01 September 2019

ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে, বাঁচতে হলে মুসলমানদের এখন ঐক্য করতে হবেঃ নয়ন চ্যাটার্জি

ছবিঃ শত্র বাঘ মেরে ফেলতেছে তবুও জাত ভাইয়ের সাথে লড়াইয়ে ব্যস্ত হরিন
মতামত ডেস্ক।। গতকালকের আমি বলেছিলাম, তুরস্ক-পাকিস্তান-মালয়েশিয়ার মধ্যে যে মুসলিম নেতৃত্বাধীন নতুন নন এলাইয়েন মুভমেন্টহচ্ছে, বাংলাদেশের উচিত সেখানে সংযোগ রাখা। এতে সম্রাজ্যবাদী ব্লকগুলোর খপ্পর থেকে কিছুটা হলেও বাংলাদেশ বাঁচতে পারবে। তবে আমার কথা শুনে কেউ কেউ বলেছেন- না আমাদের উচিত রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক রাখা, কেউ বলেছে চীনের সাথে সম্পর্ক রাখা, কেউ বা বলেছে আমেরিকার সাথে সম্পর্ক করা জরুরী।

তবে এ ক্ষেত্রে আমাদের এ অঞ্চলের ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়া উচিত। যেমন-

১) হায়দ্রাবাদ: যখন পাকিস্তান সৃষ্টি হয়, তখন কিছু কিছু মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা পাকিস্তানের সাথে যোগ দিতে অস্বীকার করে, তারা স্বতন্ত্রভাবে শাসিত থাকতে পছন্দ করেছিলো। ভারতও সেটা মেনে নেয়। এরকম একটি এলাকা ছিলো হায়দ্রাবাদ। হায়দ্রাবাদের শাসক বলেছিলো- তারা পাকিস্তানের সাথে যুক্ত হবে না, তারা পৃথক থাকবে। দেখা গেলো, মুসলিম নেতৃত্বধানী বৃহৎ রাষ্ট্র পাকিস্তানের সাথে যুক্ত না হওয়ার কারণে মাত্র ১ বছর পর ১৯৪৮ সালে হায়দ্রাবাদে গোপন গণহত্যা চালায় ভারত। ভারতের তখন ক্ষমতায় সেক্যুলার কংগ্রেস। সেক্যুলার নেহেরুর সে সময় বক্তব্য ছিলো- হিন্দু অধ্যুষিত ভারতের মাঝখানে কোন মুসলিম অঞ্চল থাকতে পারবে না। সে সময় হায়দ্রাবাদে মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে গণহত্যা চালিয়ে প্রায় ১০ লক্ষ মুসলমানকে হত্যা করা হয়, ২ লক্ষ নারীকে ধর্ষণ করা হয়। হায়দ্রাবাদ এলাকাটি মুসলমানদের খুব ঐতিহ্যবাহী এলাকা ছিলো, সকল ঐতিহ্য ধ্বংস করা হয়। সেই সময় হায়দ্রাবাদ যদি পাকিস্তানের সাথে যোগ দিতো, তবে তাকে সেই গণহত্যার স্বীকার হয়ত হতে হতো না।

২) কাশ্মীর: পাকিস্তান সৃষ্টির আগে কাশ্মীর ছিলো পৃথক মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা। সেই কাশ্মীরও দেশভাগের সময় পাকিস্তানের সাথে যুক্ত হতে চায়নি, পৃথক থাকতে চেয়েছে। সেই সময় কাশ্মীরের শাসক ছিলো অবশ্য হরি সিং নামক এক ব্যক্তি। সেই দেশভাগের মাত্র ১ মাস পর ভারতের সাথে কাশ্মীরকে সংযুক্ত করতে চূক্তি করে। দেশভাগের আগে কাশ্মীর যদি পাকিস্তানের সাথে যোগ দেয়ার রব তুলতো, হয়ত তাদের এই ৭২ বছর কষ্ট করতে হতো না।

৩) আসাম: দেশভাগের আগে আসাম-সিলেটবাসীর মধ্যে গণভোট হয়, তারা পাকিস্তানের সাথে থাকতে চায় নাকি ভারতের সাথে থাকতে চায়। এ সময় আসামের মুসলমানরা হিন্দু অধ্যুষিত ভারতের সাথে থাকতে বেশি আগ্রহী হয়, অপরদিকে সিলেটের মুসলমানরা পাকিস্তানের সাথে থাকতে আগ্রহী হয়। ফলে দেশভাগের সময় আসাম যোগ দেয় ভারতের সাথে, সিলেট যোগ দেয় পাকিস্তানের সাথে। আসামের মুসলমানদের অতি হিন্দুপ্রেমের ফলাফল আজ ৭২ বছর পর দেখতে হচ্ছে।

৪) আরাকান: পাকিস্তান তৈরীর আগে আরাকানের রোহিঙ্গা মুসলমানরা পাকিস্তানের সাথে যোগ দিতে জিন্নাহর কাছে আবেদন করেছিলো। কিন্তু বাধ সাথে সুকির বাপ অং সাং। সে জিন্নাহকে আশ্বাস দেয় রোহিঙ্গাদের সকল অধিকার দিয়ে তারা বার্মায় রাখবে, আরাকানকে যেন পৃথক করা না হয়। তার এই আশ্বাস শুনে জিন্নাহর মন ভরে যায়, ফলে আরাকান আর মুসলিম অধ্যুষিত পাকিস্তানের সাথে যুক্ত হতে পারে না। সেই দিন রোহিঙ্গাদের আরাকান যদি পাকিস্তানের সাথে যুক্ত হতো, তবে আরাকানের রোহিঙ্গাদের হয়ত এত কষ্ট করতে হতো না।

উপরে বর্ণিত প্রত্যেকটি ইতিহাসই অনেক বিস্তৃত, অনেক আলোচনা ব্যাখ্যা করা যাবে, তবে সংক্ষিপ্ত শিক্ষা হচ্ছে, মুসলমানদের মধ্যে ঐক্যের বিষয়টি। কারণ ঐ সময় যে সব মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলো ঐক্য ছিন্ন করেছিলো, তারাই আজকে সমস্যার মধ্যে আছে। হয়ত প্রাথমিকভাবে হিন্দু/বৌদ্ধরা মুসলমানদের ভালো কথা শুনিয়েই দলে ভিড়িয়েছে বা নিরপেক্ষ রেখেছে, কিন্তু সময় যত গড়িয়েছে হিন্দু/বৌদ্ধদের আসল মুখোশ খুলেছে, এবং মুসলমান মুসলমান ঐক্য না করার ক্ষতিকর দিকটা স্পষ্ট হয়েছে।

অর্থাৎ মুসলিম ঐক্যের থেকে পৃথক হয়ে অমুসলিমদের সাথে যোগ দেয়া যেমন ক্ষতিকর, তেমন ঐ ঐক্যের সাথে যোগ না দিয়ে পৃথক বা স্বতন্ত্র থাকাও ক্ষতিকর, কারণ বাঘ হরিনকে দল থেকে পৃথক করেই তারপর ভক্ষণ করে।

এখানে একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, ঐক্য কিন্তু এমনি এমনি হবে না, ঐক্য হওয়ার মূল শর্ত হচ্ছে কম্প্রোমাইজ। প্রত্যেকে জাতি, অঞ্চল, অবস্থান ভেদে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য থাকে, সেই সব বিষয়গুলো যদি আপনি কোন কম্প্রোমাইজ করতে না পারেন, তখন কিন্তু ঐক্য হয় না। মুসলমানরা যখন মুসলিম-মুসলিম ঐক্য চাইবে, তখন এক মুসলিম পরিচয় ব্যতিত অন্য বিষয়গুলোর মধ্যে কম্প্রোমাইজ (কম্প্রোমাইজ মানে স্বীকৃতি দেয়া নয়, বরং বরং দ্বন্দ্ব না করা) করতে হবে। এক্ষেত্রে অমুসলিমরা কিন্তু ঐ বিভেদগুলো সব সময় উস্কে দিবে, যেন মুসলমানরা নিজেদের মধ্যে কখন ঐক্য না করতে পারে, সেগুলো নিয়ে ব্যস্ত থাকে। অর্থাৎ জাতিভেদ, অঞ্চলভেদ, গোত্রভেদ, বর্ণভেদ, ফেরকাভেদ এগুলো থেকে যতদিন মুসলমানরা বের না হতে পারবে ততদিন তাদের পক্ষে ঐক্য করা সম্ভব না। কারণ ঐক্য হতে গেলেই একজন বলবে-

- তুই চাটগা, আমি নোয়াখালী আমাদের মাঝে ঐক্য হবে না
- তুই রোহিঙ্গা আমি বাঙালী, আমাদের মাঝে ঐক্য হবে না
- তুই ভাসির্টি আমি মাদ্রাসার আমাদের মাঝে ঐক্য হবে না
- তুই কওমী আমি আলিয়া আমাদের মাঝে ঐক্য হবে না
- তুই ওহাবী, আমি সুন্নি আমাদের মাঝে ঐক্য হবে না
- তুই কওমী আমি আহলে হাদীস আমাদের মাঝে ঐক্য হবে না
- তুই পীরের মুরিদ, আমি তৌহিদি আমাদের মাঝে ঐক্য হবে না
- তুই তাবলীগ, আমি আহলে হাদীস আমাদের মাঝে ঐক্য হবে না,
- তুই সাদ আমি জোবায়ের আমাদের মাঝে ঐক্য হবে না।

অর্থাৎ মুসলমান মুসলমান যখন ঐক্যের কথা উঠবে, তখন পেছন থেকে শুধু উপরের একটা শ্লোগান দিলেই হবে, ব্যস মুসলমান-মুসলমান ঐক্য তো পরের বিষয়, উল্টা এক মুসলমান অন্য মুসলমানকে লাঠি নিয়ে দৌড় দিবে, যদি প্রয়োজন পড়ে পাশের হিন্দুদেরও নিয়ে যাবে মুসলমান মারতে যাবে, আর বলবে- তুই হিন্দুর থেকে খারাপ।

প্রিয়া সাহার ঘটনা থেকে কিন্তু মুসলমানদের শিক্ষা নেয়ার অনেক কিছু আছে। প্রিয়া সাহার মূল নাম প্রিয়া বালা সাহা। এরা হচ্ছে, একদম নিচু শ্রেণীর হিন্দু। যাদের বলে দলিত বা হরিজন সম্প্রদায়, মুচি মেথর ডোম তাদের মূল পেশা। প্রিয়া সাহার একটা পত্রিকাও আছে, নাম দলিত কণ্ঠ। কথা হইলো, হিন্দু সমাজের মধ্যে এই দলিত বা হরিজনরা কিন্তু নিন্দিত।

অন্য বর্ণের হিন্দুদের মত হচ্ছে- দলিতদের মুখ দেখাও পাপ। সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে এদের মুখ দেখলে সারদিন খারাপ যায়। এরা মারা গেলে হিন্দুদের শশানে এদের দাহ করতে সমস্যা হয়। অর্থাৎ জাত হিসেবে প্রিয়া বালা সাহা সমগ্র হিন্দু জাতির কাছে নিন্দনীয়।

অপরদিকে প্রিয়া সাহার সাথে তার প্রতিবেশী হিন্দুদের সাথে বিরোধ। প্রিয়া সাহা তার প্রতিবেশী হিন্দুদের উপর টর্চার করছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।

এখন কথা হইলো- যখন প্রিয়া সাহা ট্রাম্পের কাছে গিয়ে যখন মুসলমানদের নামে বিচার দিলো, তখন কি কেউ দেখছেন, কোন হিন্দুকে প্রিয়া সাহার বিরুদ্ধে বলতে ? কাউকে কি বলতে দেখছেন- তার জাত প্রথা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে? কাউকে কি দেখছেন সে যে প্রতিবেশীর সাথে খারাপ ব্যবহার করছে, সেটা নিয়ে তাকে নিন্দাইতে?

তারা কিন্তু সেটা করে নাই। কারণ প্রিয়া সাহার দ্বন্দ্ব তখন হিন্দু-হিন্দুতে নয়, হিন্দু-মুসলমানে। আর তাই সকল হিন্দু জাতি-পাত-স্বভাব-চরিত্র ভুলে প্রিয়া সাহাকে সমর্থন দিছে। এমনকি সে যে মিথ্যা কথা বলে আসছে, সেটার পক্ষে সাফাই গেলে বলছে, সে ভুল কিছু বলেনি। তাহলে বুঝেন অবস্থা।!

হিন্দুরা তেত্রিশ কোটি দেবতার আরাধনা করে, তারপরও মুসলমানদের বিরুদ্ধে সবাই এক হয়ে যায়।অথচ মুসলমানরা এক আল্লাহর আরাধনা করলেও অমুসলিমদের বিরুদ্ধে এক হতে পারে না।

গত কয়েকদিনে ফেসবুকে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশী মুসলমানদের একটা গ্রুপ বেশ লিখেছে। আমি কয়েকটা গ্রুপে তাদের নিয়ে লেখা পড়তেছিলাম। দেখলাম একজন বাংলাদেশী মুসলমান বলতেছে- আসলে বহুদিন ধরে রোহিঙ্গারা প্রতিকূল পরিবেশে থাকায় তাদের আচরণে পরিবর্তন আসতে পারে। এই কথা শুনে আরেক মুসলমান কমেন্ট করছে- আমার মনে হয় না। আমার মনে হয়, তাদের স্বভাব আগেই খারাপ ছিলো এবং তাদের খারাপ স্বভাবের কারণে মায়ানমারের বৌদ্ধরা তাদের সাইজ করছে।

আমি অনেক মুসলমানকে দেখেছি, মাঝে মাঝে বলে- ব্রিটিশদের পলিসি হলো ডিভাইড এন্ড রুল, আমাদের তা থেকে সচেতন থাকতে হবে। কিন্তু বাস্তব জীবনে সেই মুসলমানই ডিভাইড পলিসি বাস্তবায়নের একজন সক্রিয় কর্মী। সে কথা বার্তায়, আচার আচরণে, ওয়াজ মাহফিলে কিভাবে মুসলমান মুসলমান বিভক্তি বাড়ানো যাবে, শুধু সেই ধান্ধায় থাকে।

তবে ব্রিটিশদের পলিসি ডিভাইড এন্ড রুলএটা শোনার পর এক মুসলিম বন্ধু অবশ্য দ্বিমত করছিলো। তার বক্তব্য হলো- এই ডিপ্লোমেসিটা আসলে মুসনলমানদের। মুসলমানদের পলিসি নিয়ে ইহুদী-খ্রিষ্টানরা আজকে সফল হইছে। তার বক্তব্য হলো- প্রথম যুগে মুসলমানরা যখন কোন যুদ্ধে যেতো, তার আগে গুপ্তচর পাঠিয়ে প্রতিপক্ষের যোদ্ধাদের গোত্রে গোত্রে ভাগ করে দেয়ার একটা কার্যক্রম থাকতো। মুসলিম খলিফাদের যুগে মুসলমানরা ইরাকের ইহুদীদের বিভিন্ন গোত্রে গোত্রে ভাগ করে দিয়েছিলো, ফলে ঐ সময় ইহুদীরা মুসলমানদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে পারতো না। এমনকি বর্তমানেও শুক্রবার দিন মুসলমানদের যে সাপ্তাহিক জুম্মার নামাজ হয়, সেখানে খুতবার মধ্যে আরবী ভাষায় অমুসলিমদের ঐক্য ভেঙ্গে যাওয়ার জন্য আলাদা প্রার্থনা করা হয়। অর্থাৎ মুসলমানদের পলিসি হলো, “নিজেদের মধ্যে ঐক্য গড়, প্রতিপক্ষের ঐক্য ভেঙ্গে দাও। কিন্তু দুঃখের বিষয়- মুসলমান নিজেরাই আজ সেই ধরনের চিন্তাভাবনা থেকে বহু দূরে।

এখন আমি কি মুসলিম সমাজের নিকট আশা করতে পারি যে তারা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিবে এবং ইহুদিবাদী ও হিন্দুত্ববাদী সকল চক্রান্ত নস্যাত করে দিবে একঝোট হয়ে?


শেয়ার করুন

1 comment:

  1. ভারত-পাকিস্তান ভাগের সময় যে হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয় তার এক বছর পর মধ্যভারতের হায়দ্রাবাদে এক গণহত্যার ঘটনা ঘটে।

    দেশ বিভাগের সময় সৃষ্ট দাঙ্গায় অসংখ্য মুসলিম লোকের প্রাণহানী ঘটে। তখন সিদ্ধান্ত হয়েছিল অন্যান্য রাজ্যগুলো তাদের ইচ্ছানুযায়ী ভারত অথবা পাকিস্তানে সাথে যোগ দিতে পারবে। অথবা স্বাধীন রাজ্য হিসেবেও থাকতে পারবে। যখন ত্রিবাঙ্কুর, যোধপুর, ভূপাল (যার নবাব ছিলেন মুসলমান) ভারতে যোগ দিতে অসম্মতি জানায় তখন কংগ্রেস ঐ সমস্ত রাজ্যে তাদের কর্মীদের দ্বারা গোলযোগ তৈরী করে রাজ্যগুলোক ভারতে মিশে যেতে বাধ্য করে। ফলে ১৯৪৭ এর ১৫ আগস্টের পূর্বেই হায়দারাবাদ, জুনাগর ও কাশ্মীর ছাড়া ভারতের প্রত্যাশিত সকল রাজ্যই ভারতে অন্তর্ভূক্ত হতে বাধ্য হয়। জুনাগরের মুসলিম নবাব পাকিস্তানে যোগদানের কথা ঘোষণা করার সাথে সাথেই কংগ্রেস কর্মীরা দেশে বিশৃঙ্খলা তৈরী করে এবং ভারতীয় সৈন্যরা জুনাগর ঘেরাও করে ফেলে। নভেম্বরে ভারতীয় সৈন্য জুনাগরে প্রবেশ করে এবং দেশটি দখল করে নেয়। কাশ্মীরের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয় যে, কাশ্মীরের জনগণ গণভোটের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেবে তারা পাকিস্তানে না ভারতে থাকবে। কিন্তু পরে গণভোট আর হয়নি। কাশ্মীরকে জোর করে ভারত দখল করে নেয়।

    একইভাবে তখন হায়দ্রাবাদ জানিয়ে ছিল তারা ভারত বা পাকিস্তান কোনো রাষ্ট্রেই যোগ দিবে না। স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবেই থাকবে। এতে নয়াদিল্লির হিন্দু নেতারা খুবই অসন্তুষ্ট হন। তখন হায়দ্রাবাদের নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকার ছিল। নিজস্ব মুদ্রা ব্যবস্থা ছিল। সেনাবাহিনী ছিল। আইন আদালত ছিল। বিচার ব্যবস্থা ছিল। হাইকোর্ট ছিল। শুল্ক বিভাগ ছিল। নিজস্ব বিশ্ববিদ্যালয়, পতাকা, ভাষা, জাতীয় সঙ্গীত, বিভিন্ন দেশে নিজেদের রাষ্ট্রদূত ও জাতিসঙ্ঘে নিজস্ব প্রতিনিধি ছিল। নয়াদিল্লি এবং হায়দ্রাবাদের মধ্যে এক বছরের দীর্ঘ তিক্ত অচলাবস্থার পর ভারত সরকার অবশেষে ধৈর্য্যহারা হয়ে পড়ে। হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারতের কেন্দ্রে একটি স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্র তারা কোনোভাবেই মেনে নিতে প্রস্তুত নন। তখন জওহরলাল নেহেরু বলেছিলেন, আমরা যখন প্রয়োজন মনে করব তখনই হায়দারাবাদের বিরূদ্ধে সেনা অভিযান পরিচালনা করব।” সে সময় নেহেরুর এই উক্তিকে হিটলারের মানসিকতার অনুরূপ বলে মন্তব্য করেছিলেন উইনস্টন চার্চিল।

    ১৩ সেপ্টেম্বর ১৯৪৮-এ পুলিশের কথা বলে ৩৫ হাজার প্রশিক্ষিত সেনার একটি বহর পাঠানো হয়। সেনা বাহিনী আর্টিলারি, এয়ার সাপোর্ট এবং আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আচমকা হায়দ্রাবাদ আক্রমণ করে। ভারতীয় সৈন্যের বিপরীতে হায়দ্রাবাদের ট্রেনিংপ্রাপ্ত সৈন্যের সংখ্যা ছিল মাত্র ছয় হাজার। আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত ভারতীয় বাহিনীর সামনে হায়দ্রাবাদ সেনাবাহিনী টিকে থাকতে পারেনি। ভারতীয় সৈন্যরা প্রথমে এলাকার সকল পুরুষদের একত্রে গ্রেফতার করে একজায়গায় এনে হত্যা করত তারপর তাদের বাড়িতে গিয়ে মহিলাদের গণ ধর্ষণ করত এবং তাদেরও হত্যা করা হতো। নিরপেক্ষ জরিপে, মাত্র পাঁচদিনে দুই লক্ষ মুসলমানকে হত্যা করা হয়। “মহাত্না” গান্ধী বলেছিলেন, “If india leads a blood bath, she shall have it.” হায়দ্রাবাদের শাসক নিজাম তখন পাকিস্তান, আমেরিকা এবং জাতিসংঘের নিকট সাহায্যের জন্য আবেদন জানান। কিন্তু তিনি কোনো সাড়া পাননি। অবশেষে ব্যাপক সম্পদ ও জীবনহানি এড়ানোর জন্য ছয়দিনের মাথায় তিনি আত্নসমর্পণ করতে বাধ্য হন।

    https://ntnbd.net/letest-news/27118

    ReplyDelete