নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত টিম মাদারীপুর কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাট পরিদর্শন ও বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেন। |
বুধবার রাতে টেলিফোনে দেয়া এক সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকারে মাদারীপুরের ডিসি (জেলা প্রশাসক) ওয়াহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন সেদিনকার ঘটনা।
আলোচিত ওই ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গত ২৫ জুলাই দুপুর ১২টার দিকে ফোনে এটুআই প্রকল্পের পরিচালক যুগ্ম-সচিব আবদুস সবুর মণ্ডল জিজ্ঞাসা করেন, যে কোন ঘাট দিয়ে গেলে ভালো হবে?
‘‘ঠিক ওই সময় ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঘাটের ব্যবস্থাপনা নিয়ে সমন্বয় সভা হচ্ছিল। ওই সভায় তখন প্রশাসন, আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্য, পরিবহন সমিতির প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। ওই সভায় বিআইডব্লিউটিসির কাঁঠালবাড়ি ঘাটের ব্যবস্থাপক আবদুস সালাম মিয়াও সেখানে উপস্থিত থাকায় তার কাছেই আমার মোবাইল হ্যান্ডওভার করি। পরে তারা দু'জন এ বিষয়ে কথা বলেন। এ বিষয়ে আমার আর কোনো বিষয় জানা নেই।’’
তিনি আরও বলেন, ওই দিন ফেরিঘাটের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশেষ কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি। তবে ঘাটের অতি উৎসাহী কিছু ব্যক্তি হয়তো স্কুলছাত্রের অ্যাম্বুল্যান্সবাহী ফেরিকে অপেক্ষায় রেখেছিলো, যার সাথে সচিবের হুকুম দেওয়ার কোন সম্পর্কই ছিলোনা।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, ‘কুমিল্লা নামক ফেরিটা ১নম্বর ঘাটে আসে রাত ৯টা ২৭ মিনিটে, আর ছাড়ে ১০টা ৪৫ মিনিটে। ফেরির প্রপেলারে কারেন্ট জাল লাগায় সেটা ছাড়াতেও ফেরিটির ১০/১৫ মিনিট দেরি হয়। ফেরি ৩ ঘন্টা অপেক্ষা করার কথা আদৌ সত্য নয় বরং তা নির্ভেজাল গুজব’।
প্রসঙ্গত, মোটরসাইকেল চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হওয়ার পর ষষ্ঠ শ্রেণির হিন্দু ছাত্র তিতাস ঘোষকে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনা থেকে নেয়া হচ্ছিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
তিতাস নড়াইল কালিয়া পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্র। তাকে বহন করা অ্যাম্বুলেন্সের গতিরোধ করে তিন ঘণ্টা আটকে রাখে শিমুলিয়া ঘাটের ফেরি কর্তৃপক্ষ এরূপ নিউজ অনলাইনের ভাইরাল হয়।
বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে উঠে আসে আধা সত্য খবর, এটুআই প্রকল্পের পরিচালক যুগ্ম-সচিব আবদুস সবুর মণ্ডল ঢাকায় ফিরবেন কুমিল্লা নামের ওই ফেরিটিতে। যার কারণে ফেরি কর্তৃপক্ষ কড়াকড়ি নির্দেশ আরোপ করে।
তাই আহত শিক্ষার্থীর স্বজনরা শত অনুরোধ করলেও তা কানে নেননি ফেরি কর্তৃপক্ষ। যুগ্ম-সচিব যাবেন ফেরিটিতে, তিনি না আসা পর্যন্ত কোনো মতে এটি ছাড়া যাবে না।
এতে তিন ঘণ্টা অপেক্ষার পর সচিব আসার পর ছাড়া হলো ফেরি। ততক্ষণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয়েছে তিতাসের।
অথচ বিআইডব্লিউটির নির্দেশনা রয়েছে যে, অ্যাম্বুলেন্সের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ফেরি পারাপার করতে হবে।
সূত্র জানায়, দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হওয়ায় তিতাসকে প্রথমে খুলনার একটি প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।পরবর্তীকালে তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উন্নত চিকিৎসার জন্য বৃহস্পতিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হচ্ছিল।
অ্যাম্বুলেন্সে চিকিৎসাসেবা দেয়ার জন্য সঙ্গে নেয়া হয় চিকিৎসকসহ জরুরি চিকিৎসা সরঞ্জাম। আইসিইউ সংযুক্ত অ্যাম্বুলেন্সটি ৫০ হাজার টাকা দিয়ে ভাড়া নেয়া হয়।
কিন্তু অতি উৎসাহী ঘাট কর্তৃপক্ষের খামখেয়ালিতে সেই অ্যাম্বুলেন্সেই প্রাণ দিতে হল তিতাসকে। নিহত তিতাসের স্বজনদের অভিযোগ, ওই সময় ঘাটে উপস্থিত লোকজনের অনুরোধেও কাঁঠালবাড়ি ঘাট কর্তৃপক্ষের টনক নড়েনি।
সাহায্য চান ঘাটে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের, এমনকি প্রতিকার মেলেনি জরুরি নম্বর ৯৯৯-এ ফোন করেও।
স্বজনরা আরও, জানান, তিতাস মারা যাওয়ার পর আর ঢাকার দিকে না গিয়ে শিমুলিয়া ঘাট থেকেই ফিরে আসি আমরা।
কিন্তু জানার বিষয় হলো, সেই সচিব কি ফোনে এরূপ নির্দেশ দিয়েছিলেন যে আমি না আসার আগ পর্যন্ত যেনো ফেরি না ছাড়ে? এবং ফেরী কতৃপক্ষ কি এ্যাম্বুলেন্সের ব্যপারে উনার সাথে যোগাযোগ করেছিলো? যদি না করে থাকে তাহলে কে সেই তৃতীয় ব্যক্তি যে সচিবকে বিতর্কিত করতে চাইছে? জানতে পড়ূনঃ (এক্সিডেন্টে
মৃত হিন্দু কিশোরের দায় সরকারী মুসলিম কর্মকর্তার উপর ফেলানোয় চেষ্টায় কি CIA জড়িত?)
খবর বিভাগঃ
জাতীয়
প্রশাসন
হিন্দু সমাচার
0 facebook: