![]() |
স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ প্রবাদ আছে, রাজনীতিতে চিরস্থায়ী শত্রু-মিত্র বলে কিছু নেই। এবার একাদশ নির্বাচনেও তা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ১৯৭০–এর দশকের শুরুতে যারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়ে মুখে ফেনা তুলতেন, আজ তাদের অনেকেই আওয়ামী লীগের নৌকায় চড়ে বসেছেন। আবার যারা একসময় জিয়াউর রহমানের জমানায় মিথ্যা মামলায় জেল খেটেছেন, দেশান্তরি হয়েছেন, হয়রানির শিকার হয়েছেন, তারা অনেকেই বিএনপির সঙ্গী। উদ্দেশ্য মূলত প্রতিপক্ষকে যত দূর সম্ভব কোণঠাসা করা এবং নিজের বলয়টি যত দূর পারা যায় বিস্তৃত করা।
দশম নির্বাচন বয়কট করেছিল বিএনপি, তবে একাদশ নির্বাচনে ঘুরে দাঁড়াতে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে ইতোমধ্যে চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিচ্ছে। যদিও দলটির নেতাদের অভিযোগ নির্বাচন হতে হলে প্রথমেই প্রয়োজন হচ্ছে, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড অর্থাৎ সবার জন্য সমানসুযোগ। যা এখনও কার্যকরভাবে সৃষ্টি করা হয়নি।
এদিকে ১৮ নভেম্বর থেকে ধানের শীষ প্রতীকে যে সব প্রার্থী মনোনয়ন ফরম তুলেছেন তাদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হচ্ছে। ২১ নভেম্বর নাগাদ সাক্ষাৎকার শেষ হবে। এরপর ২৬, ২৭ নভেম্বর জোট মনোনীত প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দের জন্য প্রত্যয়নপত্র দেওয়া হবে। প্রাথমিক অবস্থায় সবাইকে মনোনয়ন দেওয়া হলেও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০-দলীয় জোটের শরিকদের সঙ্গে আলোচনায় বসে আসন সমঝোতা চূড়ান্ত করবে বিএনপি। তাই শরিকদের কাকে কত বা কোন কোন আসন দেওয়া হবে, সে আলোচনা এখনো শুরু হয়নি। প্রাথমিক আলোচনা চলছে। তারপরও দুই জোটের শরিক দলগুলো নিজেদের সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা বিএনপির হাতে দিতে শুরু করেছে। বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল নেতার সঙ্গে আলাপকালে এমনটাই জানা গেছে। গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশের (আরপিও) সুযোগ কাজে লাগিয়ে দলের মনোনীত প্রার্থীর বিপরীতে যাতে কেউ বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে না পারেন, সেজন্য নতুন কৌশল নিয়েছে বিএনপি। কৌশলের অংশ হিসেবে সারা দেশে ৩০০ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে যারা সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন, তাদের সবাইকে প্রাথমিকভাবে মনোনয়ন দিচ্ছে দলটির মনোনয়ন বোর্ড। এ ছাড়া আরও দুটি কারণে সবাইকে দলের প্রাথমিক মনোনয়ন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিএনপি।
সংশিষ্ট সূত্র মতে, প্রতিটি সংসদীয় আসনে বিকল্প প্রার্থী রেখে চূড়ান্ত দলীয় মনোনয়ন দেবে বিএনপি। যদিও আগে সিদ্ধান্ত ছিলো সাক্ষাৎকার দেওয়া সবাইকে মনোনয়নপত্র দেওয়া হবে। সে অনুযায়ী প্রথম দিন গত রবিবার রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের অনেক জেলার মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সবার হাতে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত দলীয় মনোনয়নপত্র তুলে দেওয়া হয়। কিন্তু এখন সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে দলটির মনোনয়ন বোর্ডে থাকা নেতারা বলছে, প্রতিটি আসনে চূড়ান্ত প্রার্থীর সঙ্গে একজন বা দুজনকে ডামি হিসেবে রাখা হবে। কারণ দলটির একটি বৃহত্তর অংশ মনে করছে, সবাইকে মনোনয়নপত্র দিলে নির্বাচনী এলাকায় গ্রুপিং আরও চাঙ্গা হবে এবং এর সুযোগ নেবে ক্ষমতাসীনদল।
গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ অনুযায়ী, কোনো দল চাইলে এক আসনে একাধিক ব্যক্তির দলীয় মনোনয়ন ফরম জমা দিতে পারবে। তবে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের আগে দল থেকে কাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে তা জানাতে হবে। তখন দলীয় মনোনীত ব্যক্তি ব্যতীত অন্যদের প্রার্থিতা স্বাভাবিকভাবে বাতিল হয়ে যাবে। আর এসব বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে সুস্পষ্ট ব্যাখা জানতে চেয়ে চিঠি দিয়েছে বিএনপি। এই বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রবীণ নেতা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন প্রিয়.কমকে বলেন, ‘গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ অনুযায়ী যে কোনো দল চাইলে এক আসনে প্রাথমিকভাবে একাধিক প্রার্থী দিতে পারে। এ ক্ষেত্রে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের আগে দল থেকে যাকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়া হবে তিনিই দলীয় প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত হবেন। বাকিদের প্রার্থিতা বাতিল হয়ে যাবে। ফলে কারও বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার সুযোগ থাকছে না। কারণ মনোনয়ন জমা দেওয়ার একটি নির্দিষ্ট তারিখ রয়েছে। এরপরে কেউ চাইলেও মনোনয়ন জমা দিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। এমনকি দলের কারাবন্দী চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আসনেও বিকল্প প্রার্থী রাখা হয়েছে। কারণ যদি কোনো কারণে সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়ার নির্বাচনের অযোগ্য বিবেচিত হন তখন যাতে বিকল্প প্রার্থী খুঁজে পাওয়া যায়।’ মনোনয়ন বোর্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিএনপির একজন স্থায়ী কমিটির সদস্য প্রিয়.কমকে জানান, তিনটি লক্ষ্যকে সামনে রেখে ৩০০ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে যারা মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছে, তাদের সবাইকে প্রাথমিকভাবে দলের মনোনয়নের চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রথমত, সবাইকে মনোনয়ন দেওয়া, যাতে কেউ দলের বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার সুযোগ না পায়। দ্বিতীয়ত, ঋণ খেলাপি হিসেবে অনেকের প্রার্থিতা বাতিল করতে পারে নির্বাচন কমিশন। তাই বিকল্প হিসেবে এক আসনে একাধিক প্রার্থীকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে, যাতে করে একজন বাদ পড়লে অন্যজনকে প্রার্থী করা যায়। তৃতীয়ত, এক আসনে একাধিক প্রার্থীকে প্রাথমিক মনোনয়ন দেওয়ার কারণে সবাই চূড়ান্ত মনোনয়নের আশায় মাঠে থাকবে, ফলে তৃণমূলে বিএনপির সাংগঠনিক শক্তিও বাড়বে।
নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ২৮ নভেম্বর। প্রার্থিতা যাচাই-বাচাই ২ ডিসেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ৯ ডিসেম্বর। ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এদিকে সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানে প্রথমবারের মতো স্কাইপ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অংশ নিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। পরবর্তী সময়ে সরকার দেশে স্কাইপ বন্ধ করে দেওয়ার পর অন্য অ্যাপস ব্যবহার করা হয় এবং মনোনয়ন বোর্ডে রয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। এ ছাড়া মনোনয়ন বোর্ডে রয়েছেন সংশ্লিষ্ট জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমাদের দুটি জোট আছে। কারও সঙ্গেই এখনো আলোচনা শুরু হয়নি। সময় আছে অনেক। তবে এবার আমাদের বিজয়ী হতে হবে একটি ভীরু পরিবেশে। তাই জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা যার বেশি, তাকেই আমরা মনোনয়ন দেওয়ার চেষ্টা করব।’
0 facebook: