাড়াতে পারে। সুনামির তাণ্ডবে গৃহহীন হয়ে পড়েছেন শহরের সাড়ে তিন লাখ বাসিন্দা। সিএনএন এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত শুক্রবারের প্রলয়ঙ্করী ৭ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্প এবং এর পর সৃষ্ট সুনামির ১০ ফুট উচ্চতার ঢেউয়ের তোড়ে মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে দেশটি। এখনো অনেকেই ধংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে রয়েছেন বলে ধারণা করছেন উদ্ধারকর্মীরা।
ভূমিকম্প ও সুনামির তাণ্ডবে আহত অর্ধসহস্রাধিক মানুষকে চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে স্থানীয় হাসপাতালগুলো। বিদ্যুৎ ও ফোনের নেটওয়ার্কহীন অবস্থায় হাসপাতাল থেকে যেকোনো ধরনের সহযোগিতার জন্য আকুল আবেদন জানানো হয়েছে।
এদিকে ভূমিকম্প-সুনামির তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে বহু ঘরবাড়ি। উপদ্রুত এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে উদ্ধার কার্যক্রম। শুক্রবারের ভূমিকম্প ও সুনামির পর শনিবার সকালেও উপকূলীয় পর্যটন এলাকায় ৯ দশমিক ৮ ফুট পর্যন্ত উঁচু ঢেউ দেখা গেছে।
শুক্রবার উঁচু ঢেউ যখন উপকূলে আঘাত হানে, তখন ‘বিচ ফেস্টিভ্যাল’ উপলক্ষে অনেকেই সৈকতে জড় হয়েছিলেন। যাদের বেশিরভাগই নিহত হয়েছেন। কেউ কেউ উঁচু গাছে চড়ে নিজেদের রক্ষা করেছেন। গতকাল শনিবার সমুদ্রতট থেকে অনেক মৃতদেহ উদ্ধার করা হয় বলে জানায় স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। এদিন সকালেও পরাঘাতে সুলাওয়েসি দ্বীপ একাধিকবার কেঁপে ওঠে। উদ্ধার তৎপরতা শুরুর পর খোলা স্থানেই আহতদের চিকিৎসা দিতে দেখা যায়।
জাকার্তায় গতকাল শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা বিএনপিবির মুখপাত্র সুতোপো পুরও নুগরোহো বলেন, ভূমিকম্পের পর যখন সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়, তখনও লোকজন সৈকতে তাদের কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছিলেন। তাই প্রকাণ্ড ঢেউ যখন উপকূলে আছড়ে পড়ে, তখন তারা নিজেদের রক্ষা করতে পারেননি।
ক্ষতির পরিমাণ ‘অত্যন্ত মারাত্মক’ বর্ণনা করে নুগরোহো বলেন, পালুর বেশিরভাগ বাড়িঘর, হাসপাতাল, শপিংমল ও হোটেল ধসে গেছে। একটি সেতু ভেঙে ভেসে গেছে এবং ভূমিধসে পালুর প্রধান মহাসড়ক দিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। শহরের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে, ব্যাহত হচ্ছে উদ্ধার অভিযান। রানওয়ে ও এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল টাওয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় পালুর বিমানবন্দরের কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে।
গত মাসে ইন্দোনেশিয়ার লম্বক দ্বীপে সিরিজ ভূমিকম্প হয়। এর মধ্যে ৫ আগস্টের ভূমিকম্পে ৪৬০ জনের বেশি মানুষ নিহত হন। ২০০৪ সালে ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপে ভূমিকম্পের পর সৃষ্ট ভয়াবহ সুনামিতে ভারত মহাসাগরসংলগ্ন দেশগুলোয় দুই লাখ ২৬ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে শুধু ইন্দোনেশিয়ায় এক লাখ ২০ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে।
খবর বিভাগঃ
আন্তর্জাতিক
0 facebook: