স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ নাম মাওলানা আল আমিন। কুমিল্লার মুরাদনগর থানার দিগীরপাড়ে বাড়ি। বর্তমানে তিনি নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্দিরগঞ্জ থানার পশ্চিম মিজমিজির কান্দারপাড় এলাকায় অবস্থিত বায়াতুল হুদা ক্যাডেট মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ। ২০০৭ সালে দাওরা হাদিস পাস করেন এবং ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে একটি মসজিদে ইমামতি করতেন। এর পর ২০১৩ সাল থেকে সিদ্দিরগঞ্জে একটি মসজিদে ইমামতি শুরু করেন এবং পাশাপাশি বায়াতুল হুদা ক্যাডেট মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন।
অপকর্মের শুরু
মাদরাসা প্রতিষ্ঠার পর ২০১৮ সালে শুরুর দিকে তৃতীয় শ্রেণির একটি শিশুকে (যাকে তিনি মেয়ে বলে পরিচয় দিতেন) তার অফিস রুম ঝাড়ু দেওয়ার সময় যৌন হেনন্তা করেন। অবুঝ শিশু-ছাত্রীটি কান্নাকাটি করলে বিভিন্নভাবে সেদিন বুঝ দেন। এরপর শুরু হয় তার একের পর এক কুকীর্তি। এভাবে গত এক বছরে ছয়টি শিশুকে বিভিন্ন সময় বারংবার ধর্ষণচেষ্টা চালান। মাঝে মাঝে তার স্ত্রী কোনো কারণে ঘরের বাইরে গেলে বিভিন্ন কৌশলে কোমলমতি শিশুদের তার বেড রুমে নিয়েও যৌন হেনস্তা করেছেন বলে অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে। কখনও পানি চেয়ে, কখনও রুম ঝাড়ুর কথা বলে তার অফিস রুমেও একই কাজ করতেন বলে স্বীকার করেন তিনি। আর এ সব শিশুদের তিনি নিজের মেয়ে বলেই পরিচয় দিতেন এবং অপকর্ম চালিয়ে যেতেন।
আল আমিন একটি মেয়েকে মোবাইলে আপত্তিকর ছবি তুলে সেই ছবি বাবা-মাকে দেখানোর ভয় দেখিয়ে বারংবার ধর্ষনচেষ্টা করেছিলেন বলে স্বীকার করেন। তিনি স্কুলের নারী শিক্ষকের দিকেও নজর দিয়েছিলেন, কিন্তু স্ত্রীর ভয়ে তা করতে পারেননি।
যেভাবে ফাঁস হলো অধ্যক্ষের কুকীর্তি
গত ২৭ জুন অক্সফোর্ড স্কুলের শিক্ষক ধর্ষক আরিফুলের অপকর্মের কাহিনি মিডিয়ায় আসার পর মিডিয়ার বিভিন্ন ফুটেজ সেই অপারেশন পরিচালনাকারী কর্মকর্তা র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন ১১ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলেপ উদ্দিন তার ফেসবুকে শেয়ার করেন। সেই ফুটেজ মায়ের মোবাইলে দেখার সময় তৃতীয় শ্রেণির একটি শিশু তার মাকে তার প্রধান শিক্ষককে র্যাব দিয়ে ধরিয়ে দিতে বললে মায়ের জেরায় প্রথম বেরিয়ে আসে 'হুজুর'-এর অপকর্ম।
সেই সূত্র ধরেই এবার মাদরাসা অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে তথ্য সংগ্রহ ও গোয়েন্দা নজরদারিতে নামেন র্যাব ১১ এর সহকারী পরিচালক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলেপ উদ্দিন। অবশেষে বেরিয়ে আসে অধ্যক্ষের নানা কুকীর্তির গল্প। র্যাব আটক করে এই 'বিকৃতমস্তিষ্ক' শিক্ষককে। তিনি স্বীকার করেন, পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রীকে তিনি ধর্ষণ করেছেন। এ ছাড়াও দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণির ১০ বা ততধিক ছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টা, যৌন নিপীড়ন ও যৌন হেনস্তা করেছেন।
আল আমিনের মোবাইলে ও কম্পিউটারে অনেকগুলো পর্ন ভিডিও পাওয়া গেছে যেগুলো এই ছোট্ট শিশুদের দেখিয়ে যৌন হেনস্তা করতেন বলে একাধিক ভিকটিম বলেছে এবং পরবর্তীতে আল আমিনও স্বীকার করেন।
0 facebook: