17 March 2019

বঙ্গবন্ধুর ৯৯তম জন্মবার্ষিকী আজ


স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ আজ ১৭ মার্চ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৯তম জন্মবার্ষিকী এবং জাতীয় শিশু দিবস১৯২০ সালের এই দিনে ফরিদপুর জেলার তৎকালীন গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন মুক্তিযুদ্ধের এই মহানায়কশৈশবে খোকানামে পরিচিত সেই শিশুটি পরবর্তী সময়ে হয়ে ওঠেন নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের মুক্তির অনন্য দিশারিগভীর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, আত্মত্যাগ ও জনগণের প্রতি অসামান্য মমত্ববোধের কারণেই পরিণত বয়সে হয়ে ওঠেন এক অবিসংবাদিত নেতা

যথাযোগ্য মর্যাদা ও উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে আজ দিবসটি উদযাপন করা হবেআজ সরকারি ছুটিএ উপলক্ষে সরকারি ও বেসরকারিপর্যায়ে ঢাকা ও টুঙ্গিপাড়াসহ সারা দেশে বিস্তারিত কর্মসূচি নেয়া হয়েছেরাষ্ট্রপতি মুহম্মদ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টুঙ্গিপাড়ায় চিরনিদ্রায় শায়িত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদনসহ নানা কর্মসূচিতে অংশ নেবেনএ ছাড়া দিবসটিতে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী

১৯২০ সালের এই দিনে বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার তৎকালীন গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়ার সম্ভ্রান্ত শেখ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন শেখ মুজিবুর রহমানতার বাবার নাম শেখ লুৎফর রহমান ও মাতার নাম সায়েরা খাতুনপিতা-মাতার চার কন্যা এবং দুই পুত্রের সংসারে তিনি ছিলেন তৃতীয়

আজীবন সংগ্রামী বঙ্গবন্ধুর যখন জন্ম হয় তখন ছিল ব্রিটিশ রাজত্বের শেষ অধ্যায়গ্রামের স্কুলে তার লেখাপড়ার হাতেখড়ি১৯২৭ সালে শেখ মুজিব গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু করেনকিশোর বয়সেই সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন তিনিগোপালগঞ্জ মিশন স্কুলে অষ্টম শ্রেণীতে অধ্যয়নকালে তৎকালীন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যোগদানের কারণে বঙ্গবন্ধু প্রথমবারের মতো কারাবরণ করেনএরপর থেকে শুরু হয় তার বিপ্লবী জীবনগোপালগঞ্জ মিশন স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করার পর তিনি কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে (বর্তমান নাম মাওলানা আজাদ কলেজ) ভর্তি হনকলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত এই কলেজটি তখন বেশ নামকরা ছিলএই কলেজ থেকে সক্রিয়ভাবে তিনি ছাত্র রাজনীতি শুরু করেন১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের বছর এ কলেজ থেকে বিএ ডিগ্রি লাভ করেনসহকর্মীদের নিয়ে ১৯৪৮ সালে গঠন করেন ছাত্রলীগপাকিস্তান-ভারত পৃথক হয়ে যাওয়ার পর শেখ মুজিব পূর্ব পাকিস্তানে ফিরে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠা করেন পূর্ব-পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ
১৯৩৮ সালে ১৮ বছর বয়সে বঙ্গবন্ধুর সাথে বেগম ফজিলাতুন্নেসার বিয়ে হয়এই দম্পতির ঘরে দুই কন্যা এবং তিন পুত্রের জন্ম হয়কন্যারা হলেনÑ শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানাআর পুত্ররা হলেনÑ শেখ কামাল, শেখ জামাল এবং শেখ রাসেল

বঙ্গবন্ধু অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী ছিলেনকালের পরিক্রমায় কখনো ভাষার জন্য, কখনো স্বাধিকারের জন্য চলতে থাকে তার আন্দোলনএসবের আড়ালে গড়ে উঠে স্বাধীনতার আন্দোলন৬৬র ছয় দফা আন্দোলন, ৬৯র গণঅভ্যুত্থান পেরিয়ে ৭০ সালের নির্বাচনে নেতৃত্ব দিয়ে তিনি বাঙালির অবিসংবাদিত নেতায় পরিণত হন১৯৭১র ৭ই মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রামবঙ্গবন্ধুর এই ঐতিহাসিক আহ্বানে সাড়া দিয়ে সেদিন গোটা বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল৭১র ২৫ মার্চ কালো রাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী অপারেশন সার্চ লাইটনামে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর আক্রমণ শুরু করলে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু তার ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাসভবন থেকে ওয়্যারলেসের মাধ্যমে স্বাধীনতার ঘোষণা দেনএ ঘোষণার পর বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়সেখানে কারাগারে আটক রেখে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী তার বিচার শুরু করেবঙ্গবন্ধুর নির্দেশনা মোতাবেক ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বীর বাঙালি ৭১র ১৬ ডিসেম্বর বিজয় ছিনিয়ে নেয়জন্ম হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের৭২র ১০ জানুয়ারি বিশ্ব নেতৃবৃন্দের চাপে পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তিলাভ করে তিনি স্বদেশে ফিরে আসেনদেশে ফিরেই তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে মনোনিবেশ করেনকিন্তু সেই সুযোগ বেশি দিন পাননি তিনি১৯৭৫ সালে জাতির অর্থনৈতিক মুক্তি তথা একটি শোষণমুক্ত ও সুখী-সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে তিনি জাতীয় কর্মসূচি ঘোষণা করেনএর কিছুদিনের মধ্যেই ৭৫র ১৫ আগস্ট কালোরাতে ঘাতকদের তপ্ত বুলেটে সপরিবারে নিহত হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

কর্মসূচি : আজ সকাল সাড়ে ৬টায় বঙ্গবন্ধু ভবন ও দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদনসকাল ১০টায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের প্রতিনিধি দল টুঙ্গীপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং দোয়া ও মিলাদ মাহফিলে অংশগ্রহণ করবেনএ ছাড়াও সেখানে শিশু সমাবেশ, গ্রন্থমেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবেএ ছাড়া আগামীকাল সোমবার বিকেল ৩টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবেআওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এতে জাতীয় নেতৃবৃন্দ ও বরেণ্য বুদ্ধিজীবীরা বক্তৃতা করবেন

দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন ও জেলা শিশু অ্যাকাডেমির উদ্যোগে আজ দেশব্যাপী সব জেলা ও উপজেলা সদরে শিশু সমাবেশ, শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছেবাংলা অ্যাকাডেমির নজরুল মঞ্চে শিশু-কিশোর অনুষ্ঠান এবং দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারসহ সব গণমাধ্যমে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করা হবেতথ্য মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র, চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদফতর এবং গণযোগাযোগ অধিদফতরের আয়োজনে জেলা ও উপজেলা সদরে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও মহান মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সপ্তাহব্যাপী পুস্তক ও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হবেধর্ম মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দেশব্যাপী সব মসজিদে বিশেষ মোনাজাত এবং অন্যান্য উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছেবিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোতেও দিবসটি যথাযথভাবে উদযাপন করা হবে


শেয়ার করুন

0 facebook: