23 September 2019

‘মোদি হলো সন্ত্রাসী,’ হাস্টনের বিক্ষোভে শিখ-কাশ্মীরিরা (ভিডিও সহ)


আন্তর্জাতিক ডেস্ক।। হাজার হাজার কাশ্মীরি, শিখ ও মানবাধিকার সংস্থার কর্মীরা টেক্সাসের হাস্টনে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে। এতে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করা পাকিস্তানিরাও অংশ নিয়েছেন।

অধিকৃত কাশ্মীরে সাংবিধানিক স্বায়ত্তশাসনের অধিকার কেড়ে নেয়ার পর সেখানে মোদির নেতৃত্বাধীন হিন্দুত্ববাদী ভারত সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের নিন্দা জানানো হয়েছে বিক্ষোভ থেকে।-খবর এক্সপ্রেস ট্রিবিউন ও এবিসিথার্টিনের।

হিমালয় অঞ্চলটিতে পাশবিক বলপ্রয়োগ ও কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে রেখেছে ভারত সরকার। গত ৫ আগস্ট উপত্যকাটিকে ভারতের সঙ্গে একীভূত করার পর সেখানে যোগাযোগ অচলাবস্থা জারি করেছে তারা।

মুসলমান অধ্যুষিত রাজ্যটিতে ধরপাকড়, গভীর রাতে বাড়িতে বাড়িতে অভিযান চালিয়ে যুবকদের ধরে নিয়ে যাওয়াসহ বর্বর নৃশংসতা চালাচ্ছে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী।

রোববার হাউসটনের একটি ফুটবল মাঠে হাউডি মোদিনামের এই জনসমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। এতে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মোদির পাশাপাশি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও উপস্থিত ছিল।

এবিসি নিউজের খবরে বলা হয়েছে, আন্তঃধর্মীয় মানবাধিকার সংস্থা জাস্টিস ফর অল ও তার মিত্ররা স্টেডিয়ামের বাইরে একটি বিশাল বিক্ষোভের আয়োজন করেছে। এতে মোদি, তুই ফিরে যা’, ‘মোদি হলেন সন্ত্রাসীবলে স্লোগান দিতে দেখা গেছে অংশগ্রহণকারীদের।

হাউসটন, ডালাস, অস্টিন ও সেন্ট অ্যান্টোনিওসহ বিভিন্ন শহর থেকে মুসলমান এবং শিখরা এসে বিক্ষোভে অংশ নেয়।

মোদির জনসমাবেশকে রুখে দিতে তারা স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত করে তোলে এনআরজি স্টেডিয়ামের বাইরের সড়ক।

হাউসটনে রোববারের স্লোগানে শিখ সম্প্রদায়ের লোকজনও দলে দলে অংশ নিয়েছে। অর্ধশত বাসযোগে ৪০ হাজার বিক্ষোভকারী জড়ো হয়ে মোদির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে।

ভেন্যুর চারপাশে ভারত, মোদিবিরোধী ফেস্টুন ও ব্যানার দিয়ে ভরিয়ে দেয়া হয়। উইফরনিউজের খবরে বলা হয়েছে, ২০ হাজার পাকিস্তানি ও বিচ্ছিন্নতাবাদী শিখ ধর্মীয় লোকজন মোদির বিরুদ্ধে বিক্ষোভে জড়ো হয়েছে।

মোদির বিরুদ্ধে যখন তারা স্লোগান দিচ্ছিল, তখন সে মঞ্চেই ছিল। মোদিকে তারা ভারতীয় সন্ত্রাসবাদের চেহারা হিসেবে উল্লেখ কর।

সমাবেশে দেয়া বক্তৃতায় মোদিকে উদ্দেশ্য করে ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম নিবেদিত, সর্বাধিক অনুগত বন্ধু ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে টেক্সাসের এই অনুষ্ঠানে আসতে পেরে আমি রোমাঞ্চিত বোধ করছি।

জবাবে মোদি বলে, হোয়াইট হাউসের সত্যিকার বন্ধু ভারত। সে ট্রাম্পকে উষ্ণ, বন্ধুসুলভ, সহজগম্য, উদ্যমী ও বুদ্ধিদীপ্ত নেতা হিসেবে উল্লেখ করে।

ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী বলে, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা থেকে সর্বাধিনায়ক, পরিচালকমণ্ডলীর সভাকক্ষ থেকে শুরু করে ওভাল অফিস, স্টুডিও থেকে বৈশ্বিক মঞ্চ- সব জায়গায় সে স্থায়ী প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয়েছে।

মোদিবিরোধী বিক্ষোভকারীরা বলে, মোদির শাসনামলে ভারতে নৃতাত্ত্বিক সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ভারতকে গণহত্যার নজরদারির তালিকায় রেখেছে।

পাঁচ বছর আগে সে ক্ষমতায় আসার পর থেকে দেশটিতে সামাজিক ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা মারাত্মক রূপ নিয়েছে।

সাঈদ আলী নামে এক বিক্ষোভকারী বলেন, কাশ্মীরে আট লাখ সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। সেখানকার অধিবাসীদের স্বাধীনতা কেড়ে নেয়া হয়েছে। তারা ঘর থেকে বের হতে পারছেন না।

বিক্ষোভকারীরা বলেন, শিশুদের কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। উপত্যকাটির বাসিন্দাদের ওপর নিপীড়ন চালাচ্ছে পুলিশ। আর ভারতীয় সেনারা তাদের গুলি করে হত্যা করছে। রাজ্যটির ইন্টারনেট ও টেলিফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে।

মোদিকে হাউসটনে স্বাগত জানানো হয়নি- সেই খবর তার কানে পৌঁছাতে চাচ্ছে বলে দাবি করে বিক্ষোভকারীরা।

গুরপাটওয়ান্ত পান্নু নামে একজন বলে, মোদির জন্য আমেরিকা নয়। আমেরিকা ন্যায়সঙ্গত জীবন ও সম্পদের পক্ষে। কিন্তু ঠিক তার বিপরীত হচ্ছে মোদি।

সে বলে, মোদি অন্ধ ও বধির। কারণ সে যদি কিছু দেখত, তাহলে কাশ্মীরে ৮০ লাখ লোককে সে হত্যা করতে যাচ্ছে বলেও ইতিমধ্যে দেখতে পেত।

এর আগে মার্কিনভিত্তিক কাশ্মীরি মানবাধিকারকর্মীরা মোদির বিরুদ্ধে হাউসটনে একটি মামলা করে। এতে কাশ্মীরে তার বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়েছে।


শেয়ার করুন

0 facebook: