22 July 2019

ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে জামায়াতে নামাজ ও হিজাব-নেকাব পরতে বাধা!


স্টাফ রিপোর্টার॥ শুনতে অবাক লাগলেও বাস্তবে এমনটাই ঘটছে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল মতিঝিলে। বিতর্কিত সুপারিনটেনন্ডেন্ট আব্দুস সালামের ইসলাম বিদ্বেষী কর্মকাণ্ডে এখন এমন পরিবেশই বিরাজ করছে সেখানে। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করাই যেন নেশায় পরিনত হয়েছে অস্থায়ী সুপারিনটেন্ডেন্ট আব্দুস সালামের।

ডা. আব্দুস সালাম। চিকিৎসক পরিচয়ের আড়ালে এ যেন এক ভয়ানক উগ্রবাদী ইসলাম বিদ্বেষী সন্ত্রাসীর নাম। ইতোপূর্বে এই চিকিৎসক পরিচয়ধারী দুর্নীতিবাজের বিভিন্ন অপকর্মের ফিরিস্তি নিয়ে আমাদের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করলেও দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের টনক নড়েনি। ফলে এ যূগের এই ডিজিটাল সফদার ডাক্তার বহাল তবিয়তেই চালিয়ে যাচ্ছেন তার অপকর্মের ধারাবাহিকতা।

দেশের চিকিৎসা সেবায় সুনাম অর্জনকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে অন্যতম ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল। দুঃস্থ, অসহায়দের উন্নত চিকিৎসার সুযোগ দিতেই যে প্রতিষ্ঠানের জন্ম, সেই প্রতিষ্ঠানের মতিঝিল শাখা এখন নিজেই রোগগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। দুর্নীতিবাজ সামীম আফজালের হাত ধরে পরিচালকের চেয়ারে বসার পর থেকেই আব্দুস সালাম এক ধরনের নৈরাজ্যকর পরিবেশ সৃষ্টি করে হাসপাতালের সেবার পরিবেশ উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিনষ্ট করে আসছেন। সীমাহীন দুর্নীতির দায় কাঁধে নিয়ে আব্দুস সালামের গুরু সামীম আফজালকে অপমানজনকভাবে ইসলামিক ফাউন্ডেশন ছাড়তে হলেও, দলীয় প্রভাব কাজে লাগিয়ে অস্থায়ী নিয়োগের সীমা পেরিয়ে তিনি এখন অনেকটা অসীমে পৌঁছেছেন।

পর্দানশীন নারী কর্মীদের হেনস্তাঃ ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের অন্যতম বৈশিষ্ট্যই হলো এর নারী কর্মীরা পর্দানশীন। এমনকি এখানে কর্মরত পুরুষ কর্মীরাও ইসলামের পর্দার বিধান মেনে থাকেন। ধর্মপ্রাণ মানুষেরা তাই এখানে চিকিৎসা সেবা নিতে বেশ স্বাচ্ছ্ন্দ্যবোধ করেন। কিন্তু সে পরিবেশ পুরোটাই পাল্টে দিতে গিয়ে অনেকটা উম্মাদ হয়ে উঠেছেন দখলদার সুপারিনটেনডেন্ট আব্দুস সালাম। পর্দানশীন নারী কর্মীদের দেখলে তিনি এমনভাবে তেড়ে যান যেন পারলে তিনি নিজ হাতেই তাদের হিজাব খুলে নিতেন।

গতকাল ২১ জুলাই (রবিবার) সকালে ব্লাড কালেকশন রুমের ল্যাবে পরিদর্শনে যান আব্দুস সালাম। সেখানে কোন কিছুর অসঙ্গতি খুঁজে না পেলেও ল্যাব সহকারী নারীদের পর্দা দেখে ক্ষেপে যান তিনি। পর্দানশীন নারী কর্মীদের জঙ্গি, জেএমবি, সন্ত্রাসী বলে আখ্যায়িত করার পাশাপাশি অকথ্য ভাষায় গালি গালাজ করেন তিনি। এসময় ল্যাবে পরীক্ষা করাতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরাও বিব্রত হয়ে পড়েন।

পর্দানশীন নারী কর্মীদের সাথে এহেন আচরণ বেশ কিছুদিন যাবত করছেন আব্দুস সালাম। তার এহেন ভারসাম্যহীন ও আপত্তিকর আচরণে আফরোজ সুলতানা নামের এক ল্যাব সহকারী ক্ষোভে ও লজ্জায় চাকরি ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হন। এছাড়াও ইসিজি অপারেটর রোজিনাকে জনসম্মুখে অপমান করে নেকাব খুলতে বাধ্য করার মত গুরুতর অভিযোগ রয়েছে আব্দুস সালামের বিরুদ্ধে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এক নারী কর্মী বলেন- এখানে নারীদের সম্মানের চোখে দেখা হয় বলেই আমরা দীর্ঘদিন যাবত চাকরি করছি। পর্দা আমাদের অধিকার। আমরা আমাদের কোনো কাজে গাফিলতি করলে সেজন্য আমাদের ধমক দিতে পারেন। কিন্তু পর্দার মেনে চলার কারণে ধমক দিলে আমরা তা কোনোভাবেই বরদাশত করবো না। আব্দুস সালাম সাহেব ৯২ শতাংশ মুসলমানের দেশে পর্দানশীন নারীদের সাথে এমন দূর্ব্যবহার করার সাহস কি করে পায়?’

জানা যায়, ইতোপূর্বে নিজ কক্ষে বাহিরাগত নারীদের নিয়ে ফূর্তি করার অভিযোগ ছিল সুপার আব্দুস সালামের বিরুদ্ধে। কিন্তু সে কুকর্মের খবর প্রকাশ হয়ে যাওয়ায় হাসপাতালে কর্মরত পর্দানশীন নারী কর্মীদের সাথে নিয়মিতই দূর্ব্যবহার করছেন তিনি।

তোদের কাউকে চাকরি করতে দেবো না’: মাত্র তিন মাসের অস্থায়ী নিয়োগ পেয়েই ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজ পুত্র সুলতান মাহমুদ শাকিলকে অবৈধভাবে নিয়োগ দিয়েছিলেন আব্দুস সালাম। কিন্তু তার এ স্বজনপ্রীতি প্রমাণিত হওয়ায় তার পুত্রকে চাকরি থেকে সরিয়ে দিতে বাধ্য হয় আইবিএফ। আর তাতেই চটে আছেন আব্দুস সালাম। হাসপাতালের কর্মকর্তা কর্মচারীদের শাসাতে গিয়ে প্রায়ই তিনি চিৎকার করে বলেন- তোদের কাউকে চাকরি করতে দেবো না

জামায়াতে নামাজ আদায়ে বাধাঃ ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের সকল কর্মকর্তা কর্মচারী ঐতিহ্যগতভাবেই জামায়াতে নামাজ আদায় করে থাকেন। কিন্তু আব্দুস সালাম নিজের ব্যর্থতা আড়াল করতে জামায়াতে নামাজ আদায় করাকেই হাসপাতালের ব্যবসায়িক ক্ষতির প্রধান কারণ বলে মনে করছেন। এরই মধ্যে তিনি কয়েক দফায় জামায়াতে নামাজ আদায় করা থেকে বিরত থাকতে হাসপাতালের কর্মরতদের নির্দেশ দিয়েছেন। দাড়ি ও ‍সুন্নতি পোষাক পড়া কাউকে দেখলে নিয়মিতই জঙ্গি বলে অপমান করেন তিনি।

এছাড়াও কথায় কথায় হাসপাতালের স্টাফদের থানা ও পুলিশ প্রশাসনের ভয় দেখান আব্দুস সালাম। রাজনৈতিক প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে তিনি যে কাউকে ফাঁসিয়ে দিতে পারেন বলে হুমকি দিয়ে থাকেন প্রতিনিয়ত।

বেপরোয়া দূর্ব্যবহারঃ অনুসন্ধানে জানা যায়, ফার্মেসী ও হাসপাতালের বিভিন্ন সেক্টর থেকে কোটি কোটি টাকা দুর্নীতির খবর ফাঁস হয়ে যাওয়ায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন ডা. আব্দুস সালাম। ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজ ছেলেকে চাকরি দিয়ে তাতে স্থায়ী করতে না পেরে পাগলের মত আচরণ করছেন তিনি। তাছাড়া ক্ষমতাসীন দলের নামে ভূঁইফোড় সংগঠনের নামে চাঁদাবাজি করেও অনেকটা বেকায়দায় পড়েছেন তিনি। তার তুই তোকারিকিংবা তুমিসম্বোধন থেকে বাদ পড়ছেন না হাসপাতালের সিনিয়র কনসাল্টেন্টরাও। এমনকি সিলেট মেডিকেল কলেজে তার সিনিয়র ব্যাচের বড় ভাই ছিলেন (যিনি এখন ইসলামী ব্যাংক মতিঝিলে কর্মরত) এমন কনসাল্টেন্টকেও তুই’ ‘তুমিবলে সম্বোধন করছেন আব্দুস সালাম। তুমিবলে সম্বোধন করায় এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন সিনিয়র কনসাল্টেন্ট ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।

আব্দুস সালামের দিনের শুরুটাই হয়ে থাকে হাসপাতালের সিকিউরিটি গার্ডদের অকথ্য ভাষায় গালি গালাজের মাধ্যমে। এরপর এক এক করে নার্স, স্টাফ, কনসাল্টেন্ট কেউই বাদ পড়ে না তার উদ্ভট আচরন থেকে। আচার আচরনে অনেকটা মানসিক ভারসাম্যহীন মনে হলেও দুর্নীতির বেলায় তিনি ইন্টিলিজেন্ট ভূমিকা পালন করেন।

পাশে যখন মাসতুতো ভাইঃ ফার্মেসীর ঔষধে লাগামহীন কমিশন বাণিজ্য প্রমাণিত হওয়ায় বেকায়দায় পড়েছিলেন সুপারিনটেন্ডেন্ট আব্দুস সালাম। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখন তিনি ফার্মেসীর দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা কর্মচারীদের দেখলেই আহত শেয়ালের মত খেঁকিয়ে ওঠেন। আর এ অবস্থার মধ্যেই তার সাথে এসে জুটেছে সহকারী সুপারিনটেন্ডেন্ট হাসিনুর রহমান। বিতর্কিত কর্মকান্ডে তিনি আব্দুস সালামের চেয়ে খুব বেশি পিছিয়ে নেই। এ যেন চোরে চোরে মাসতুতো ভাই। হাসিনুর রহমানকে তার দুর্নীতি ও বিতর্কিত কর্মকান্ডের জন্য সম্প্রতি মিরপুর থেকে মতিঝিলে বদলি করে আইবিএফ কর্তৃপক্ষ। বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানীর কাছ থেকে কমিশন বাণিজ্যের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে এই হাসিনুর রহমানের বিরুদ্ধে।

এছাড়াও বিভিন্ন কোম্পানীর কাছ থেকে মেডিকেল ইকুইপমেন্ট ক্রয়ের নামেও লাখ লাখ টাকা কমিশন বাণিজ্য করেছেন এই হাসিনুর। দুর্নীতিতে সিদ্ধহস্ত এই হাসিনুর এসে আরেক চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ আব্দুস সালামের সাথে যুক্ত হওয়ার পর আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন তারা। নিজের পারিবারিক জামায়াতের পরিচয় ঢাকতে হাসিনুর অনেকটা কোমর বেধে দুর্নীতিতে নেমেছেন। অনুসন্ধানে জানা যায় হাসিনুর একসময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবির ক্যাডার ছিলেন। তার পিতা ও ভাইয়েরা সবাই জামায়াতের রাজনীতির সাথে জড়িত। জানা যায়, হাসিনুর রহমান মতিঝিল থানায় একটি পুলিশ হত্যা মামলার আসামী।

ইতোপূর্বে বিভিন্ন মিডিয়ায় সুপার আব্দুস সালামের দুর্নীতির খবর প্রকাশিত হওয়ায় তার মধ্যে কিছুটা নমনীয় ভাব প্রকাশ পেলেও হাসিনুর রহমানের আগমনে তিনি যেন হাফ ছেড়ে বেঁচেছেন। ফলে খুব সহজেই আগের চেয়ে ভয়ানক রূপে তিনি ফিরেছেন বলে মনে করছেন হাসপাতালে কর্মচারীবৃন্দ।

শুধু হাসিনুরই নয়। বেপরোয়া দুর্নীতিবাজ আব্দুস সালামের অনেকটা ছায়াসঙ্গী হিসেবে শুরু থেকেই নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন তোজাম্মেল ও খাদেমুল নামের দুই কর্মচারী। কে কোথায় কি করছে না করছে তার সমুদয় খবর তারা আব্দুস সালামের কাছে যথাসময়ে সরবরাহ করে থাকেন বলে জানা গেছে। ফলে যাকে তাকে আব্দুস সালাম যেখানে সেখানে গালি গালাজ ও অপমান করছেন প্রতিনিয়ত।

সম্প্রতি রিসিপসনিস্টদের এক মিটিংয়েও তিনি তাদের মা-বোনকে অসম্মান করে অকথ্য ভাষায় গালি-গালাজ করেছেন বলে জানা যায়।

ডা. আব্দুস সালাম ও হাসিনুর রহমানের সম্মিলিত নৈরাজ্যে চিকিৎসা সেবার পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে প্রতিনিয়ত। তাই লাভের মুখ দেখাতো দূরের কথা, নিয়মিত লোকসান গুনছে একসময়ের জনপ্রিয় ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল মতিঝিল। হাসপাতালটির সুদিন ফেরাতে তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। সূত্রঃ (অ্যানালাইসিস বিডি)


শেয়ার করুন

0 facebook: