01 November 2018

ইসলাম অবমাননার মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আছিয়া খালাস


আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ ইসলাম অবমাননার মামলায় নিম্ন আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আছিয়া বিবিকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন পাকিস্তানের সর্বোচ্চ আদালতমামলাটি নিয়ে বিভিন্ন সময়ে পাকিস্তানের রাজনীতিতে উত্তাপ সৃষ্টি হয়

প্রতিবেশী তিন নারীর সঙ্গে কথা বলায় সময় মহানবী হজরত মুহাম্মদ ছল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্যের অভিযোগ এনে আছিয়া বিবির বিরুদ্ধে মামলা হলে ২০১০ সালে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়

রায় উপলক্ষে সহিংসতার আশঙ্কায় ইসলামাবাদসহ সারা দেশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছেসুপ্রিম কোর্ট চত্বরে বহু পুলিশ মোতায়েন করা হয়ধর্মীয় স্থাপনাগুলোতেও বিশেষ নিরাপত্তাবলয় গড়ে তোলা হয়

আজ বুধবার পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টের এ রায় ঘোষণার পরই এর প্রতিবাদে ব্লাসফেমি আইনের সমর্থকরা পাকিস্তানের রাস্তায় নেমেছেনতেহরিক-ই-তালেবানসহ ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের কর্মীরা দেশের বিভিন্ন শহরে এই রায়ের প্রতিবাদে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন

রায় ঘোষণার পর পরই ইসলামাবাদ, করাচি, রাওয়ালপিন্ডিসহ দেশের বহু জায়গায় এ রায়ের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছেন বিক্ষোভকারীরা

মুত্তাহিদা মজলিশ-ই-আমালের সভাপতি ও জমিয়ত উলেমা-ই-ইসলাম-ফজল প্রধান ফজলুর রহমান বুধবার রায় প্রত্যাখ্যান করে তাঁর কর্মী-সমর্থকদের এর প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। 

আজ প্রধান বিচারপতি সাকিব নিসার এই রায় পাঠ করেনতিনি বলেন, অন্য কোনো মামলায় অভিযুক্ত না থাকলে আছিয়া বিবির কারাগার থেকে মুক্তিতে কোনো বাধা নেইপাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চে আপিলের শুনানি হয়

তবে রায়ের পর্যবেক্ষণে খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারী হওয়ায় আছিয়া বিবিকে হেয় করা হয়েছিল বলে যে দাবি, তাও নাকচ করে দেওয়া হয়েছে

অন্যদিকে শুনানিতে আছিয়া বিবির পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাইফুল মালুক পুরো তদন্ত প্রক্রিয়াকে বেআইনি বলে উল্লেখ করেন

২০০৯ সালের জুনে লাহোরের নিকটবর্তী শেইখপুরা গ্রামে প্রতিবেশী তিন নারীর সঙ্গে বাদানুবাদের একপর্যায়ে মহানবী হজরত মুহাম্মদ ছল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে নিয়ে তিনটি অবমাননাকর মন্তব্য করার অভিযোগে তাঁর বাড়িতে গিয়ে তাঁকে মারধর করা হয়, পরে মামলা হলে পুলিশি তদন্ত শেষে ইসলাম অবমাননার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়

ওই মামলায় ২০১০ সালে পাকিস্তানের একটি আদালত খ্রিস্টধর্মাবলম্বী আছিয়া বিবির মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেনপরে লাহোরের হাইকোর্টও আছিয়া বিবির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেনপরে ২০১৬ সালে তিনি ওই রায়ের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করেন২০১০ সাল থেকে গত আট বছর কারাবন্দি রয়েছেন আছিয়া বিবিতবে শুরু থেকে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে আসছেন পাঁচ সন্তানের জননী আছিয়া বিবি

আন্তর্জাতিক মহলে আছিয়া বিবির মৃত্যুদণ্ডের রায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা হিসেবে সমালোচিত হয়ে আসছে

তবে পাকিস্তানের ফৌজদারি আইনে ধর্মীয় অবমাননার দায়ে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে এবং দেশটিতে এই আইনের পক্ষে শক্ত জনমত রয়েছেএ ছাড়া দেশটির আইনি কাঠামোয় ইসলাম জাতীয় ধর্ম হিসেবে স্বীকৃত

এযাবৎ ব্লাসফেমি আইনের মামলায় অভিযুক্তদের বেশির ভাগই মুসলমানতবে এখন পর্যন্ত দেশটিতে কাউকেই এ মামলার রায়ে দেওয়া মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়নি

পাঞ্জাব প্রদেশের গভর্নর সালমান তাসিরের গুপ্তহত্যার ঘটনার পর মূলত আছিয়া বিবির মামলাটি আলোচনায় আসেতাসির, আছিয়া বিবির মুক্তির দাবি জানিয়েছিলেন এবং ব্লাসফেমি আইন বাতিলের পক্ষে বক্তব্য দিতেন

২০১১ সালের শুরুতে সালমান তাসির দেহরক্ষীর গুলিতে নিহত হনওই ঘটনায় দেহরক্ষী মুমতাজ কাদরির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হলেও পাকিস্তানের বহু মানুষের কাছে তিনি নায়ক হিসেবে গণ্য হন। 

তথ্যঃ এন টিভি


শেয়ার করুন

0 facebook: