11 January 2019

অর্ধলাখ টাকা ঋণের বোঝা, ৪ হাজার টাকা ও ১ বস্তা চালের বিনিময়ে সন্তান দিয়ে দিলেন মা


স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মোমেন মিয়াসহায় সম্বল বলতে আছে শুধু একটি ঝুপড়ি ঘরগত বছরই দরিদ্র মোমেন মিয়ার পরিবারের সদস্য সংখ্যা পাঁচজনে দাঁড়ায়

দারিদ্র্যের কাছে হেরে সংসারের ভার নিতে ভিক্ষাবৃত্তিতে নামেন মোমেন মিয়াতবে ভিক্ষাবৃত্তির টাকায় আর সংসার চলছিল নাঅবশেষে হতাশ হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনিএরই মধ্যে আবার অন্তঃসত্ত্বা হন তার স্ত্রী

একদিকে মোমেন মিয়া অসুস্থ অন্যদিকে স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বাএসবের সঙ্গে যোগ হয় সংসারের অভাবগত কয়েক মাসে প্রায় অর্ধলাখ টাকার ঋণের বোঝা মাথায় পড়ে মোমেন মিয়ার। এসবের মধ্যে মঙ্গলবার সকালে স্থানীয় একটি হাসপাতালে মোমেন মিয়ার স্ত্রী ষষ্ঠবারের মতো একটি ছেলে সন্তান প্রসব করেনকিন্তু এই সন্তানের ভরণপোষণের কোনো ব্যবস্থা করতে পারেননি তিনিকোনো উপায় না পেয়ে একদিন বয়সী নবজাতককে তুলে দেন স্থানীয় এক নিঃসন্তান দম্পতির হাতেবিনিময়ে পান চার হাজার টাকা ও এক বস্তা চালঅসহায় বাবা মোমেন মিয়া গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মাওনা উত্তরপাড়া গ্রামের সাহিদ মিয়ার ছেলে

বৃহস্পতিবার সকালে কথা হয় মোমেন মিয়ার সঙ্গেতিনি বলেন, ছোট একটি ঝুপড়ি ঘরে সাতজনের বসবাসআসলে আমরা সমাজে খুবই অবহেলিতএকদিন ভিক্ষা না করলে চুলায় আগুন জ্বলে নাঅবস্থা এতটাই খারাপ যে, ভিক্ষা করে পাঁচ সন্তানের মুখে খাবার তুলে দেয়া কষ্টসাধ্যএকবেলা খেলে অন্যবেলায় না খেয়ে থাকিআমি অচল মানুষ কিছু করতে পারি না

মোমেন মিয়ার ভাষ্য, এসবের মধ্যে ঘরে আসে ষষ্ঠ সন্তানযেখানে আগের সন্তানদের মুখে খাবার দিতে পারি না সেখানে নতুন সন্তানের কি হবে ভেবে বুকে পাথর চাপা দিয়ে অন্যের হাতে তুলে দিয়েছি; অন্তত সেখানে এই সন্তান বাঁচতে পারবে, একটু ভালো থাকতে পারবে- এই আশায়

এদিকে, একদিন বয়সী নবজাতককে নিঃসন্তান দম্পতির হাতে তুলে দেয়ার পর থেকে কাঁদছেন মোমেন মিয়ার স্ত্রীকারও সঙ্গে কোনো কথা না বলে শুধুই কাঁদছেন তিনি

এ বিষয়ে স্থানীয় সমাজকর্মী ফখরুল ইসলাম বলেন, একটি পরিবারের বাবা-মা যখন তার সন্তানকে দারিদ্র্যের কারণে অন্যের হাতে তুলে দেন তখন বুঝতে বাকি থাকে না; আসলে পরিবারটি কতটা অসহায়এটি আমাদের জন্য লজ্জারমোমেন মিয়ার পরিবারের সহযোগিতায় সবার এগিয়ে আসা প্রয়োজন


শেয়ার করুন

0 facebook: