26 August 2019

বিয়েতে কাবিননামা থেকে ‘কুমারী’ শব্দের বদলে অবিবাহিত লিখার নির্দেশ কিসের ইঙ্গিত দিচ্ছে

হাইকোর্ট। ফাইল ফটো
স্টাফ রিপোর্ট।। বিয়ের নিবন্ধনের ক্ষেত্রে কাবিননামার ৫ নম্বর কলামে উল্লিখিত কুমারীশব্দটি বাদ দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। কুমারীশব্দের স্থলে অবিবাহিতশব্দটি যোগ করার কথা বলা হয়েছে সেখানে।

এক রিটের শুনানি নিয়ে রোববার বিচারপতি নাইমা হায়দার ও খিজির আহমেদের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। একই সঙ্গে ছেলেমেয়ে উভয়ের তথ্য নিবন্ধনে রাখার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না, অ্যাডভোকেট আইনুন্নাহার সিদ্দিকা লিপি। বিয়ের কাবিননামার ফরমে কনে কুমারী’, ‘বিধবাতালাকপ্রাপ্তসংক্রান্ত ৫ নম্বর কলাম থাকার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিটটি করা হয়েছিল।

রায় শেষে অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না বলেন, বিয়ের কাবিননামায় দুটি কলামে বৈষম্যের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টে রিট করেছি। আদালত শুনানি শেষে বিয়ের কাবিননামা (রেজিস্ট্রেশন) ফরমে ৫ নম্বর কলামে কনে কুমারীকিনা এই শব্দ উঠিয়ে দিতে বলেছেন। কুমারীশব্দের পরিবর্তে অবিবাহিতলিখতে রায় দিয়েছেন।

এ ছাড়া কাবিননামার ফরমে ৪-এর (ক) উপধারা সংযোজন করে ছেলেদের ক্ষেত্রে বিবাহিত, অবিবাহিত, তালাকপ্রাপ্ত কি না তা লিপিবদ্ধ করতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এর ফলে ছেলেমেয়েদের ক্ষেত্রে বৈষম্য থাকবে না বলেও যোগ করেন আইনজীবী।

৫ নম্বর কলামটি বৈষম্যমূলক উল্লেখ করে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট, নারীপক্ষ এবং বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ২০১৪ সালের ৭ সেপ্টেম্বর রিট আবেদনটি করে।

তবে আদালতের এই রায়ে ধর্মীয় বিশ্লেষকরা উদ্ভেগ প্রকাশ করে বলছেন, বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ইসলাম ধর্মের অনুসারী। আমারা জানি যে আমাদের সম্মানিত ইসলাম ধর্মে লিখিত কাবিননামার প্রচলন কোন কালেই ছিলো না। এটা আধুনিককালে নতুন প্রচলন করা হয়েছে, সেখানে কুমারিশব্দখানা নতুন প্রচলণকারী সরকারগুলোই যোগ করে দিয়েছে।

কিন্তু সমস্যা হয়েছে কথিত নারীবাদীদের নিয়ে। কারণ নারীবাদীদের কুমারীত্ব শব্দখানা নিয়ে খুব এলার্জি। তাদের কথা হলো- এটা থাকলেই কি, আর না থাকলেই কি? এর আগে তারাই প্রচার করেছিলো- নারীদের হাইম্যানবা সতীপর্দাশুধু সেক্স্যুয়ারি ইন্টারকোর্স করলে নয় বরং দুর্ঘনায় নষ্ট হতে পারে, এর থাকা না থাকার কোন গুরুত্ব নাই।কথা হইলো- দুর্ঘটনায় তো কত কিছুই নষ্ট হতে পারে, কিন্তু সেটার জন্য কি প্রাকৃতিক একটি বিষয়কে অস্বীকার করতে হবে ?

হাইকোর্টের এ রায় নিয়ে অনেক কিছুই বলার আছে, আমাদের কথা হলো- কুমারি আর অবিবাহিত শব্দের মধ্যে পার্থক্যটা কোথায়? পার্থক্যটা হইলো- কুমারি হইলো শারীরিক শব্দ, আর বিবাহিত হইলো আনুষ্ঠানিক চূক্তিভিত্তিক শব্দ। একটা মেয়ে প্রথম বৈধ বিয়ের মাধ্যমে তার কুমারিত্ব পর্যায় শেষ করবে, এটাই ধরে নেয়া হয়। কিন্তু হাইকোর্টের এ রায় অনুসারে একটা মেয়ে অনৈতিকভাবে কুমারিত্ব হারালেও সে অবিবাহিতই থাকবে এবং সেটাই লিখতে হবে। তারমানে দাড়াচ্ছে, হাইকোর্টের এ রায়টি নারীদের ব্যাভিচারের সুযোগ করে দিচ্ছে বা উৎসাহিত করছে, অথচ বাংলাদেশের আইন অনুসারে ব্যাভিচার দণ্ডনীয় অপরাধ। আমাদের মনে হচ্ছে, এ রায়ের মাধ্যমে হাইকোর্ট এক হিসেবে বিয়ের পূর্বে লিভ-টুগেদারের বৈধতা দিয়ে দিলো।


শেয়ার করুন

0 facebook: