ছবিঃ সংগৃহীত |
সিলেট ও মৌলভীবাজারের প্রাচীন ঐতিহ্য পিঠে-পুলির অন্যতম চুঙ্গাপিঠা বা চুঙ্গাপোড়া বিলুপ্তপ্রায় হয়ে যাচ্ছে। আগের মতো এখন আর গ্রামীণ এলাকার বাড়িতে বাড়িতে চুঙ্গাপোড়ার আয়োজন চোখে পড়ে না। শীতের রাতে খড়কুটো জ্বালিয়ে সারারাত চুঙ্গাপোড়ার দৃশ্যও তাই দেখা যায় না। বিলুপ্ত হওয়ার আগে এই ঐতিহ্য ধরে রাখার ব্যবস্থা নিতে হবে।
একসময় ছিলো বাজারে মাছের মেলাও বসতো। সেই মেলা থেকে মাছ কিনে কিংবা হাওর-নদীর বড় বড় রুই, কাতলা, চিতল, বোয়াল, পাবদা, কৈ, মাগুর মাছ নিয়ে এসে হালকা মসলা দিয়ে ভেজে (আঞ্চলিক ভাষায় মাছ বিরান) চুঙ্গাপিঠা খাওয়া ছিলো মৌলভীবাজার ও সিলেটের একটি অন্যতম ঐতিহ্য। বাড়িতে মেহমান বা নতুন জামাইকে শেষ পাতে চুঙ্গাপিঠা মাছ বিরান আর নারিকেলের মিঠা, বা রিসা পরিবেশন না করলে যেনো লজ্জায় মাথা কাটা যেতো।
বর্তমানে সে দিন আর নেই। চুঙ্গা পিঠা তৈরির প্রধান উপকরণ ঢলু বাঁশ ও বিন্নি ধানের চাল (বিরইন ধানের চাল) সরবরাহ এখন অনেক কমে গেছে। অনেক স্থানে এখন আর আগের মতো চাষাবাদও হয় না।
মৌলভীবাজারের বড়লেখার পাথারিয়া পাহাড়, জুড়ীর লাঠিটিলা, রাজনগরসহ বিভিন্ন উপজেলার টিলায় টিলায় ও চা-বাগানের টিলায়, কুলাউড়ার গাজীপুরের পাহাড়, শ্রীমঙ্গলের কালাপুর পাহাড় ও জুড়ী উপজেলার চুঙ্গাবাড়িতে প্রচুর ঢলুবাঁশ পাওয়া যেতো। তন্মধ্যে চুঙ্গাবাড়ি এক সময় প্রসিদ্ধ ছিলো ঢলুবাঁশের জন্যে। অনেক আগেই বনদস্যু ও ভূমিদস্যু এবং পাহাড়খেকোদের কারণে বনাঞ্চল উজাড় হয়ে যাওয়ায় হারিয়ে গেছে ঢলুবাঁশ। তবে জেলার কিছু কিছু টিলায় এখনও ঢলুবাঁশ পাওয়া যায়। বড়লেখার বোবারথল ও মাধবছড়া বিট, কমলগঞ্জের কুরমা বনবিটে এখনও চোখে পড়ে ঢলুবাঁশ। পাহাড়ে বাঁশ নাই বলে বাজারে এই ঢলুবাঁশের দামও এখন তাই বেশ চড়া। ব্যবসায়ীরা দূরবর্তী এলাকা থেকে এই ঢলুবাঁশ ক্রয় করে নিয়ে যান নিজ নিজ উপজেলায় বিক্রির আশায়। এই বাঁশটিও সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেয়া জরুরী বলে মনে করেন স্থানীয়রা।
ঢলুবাঁশ ছাড়া চুঙ্গাপিঠা তৈরি করা যায় না। কারণ ঢলুবাঁশে এক ধরণের তৈলাক্ত রাসায়নিক পদার্থ আছে, যা আগুনে বাঁশের চুঙ্গাকে না পোড়াতে সাহায্য করে। ঢলুবাঁশে অত্যধিক রস থাকায় আগুনে না পড়েই ভেতরের পিঠা আগুনের তাপে সিদ্ধ হয়। ঢলুবাঁশের চুঙ্গা দিয়ে ভিন্ন স্বাদের পিঠা তৈরি করা হয়ে থাকে। কোনো কোনো মহিলা চুঙ্গার ভেতরে বিন্নিচাল, দুধ, চিনি, নারিকেল ও চালের গুঁড়া দিয়ে পিঠা তৈরি করেন। পিঠা তৈরি হয়ে গেলে মোমবাতির মতো চুঙ্গা থেকে পিঠা আলাদা হয়ে যায়। চুঙ্গাপিঠা পোড়াতে আবার প্রচুর পরিমাণে খড়ের (নেরা) দরকার পড়ে। এই খড়ও এখন সময়ের প্রয়োজনে দাম একটু বেশি। (সংগৃহীত)
খবর বিভাগঃ
বিভাগীয় সংবাদ
শিল্প সাহিত্য
সিলেট বিভাগ
0 facebook: