স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ একাদশ নির্বাচনে ভোট ডাকাতি হয়েছে অভিযোগ করে ঘোষিত ফলাফল বাতিল ও অবিলম্বে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে বিএনপি।
গতরাতে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকের পর দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ দাবি জানান।
তিনি বলেন, পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে একেবারে বিচার বিভাগ থেকে শুরু করে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মধ্য দিয়ে নজিরবিহীনভাবে একটা যুদ্ধাবস্থা তৈরি করে, ত্রাস-ভীত সৃষ্টি করে এ নির্বাচনটি করা হয়েছে। আমরা এ নির্বাচন যেটা নজিরবিহীন সন্ত্রাস, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ও ভোট ডাকাতি বলা যেতে পারে, এই ভোট ডাকাতির ফলে আমরা এ নির্বাচনের ফলাফলকে পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করেছি। আমরা মনে করি, এ কলঙ্কজনক নির্বাচন বাতিল করে আবার অনুষ্ঠিত করতে হবে এবং এটি অবিলম্বে করতে হবে নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার পুনর্নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব নয় বলেছেন, সে ক্ষেত্রে আপনারা এগোবেন কিভাবে প্রশ্ন করা হলে মির্জা ফখরুল বলেন, বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার সবচেয়ে পক্ষপাতদুষ্ট একজন ব্যক্তি এবং আপনারা জানেন যে, প্রথম থেকে তার বিরুদ্ধে আপত্তি জানিয়ে আসছিলাম। তিনি একজন দলীয় ব্যক্তি, তার সব কাযর্কলাপ এরই মধ্যে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে গেছে। উনি যেভাবে কথা বলেন তাতে সম্পূর্ণভাবে সরকার যে কথা বলতে চায় তার প্রতিধ্বনি করেন। তিনি সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেন। তবে কিভাবে বিএনপি এগোবে তা ‘সময়মতো’ জানাবেন বলে জানান তিনি। মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা সব তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে সিদ্ধান্ত নেবো। এ জন্য জোটের সাথে আলাপ করে ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা ঠিক করব।
নির্বাচিতরা কী করবে? যারা নির্বাচিত হয়েছে শপথ নেবেন কি না প্রশ্ন করা হলে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছি। একই সাথে এ দাবি আদায়ে ‘আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি আন্দোলন’ও করবে বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, অবশ্যই আমাদের কর্মসূচি থাকবে। তবে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির নির্বাচিত সাতজন শপথ নেবেন না।
এ নির্বাচনে এটি প্রমাণ হয়ে গেছে যে দলীয় সরকারের অধীনে কখনো নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। মির্জা ফখরুল বলেন, এবার এ সরকার নির্বাচন কমিশনের সাথে যোগসাজশ করে এমন একটি নির্বাচন করল এটি জাতির রাজনৈতিক ইতিহাস ও নির্বাচনের ইতিহাসে সবচেয়ে কলঙ্কময় ঘটনা বলে আমি মনে করি। নতুন ভোটাররা এবার সবচেয়ে বেশি ডিপরাইভড হয়েছেন। তাদের যে অধিকার সেই অধিকার তারা প্রয়োগ করতে পারেননি। রাজধানীসহ প্রতিটি কেন্দ্রতে ভোটারশূন্য ছিল। মির্জা ফখরুল বলেন, এ নির্বাচন প্রমাণ করেছে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল।
মির্জা ফখরুল বলেন, এ সরকার তার রাষ্ট্রীয় যন্ত্র ও নির্বাচন কমিশনের যোগসাজশে আমাদের এজেন্টদের কেন্দ্রে যেতেই দেননি। যেখানে যেখানে গেছেন সেখানে যেমন আমার নির্বাচনী এলাকায় এক শ’ ভাগ এজেন্ট ছিল কিন্তু তাদেরকে বের করে দেয়া হয়েছে। আমাদের দলের নেতা গয়েশ্বর বাবুর (ঢাকা-৩) ওখানে এক শ’ ভাগ এজেন্ট ছিল, তাদেরকে বের করে দেয়া হয়েছে। আমাদের নেতা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সাহেবের নির্বাচনী এলাকায় এজেন্ট ছিল তাদেরকে বের করে দেয়া হয়েছে। এজেন্টদের বিরুদ্ধে আগে থেকে মামলা দিয়ে রেখেছে, অনেকে গ্রেফতার করেছে এবং নির্বাচন এজেন্টদের মনোনীত করার যে কাগজটা প্রার্থী দেবে সেই কাগজটাকে ওরা ছিঁড়ে ফেলেছে বহু জায়গায়।
তিনি বলেন, এ নির্বাচন আগে থেকে পূর্বপরিকল্পনায় হয়েছে। আর ইঞ্জিনিয়ারিংটা করা হয়েছে ভোটের আগের রাতে সুপরিকল্পিতভাবে। এ কারণে জনগণ যে ১০ বছর ভোটের অধিকার প্রয়োগ করতে পারছিল না সেটি থেকে তাদেরকে বঞ্চিত করা হলো।
ভোটের পর বিভিন্ন স্থানে ক্ষমতাসীনেরা সহিংসতা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মির্জা ফখরুল বলেন, অনেকে প্রশ্ন করেছেন এত গ্রেফতার-হামলার পর নির্বাচনে আমরা কেন গেলাম। তখনো বলেছি, এখনো স্পষ্ট করে বলছি আমরা গণতন্ত্র বিশ্বাসী একটি রাজনৈতিক দল। আমরা নির্বাচন করতে চাই, নির্বাচন করে সরকার পরিবর্তনে বিশ্বাসী। সেই কারণে আমরা নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা নির্বাচনে গেছি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য, মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য। নির্বাচন কমিশনকে বারবার বলে এসেছি আপনি একটা পরিবেশ সৃষ্টি করুন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করুন। আপনারা জানেন যে, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তাদের কাছে গেছি নির্বাচনের একটা পরিবেশ সৃষ্টি করতে। কিন্তু তারা সেটি করতে পারেনি।
সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, মাহবুবুর রহমান, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বিকেল ৪টা থেকে দেড় ঘণ্টা বৈঠক করেন। এ বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলন হয়। এরপর ২০ দলীয় জোটের বৈঠকে হয় এতে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটি সদস্য নজরুল ইসলাম খান। বৈঠকে এলডিপির অলি আহমদ ছাড়া জামায়াতসহ বিভিন্ন শরিক দলের নেতারা ছিলেন।
0 facebook: