08 October 2018

শত্রুর জন্য ভয়ংকর এক বন্দুক তৈরি করছে চীন!


আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ এক মাইল দুরে দাঁড়িয়ে আছে টার্গেট, শত্রু পক্ষও এক মাইল দুর থেকেই টার্গেটকে গুলি করে মিশন শেষ করে নিরাপদে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেছে। বিশ্বের সবথেকে মারাত্মক এরকম একটি অস্ত্র তৈরি করতে যাচ্ছে চীন। এক বিশেষ ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে সেই বন্দুক তৈরি তৈরি করছে চীন। যা এক কিলোমিটার দূরে দাঁড়িয়ে থাকা কোনও ব্যক্তিকে মেরে ফেলে দিতে পারে। বন্দুক থেকে বেরিয়ে ছুটে যাবে এক আলোর রশ্মি।

চীনের বহুল প্রচারিত ‘সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট’-এ প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, ZKZM-500 নামের ওই অ্যাসল্ট রাইফেল তৈরি হবে শীঘ্রই। ‘স্টার ওয়ারস’ ছবিতে যে ধরনের বন্দুক দেখা গিয়েছিল, সেরকমই একটি বন্দুক তৈরি করবে বেইজিং। ‘এনার্জি বিম’ ব্যবহার করে এটি বানানো হবে।

গবেষকরা জানাচ্ছেন, এই বন্দুকটির ওজন হবে প্রায় তিন কেজি। আর আয়তনে হবে অনেকটা AK-47-এর মত। তবে AK-47-এর থেকে এর শক্তি হবে অনেক বেশি। এই বন্দুকের এনার্জি বিম বা রশ্মি খালি চোখে দেখা যাবে না, তবে সেটি দৌঁড়াতে পারবে কয়েকশ মিটার। টার্গেটে না পৌঁছনো পর্যন্ত থামবে না। সেই বীম ঢুকে যাবে শত্রুর শরীরে। তারপর কষ্টদায়ক মৃত্যু ডেকে আনবে।

এই বন্দুকটিতে ব্যবহার করা হবে লিথিয়াম ব্যাটারি, যা রিচার্জ করা যাবে। পরপর ১০০০ বার ফায়ার করা যাবে এটি। এটা ফায়ারের সময় লাগবে দুই সেকেন্ড। গাড়ি কিংবা জাহাজেও লাগানো যাবে এই অস্ত্র।

তবে দামটা কিন্তু সাধারণের নাগালের বাইরে। ১৫০০০ মার্কিন ডলার দাম পড়বে এক ইউনিটের। তবে কবে এটা বাজারে আসবে সে সম্পর্কে কিছু বলেনি পত্রিকাটি।

সামরিক চীনের উত্থান যেভাবে
স্নায়ুযুদ্ধের অবসান এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর রাশিয়ার সামরিক বাজেট একেবারেই কমে যায়। ১৯৮৮ সালে সোভিয়েত সামরিক বাজেট ছিল ৩৫০ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু ১৯৯২ সালে রাশিয়ার বাজেট এ ক্ষেত্রে ৬০ বিলিয়নে নেমে আসে এবং ১৯৯৮ সালে তা কমে ১৯ বিলিয়নে দাঁড়ায়। একই রাশিয়ার অস্ত্রের প্রধান ক্রেতা দেশগুলো বলতে গেলে নাই হয়ে যায়। রাশিয়ার অস্ত্রের প্রধান ক্রেতা ছিল সোভিয়েত নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ওয়ানা-এর সদস্য দেশগুলো এবং ইরাক। ফলে সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া রাশিয়ার অস্ত্র কারখানাগুলো মারাত্মক আর্থিক সঙ্কটে পড়ে। এদিকে চীন তার সামরিক বাহিনী ও অস্ত্রের আধুনিকায়নে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করে। দ্রুত বিকাশমান অর্থনীতির ওপর ভিত্তি করে চীন তার সশস্ত্রবাহিনী ও অস্ত্র কারখানার আধুনিকায়নে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করে।

১৯৮৯ সাল থেকে চীনের সামরিক বাজেট প্রতি বছরই বাড়তে থাকে। ১৯৮৮ সালে চীনের সামরিক বাজেট ছিল ২১ বিলিয়ন ডলার, ২০১০ সালে এসে তা দাঁড়ায় ২১৫ বিলিয়ন ডলারে। ১৯৯৮ সালেই চীনের সামরিক বাজেট রাশিয়ার বাজেটকে ছাড়িয়ে যায় এবং এর পরবর্তী পাঁচ বছরের মধ্যে সামরিক খাতে ব্যয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশে পরিণত হয়।

১৯৬০-এর দশক থেকেই চীনের সরঞ্জামের সবই ছিল সেকেলে সোভিয়েত ডিজাইন ও প্রযুক্তির। এই সঙ্কট কাটিয়ে ওঠার জন্য চীন পশ্চিমা বিভিন্ন দেশ ও কোম্পানির কাছ থেকে উন্নত অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম সংগ্রহ করতে শুরু করে।

কিন্তু ১৯৮৯ সালে ভিয়েনানমেন মোকাবেলা স্কোয়ারে গণতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভকারীদের নির্বিচার হত্যার পর পশ্চিমা দেশ ও কোম্পানিগুলোর সাথে চীনের সম্পর্কের অবনতি ঘটে। বন্ধ হয়ে যায় তাদের সামরিক সহায়তাও। তখন বিকল্প উৎসের সন্ধান করতে থাকে চীন। কাকতালীয়ভাবে একই সময়ে রাশিয়াও তার আধুনিক অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম বিক্রির জন্য বাজারের সন্ধান করছিল। ফলে চীন ও রাশিয়ার মধ্যে এ ক্ষেত্রে একটি যোগসূত্র গড়ে ওঠে। রাশিয়ার অস্ত্রের নতুন গন্তব্য হয় চীন। দেশটি রাশিয়া থেকে আধুনিক জঙ্গি বিমান, সাজোয়া যান ও যুদ্ধজাহাজ কিনতে থাকে।

১৯৯৯ সাল থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে চীন এ ধরনের অনেক অস্ত্র কেনার ফলে রাশিয়ার অস্ত্রশিল্পও একটি শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে যায়। কিন্তু ২০০৬ সালে এসে দুই দেশের মধ্যে অস্ত্র কেনা-বেচার এই সম্পর্কে কিছুটা ভাটা পড়ে। কারণ রাশিয়া থেকে চীনের অস্ত্র ক্রয় কমতে থাকে।

২০০৭ থেকে ২০০৯ সালের মধ্যে রাশিয়া থেকে কেনা অস্ত্রের পরিমাণ ২৫ শতাংশ কমে যায়। ২০১০ সালে তা আরো ১০ শতাংশ কমে যায়। এর কারণ হচ্ছে- রাশিয়া থেকে কেনা আধুনিক অস্ত্রগুলো অবিকল নকল করে চীনা সামরিক প্রকৌশলী ও বিশেষজ্ঞরা একই ধরনের অস্ত্র উৎপাদনে দক্ষতা অর্জন করে ফেলেছে। এসব অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম অনেক ক্ষেত্রে রাশিয়ার চেয়েও উন্নত করতে সক্ষম হয়েছে তারা। নিজেরা এগুলো ব্যবহার করে পরীক্ষার পর এর কার্যকারিতা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে তারা এসব অস্ত্র ব্যাপকভাবে উৎপাদন শুরু করে। এরপর শুরু করে রফতানি।

এভাবেই চীন অস্ত্র আমদানিকারক দেশ থেকে রফতানিকারক দেশে পরিণত হয়। এখন দেশটি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অস্ত্র রফতানিকারক দেশে পরিণত হয়ে প্রথম স্থানে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে। তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছে।


শেয়ার করুন

0 facebook: