স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ ওমর ফারুক
নাঈম, মৌলভীবাজার
প্রতিনিধি: মৌলভীবাজার সরকারি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা আয়োজন করেছে ‘রেগ ডে’ অনুষ্ঠানের।
কলেজ জীবনের শেষ ক্লাসে একটু আনন্দ করাই তাদের উদ্দেশ্য। সব প্রস্তুতিই সম্পন্ন। কিন্তু
মাঝে বাঁধা হয়ে দাঁড়াল তোষার গ্রুপ। রেগ ডে’র অনুষ্ঠানে নাকি তুষার গ্রুপের প্রধান তুষার
কে অতিথি করতে হবে। তা না হলে নাকি তুষার প্রোগ্রাম করতে দিবেন না। শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগ
নেতা আনিসুল ইসলাম চৌধুরী তুষারকে কলেজে রেগ ডে’র প্রোগ্রামে অতিথি করে আনতে বাধ্য হয়।
কলেজর
শিক্ষার্থীদের সূত্রে জানা যায়,
শুধু এই দ্বাদশ শ্রেণীর রেগ ডে নয়। কলেজের শিক্ষার্থী কর্তৃক আয়োজিত
মানববন্ধন, সভা, নবীন
বরণ, বিদায়
সংবর্ধনাসহ সকল অনুষ্ঠান পালন করতে নাকি তুষার গ্রুপ প্রধান আনিসুল ইসলাম তুষারের অনুমতির
প্রয়োজন হয়। আর অনুমতি না পেলে লাগিয়ে দেবে হট্রগোল। অথচ আনিসুল ইসলাম তুষার মৌলভীবাজার
সরকারি কলেজের কোন বিভাগ কিংবা কোন শ্রেণীর ছাত্রই নয়। তারপরও সরকারি কলেজে
তার গ্রুপের এমন আধিপত্য!
শুধু
তাই নয়, তুষার
গ্রুপের এমন কার্যক্রমে কলেজটিতে কর্মরত শিক্ষকরাও আতঙ্কিত বলে একাধিক শিক্ষক নাম প্রকাশ
না করার শর্তে জানিয়েছেন। গত ২০১৬ সালের ২ মার্চ মৌলভীবাজার সরকারি কলেজে ইংরেজি বিভাগের
সহকারী অধ্যাপক মো. আবু হানিফকে প্রশাসনিক ভবনের সামনে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ রয়েছে তুষার
গ্রুপের কর্মীদের উপর।
মৌলভীবাজার
জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান রনি পক্ষের তুষার গ্রুপ কলেজে একক নিয়ন্ত্রণ
প্রতিষ্ঠায় মরিয়া ছিল।
এছাড়া
তুষার গ্রুপ সাধারণ ছাত্রদের ক্যাম্পাসে নানাভাবে নির্যাতন করত। তুষার গ্রুপে রাজত্বকালে
স্বাধীনতা বলতে কিছুই ছিল না। সরকারি কলেজ ক্যাম্পাস ছাত্রদল ও শিবির তেমন কোন সক্রিয়
কার্যক্রম না থাকলেও ছাত্রলীগের কোন পক্ষ এর নিয়ন্ত্রণ নেবে, তা নিয়ে
বিভক্ত দেখা দেয়।
মৌলভীবাজার
সরকারী কলেজর এইচএসসি পড়ুয়া এক ছাত্র বলেন, আমরা কলেজে রেগ ডে প্রোগ্রামের আয়োজন করেছিলাম
কিন্তু তুষার গ্রুপের কয়েকজন কর্মী এসে বলে তুষার ভাই অনুমতি না নিলে নাকি প্রোগ্রাম
করতে পারব না।
অনার্স
পড়ুয়া আরেক ছাত্রী বলেন,
মৌলভীবাজারের সর্বোচ্ছ বিদ্যাপিঠ সেরা কলেজে এইচএসসিতে ভর্তি হতে
পেরে নিজের কাছে অনেক ভালো লেগেছিল। গর্ব অনুভব করেছিলাম। কিন্তু এখন দেখি বিভিন্ন
সময় সরকারি দলের গ্রুপিং এর কারণে কলেজে গন্ডগোল দেখা দেয়। নিজে যেমন টেনশনে থাকি তেমনি
মা-বাবাও টেনশনে থাকেন ক্লাস শেষে ঠিকমতো বাসায় ফিরছি কিনা।
শুধু
মৌলভীবাজার সরকারি কলেজে নয় সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়েও রয়েছে তুষারের এমটি সক্রিয় গ্রুপ।
এই গ্রুপের কর্মীরা হচ্ছেন ঐ স্কুলের অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা। স্কুল ও
কলেজে এই আধিপত্য বিস্তার নিয়ে কলেজে মরিয়া ছাত্রলীগের একাধিক গ্রুপ। আর এসব গ্রুপের
মধ্যে প্রতিনিয়তই ঘটছে ছোট-বড় সংঘর্ষ।
সর্বশেষ
গত ৭ ডিসেম্বর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রতিপক্ষ গ্রুপের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে খুন
হয় ছাত্রলীগ নেতা মোহাম্মদ আলী শাবাব ও কর্মী নাহিদ আহমদ মাহি। এঘটনায় নিহত শাবাবের
মা সেলিনা রহমান চৌধুরী তুষার গ্রুপের প্রধান আনিসুল ইসলাম চৌধুরী তুষারকে প্রধান আসামী
করে আরো ১১ জনের নাম উল্লেখ ও ৬/৭ জনকে অজ্ঞাতনামা করে মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা
দায়ের করেন।
তুষার
গ্রুপের এমন আধিপত্যের ব্যাপারে মৌলভীবাজার সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ ড. ফজলুল আলী বলেন, যতটুকু
জানি তুষার আমাদের ছাত্র নয়। কলেজের ক্যাম্পাসে প্রায় সময় তুষার ও তার দলবলকে দেখা
যায়।
খবর বিভাগঃ
অপরাধ
জেলা সংবাদ
0 facebook: