19 November 2018

‘বাংলাদেশে নারী নয়, পুরুষরাই বেশি নির্যাতীত’


স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ বাংলাদেশের সমাজে নারী নয়, পুরুষরাই এখন বেশি বৈষম্য এবং নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন বিদ্যমান আইন-কানুন বিচার ব্যবস্থা পুরুষদের বিপক্ষে

বিশ্বের অনেক দেশে কিছু বেসরকারি সংগঠন সোমবার ১৯ নভেম্বর আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবসপালন করবেবাংলাদেশে এই উপলক্ষে ঢাকায় এক পুরুষ রক্ষা আন্দোলনেরসূচনা করছে বাংলাদেশ মেনস রাইটস ফাউন্ডেশননামে একটি সংগঠন

এটির প্রতিষ্ঠাতা শেখ খায়রুল আলম একজন ছোট-খাট ব্যবসায়ীনারাণগঞ্জের ফতুল্লায় একটি ফুড কোম্পানি ডিলারশীপ নিয়ে ব্যবসা করেনসেই সঙ্গে একটি পোলট্রি ফার্মও চালানআর মহাসচিব ফারুক সাজেদ পেশায় প্রকৌশলীপ্রায় দশ বছর প্রবাসে ছিলেনদুবাই এবং কাতারে কাজ করেছেন

তারা দুজনেই মনে করেন, বাংলাদেশের আইন-কানুন, বিচার-ব্যবস্থা থেকে সবকিছু কার্যত পুরুষদের বিপক্ষে, এখানে পুরুষরা বৈষম্যের শিকার, ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত

মাসখানেক আগে তাদের সংগঠনটি একটি জয়েন্ট স্টক কোম্পানি হিসেবে নিবন্ধিত হয়েছেআর আজ ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে সমাবেশ করে তারা পুরুষ অধিকার রক্ষায় তাদের আন্দোলনকে বড় পরিসরে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন

আমরা নির্যাতিত
এই সংগঠন তৈরির কারণ হিসেবে শেখ খায়রুল আলম বলেন, ‘আমি ব্যবসা করতামপারিবারিক সূত্রে আমার বিয়ে হয়তিন মাস পর আমার স্ত্রীকে ঘরে তোলার কথা ছিলকিন্তু শ্বশুরবাড়ীর লোকজন ঘরে তুলতে দিচ্ছিল নাআমরা পারিবারিকভাবে চাপ দেই, স্ত্রীকে দেয়ার জন্যকিন্তু ওরা সেটা না করে যৌতুকের মামলা করে আমার বিরুদ্ধেঅভিযোগ তোলে যে আমি স্ত্রীকে মারধর করেছি যৌতুকের জন্যআমার এলাকার মেম্বার চেয়ারম্যান সবাই বলেছেন, এই অভিযোগ মিথ্যেকিন্তু কোর্ট এই কথা গ্রহণ করেনি

শেখ খায়রুল আলম বলছেন, এটি তিন বছর আগের ঘটনাতার ভাষায়, কোর্ট নারী ভিক্টিম যা বললো, সেটাকেই গ্রহণ করলোএলাকার লোকের কথা আমলে নিল না

প্রথম মামলায় জামিন নিয়ে আসার পর আমার বিরুদ্ধে আবার নারী নির্যাতনের মামলা দিয়েছেজুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে এই অভিযোগের তদন্ত হয়েছেআমি নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছিতারপরও আমার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি হয়েছেতারপর আমি ৭৭ দিন হাজত খেটেছি, বিনা অপরাধে’- বলেন খায়রুল আলম

শেখ খায়রুল আলম বলেন, তিনি আদালতে অনেক দৌড়াদৌড়ি করেছেনঅনেক মানবাধিকার সংগঠনের দ্বারস্থ হয়েছেনকিন্তু তার মনে হয়েছে, পুরুষদের পক্ষে কেউ নেই, পুরুষের পক্ষে কথা বলার কেউ নেই

আমি আইন ও সালিশ কেন্দ্রে গিয়েছিউনারা বলে, আমরা পুরুষের কোনও কাজ করি নাএরপর ব্লাস্ট বলে আরেকটি সংগঠনের কাছে গিয়েছিউনারাও বলেন,আমরা পুরুষের কাজ করি নাআমি বললাম, আমি তো নাগরিক এদেশেরনাগরিক হিসেবে আমার আইনের সুবিধা পাওয়ার অধিকার আছেউনারা বললেন, আমরা পুরুষের মামলা করি নাতাহলে আমরা পুরুষরা কোথায় যাব? আমাদের পুরুষদের তো একটা যাওয়ার জায়গা থাকতে হবে

সেখান থেকেই এই সংগঠনের জন্মশেখ খায়রুল আলম তৈরি করলেন,পুরুষদের অধিকার রক্ষার সংগঠনবাংলাদেশের যে আইন কানুন, যে বিচার ব্যবস্থা সেটা পুরুষের বিপক্ষে চলে গেছেবাংলাদেশের আইন আসলে পুরুষের বিপক্ষেআমরা সেটা বদলাতে চাই’, বলছেন তিনি

শেখ খায়রুল আলম বলছেন, তারা প্রচুর সাড়া পাচ্ছেনঅনেক পুরুষ তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেননানা বিষয়ে বুদ্ধি-পরামর্শ চাইছেনপ্রতিদিন দেশ-বিদেশে থেকে আমরা অনেক অভিযোগ পাচ্ছিঅনেকে কান্নাকাটি করেনকিন্তু আমরা কি করতে পারিআইন তো আমাদের পক্ষে না

ফারুক সাজেদও এই আন্দোলনে শরিক হয়েছেন একজন ভুক্তভোগী হিসেবেকিন্তু নিজের জীবনের ঘটনা তিনি এখনই প্রকাশ করতে চান নাবললেন, সময় আসলে প্রকাশ করবো

পশু অধিকারেরও প্ল্যাটফর্ম আছে, পুরুষের জন্য কিছু নেই!
ফারুক সাজেদের মতে, বাংলাদেশে পুরুষদের বিরুদ্ধে নির্যাতন, বৈষম্যের ব্যাপারটি এখন বিরাট সামাজিক ইস্যুতে পরিণত হয়েছে

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে সবার জন্য প্লাটফর্ম আছেনারীদের জন্য, শিশুদের জন্য, তৃতীয় লিঙ্গের জন্যএমনকি পশু অধিকার রক্ষার জন্যকিন্তু পুরুষদের জন্য কোন প্লাটফর্ম নেইবাংলাদেশে পুরুষ এখন এতটাই ভালনারেবল যে তার নামে একটি মামলা দিলে, একটা অভিযোগ করলে, সেটা অনেক বড় হয়ে যাচ্ছেসত্য মিথ্যে যাচাইয়ের কোন ব্যাপার এখন আর নেই এখানে

বাংলাদেশ মেনস রাইটস ফাউন্ডেশনেরকাছে প্রতিদিন অনেক ফোন আসেবিভিন্ন বিষয় নিয়েতবে এর মধ্যে পারিবারিক সমস্যাই বেশি

কিছু উদাহারণ দিলেন ফারুক সাজেদযেমন ধরা যাক, স্বামী স্ত্রীর মধ্যে বনিবনা হচ্ছে না, স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কে যখনই কোন টানাপোড়েন তৈরি হচ্ছে, তখন স্ত্রী গিয়ে নারী নির্যাতনের মামলায় ফাঁসিয়ে দিচ্ছে একটা ইস্যু তৈরি করেআজকে সকালেও আমাকে একজন ফোন করে এরকম একটা অভিযোগ করেছে

তিনি বলছেন, এরকম ক্ষেত্রে পুরুষরা একেবারে অসহায়অনেকের ক্ষেত্রে, দেনমোহরের অংক যদি অনেক বড় থাকে, তখন পুরুষরা চাইলেও বিবাহ বিচ্ছেদও ঘটাতে পারছেনা

কিন্তু এটা তো বাস্তবতা যে বাংলাদেশে এই আইনগুলো করাই হয়েছে নারীকে সুরক্ষা দেয়ার জন্যকারণ বাংলাদেশে তো তারাই বেশি নির্যাতিত হন

উত্তরে ফারুক সাজেদ বলছেন, ‘আমরাও মানি, নারীদের জন্য বিশেষ আইন তৈরি করা উচিৎকিন্তু আইনটা এমনভাবে তৈরি করা উচিৎ, যেন কেউ এটা পুরুষের বিরুদ্ধে অপব্যবহার করতে না পারে

বাংলাদেশ মেনস রাইটস ফাউন্ডেশনএখন আইন বদলানোর জন্য আন্দোলন করছেবাংলাদেশে এখন যে মি-টু আন্দোলন শুরু হয়েছে, সেটিও নির্দোষ পুরুষদের হয়রানির জন্য ব্যবহৃত হতে পারে বলে উদ্বিগ্ন ফারুক সাজেদ

তার কথায়, ‘আমাদের কথা হচ্ছে, প্রমান ছাড়া যেন কাউকে ভিক্টিম করা না হয়আমরা সব নির্যাতনের বিপক্ষেসেটা পুরুষ হোক, নারী হোককিন্তু কোন নির্দোষ যেন ভিক্টিম না হয়সামাজিকভাবে হয়রানির শিকার না হয়

সূত্রঃ বিবিসি


শেয়ার করুন

0 facebook: