![]() |
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান ২৩ অক্টোবর ‘নগ্ন সত্য’ প্রকাশের ঘোষণা দিলেও বস্তুত নতুন তেমন কোনো তথ্যই প্রকাশ করেননি তিনি। শুধুমাত্র এতদিনে বিশ্ব গণমাধ্যম ও তুর্কি কর্মকর্তাদের অনানুষ্ঠানিক কথাগুলোকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। এতে মনে করা হচ্ছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সৌদি আরবের চাপেই শেষ পর্যন্ত বিস্তারিত ও নতুন কোনো তথ্য প্রকাশ করেননি এরদোয়ান। এছাড়া শুরুতে সৌদি আরবকে দোষ দিতে রাজি না হলেও পরে সত্য প্রকাশ হলে ঘটনার নিন্দা জানায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তবে এই ঘটনায় সৌদি আরবের ওপর সরাসরি যুক্তরাষ্ট্র যে কোনো পদক্ষেপ নেবে না তা অনেকটা নিশ্চিত।
ভিন্ন দেশে নিজেদের দূতাবাসে হত্যার মতো এমন ন্যক্কারজনক ঘটনার জন্ম দেওয়ার পেছনে যে কলকাঠি নেড়েছেন সেই সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানও ঘটনা থেকে সরে যেতে সক্ষম হয়েছেন। দেশটির শীর্ষ দুই কর্মকর্তাকে বলির পাঁঠা বানিয়ে পার পাওয়ার কাজটি সেরেছে সৌদি রাজপরিবার। আর এই কাজের বাকিটুকু যে তারা আরো ভালোভাবে করতে পারবেন তার প্রমাণ পাওয়া যায় এরদোয়ানের নতুন কোনো তথ্য ফাঁস না করা।
২৩ অক্টোবর এরদোয়ানের স্বাভাবিক সংবাদ সম্মেলনের পর ২৪ অক্টোবর রিয়াদে অনুষ্ঠিত ভবিষ্যৎ বিনিয়োগ সম্মেলনে খাসোগি হত্যার ঘটনাকে ন্যক্কারজনক বলেছেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। এছাড়া দোষীদের শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। সাংবাদিক খুনের ঘটনায় দায়ী সব ‘অপরাধীকে’ সাজা দেওয়ার অঙ্গীকারও করেছেন তিনি। রাজধানী রিয়াদে ভাষণে তিনি বলেন, ‘এ অপরাধ সব সৌদি নাগরিকের কাছেই যন্ত্রণাদায়ক।’ কিন্তু এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তুরস্কের সঙ্গে কখনো কোনো বিরোধ হবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি। খাসোগি নিহত হওয়ার পর এটিই জনসম্মুখে সৌদি ক্রাউন প্রিন্স বিন সালমানের প্রথম বক্তব্য। এই হত্যাকাণ্ডে যুবরাজের কোনো ভূমিকা থাকার অভিযোগ সৌদি আরব এর আগে অস্বীকার করেছে। সালমান বলেছেন, ‘এ হত্যাকাণ্ড একটি জঘন্য অপরাধ। এর কোনো যৌক্তিকতা নেই। এই অপরাধের পেছনে যারা আছে তাদের বিচার করা হবে... শেষ পর্যন্ত ন্যায়বিচারেরই জয় হবে।’ তুরস্কের সঙ্গে বেশ ভালোভাবে সহযোগিতার মধ্য দিয়েই কাজ চলছে জানিয়ে যুবরাজ বলেন, ‘বেদনাদায়ক এ ঘটনায় সৃষ্ট পরিস্থিতি নিয়ে অনেক মানুষই সৌদি আরব আর তুরস্কের মধ্যে বিরোধ বাধানোর চেষ্টা করছে। আমি তাদের বলব যে, এ কাজে আপনারা কখনই সফল হবেন না। কোনো বিরোধ কখনো হবে না।’
গত ২ অক্টোবর ইস্তাম্বুলের সৌদি দূতাবাসে প্রয়োজনীয় কাগজ আনতে গিয়েছিলেন জামাল খাসোগি। এরপর থেকে নিখোঁজ হন তিনি। পরে তাকে দূতাবাসের মধ্যে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করে তুরস্ক। তুরস্কের এমন অভিযোগের পর এ ঘটনা বিশ্বব্যাপী ব্যাপক সমালোচিত হয়। তবে তুরস্কের এমন অভিযোগ সরাসরি নাকচ করে সৌদি আরব। এ ঘটনা সত্যি হলে সৌদি আরবকে কড়া শাস্তির হুমকি দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর কয়েক ঘণ্টা পর ট্রাম্প বলেন, ঘটনা প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত সৌদি আরবকে দোষী সাব্যস্ত করা যাবে না।
সৌদি আরব অস্বীকার করায় এ ঘটনার অডিও ও ভিডিও থাকার কথা প্রকাশ করে তুরস্ক। এছাড়া তাকে টুকরো টুকরো করে হত্যা করা হয়েছে বলেও বিভিন্ন প্রমাণসহ প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিশ্ব গণমাধ্যম। এছাড়া এ ঘটনার বিভিন্ন অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ হতে থাকে। এ ঘটনার মূল উপদেশদাতা হিসেবে ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের নাম উঠে আসে।
বিশ্বব্যাপী আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা অবস্থায় ও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে অবশেষে ১৯ অক্টোবর শুক্রবার দূতাবাসের মধ্যে খাসোগিকে হত্যার কথা স্বীকার করে বার্তা দেওয়া হয়। দূতাবাসে জিজ্ঞাসাবাদের সময় হাতাহাতিতে তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানানো হয়। এছাড়া এ ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে ১৮ জনকে গ্রেপ্তারের কথা জানায় সৌদি আরব। খাসোগি হত্যার ঘটনা রাজপরিবার আগে থেকে জানতো না বলেও বিবৃতিতে জানায় সৌদি আরব।
সৌদি আরবের স্বীকারোক্তির পর এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে এবং অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করায় সৌদি আরবের প্রশংসা করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এ ঘটনায় বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড় ওঠে। ২৩ অক্টোবর মঙ্গলবার থেকে রিয়াদে শুরু হওয়া দেশটির গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সম্মেলন বর্জনের ডাক দেয় বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ ও সংস্থা। এছাড়া বিশ্বের নামিদামি কয়েকটি গণমাধ্যমও এ সম্মেলন বর্জন করে।
তখনই মনে করা হচ্ছিলো যে, খাসোগি হত্যার ঘটনা প্রকাশ্যে আসায় সরিয়ে দেওয়া হতে পারে। তবে এখন পর্যন্ত খাসোগির মৃতদেহ উদ্ধার না হওয়া, হত্যার বিস্তারিত জানা না গেলেও মনে হচ্ছে এ ঘটনায় পার পাওয়ার কাজ অনেকটাই সেরে ফেলেছে সৌদি আরব। বাকিটুকু কয়েকদিন অপেক্ষার পরই নিশ্চিত হওয়া যাবে।
তথ্যঃ ইন্টারনেট, ইংরেজি থেকে অনূদিত
খবর বিভাগঃ
আন্তর্জাতিক
0 facebook: