25 December 2017

সাগরতলে বিলাসবহুল রিসোর্টে থাকার সুযোগ!

স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ ছয়টি ছোট দ্বীপ নিয়ে তৈরি হচ্ছে দুবাইয়ের হার্ট অব ইউরোপ যেন পর্যটকদের জন্য এক স্বর্গরাজ্য এর বিশেষ আকর্ষণ ১২৫টি ভাসমান ভিলা এগুলোর একটি অংশ আবার পানির তলে ২০১৮ সাল নাগাদ পুরোপুরি শেষ হবে নির্মাণকাজ এরই মধ্যে প্রথম ভাসমান ভিলা তৈরিও হয়ে গেছে সাগর নিয়ে মানুষের মনে রহস্য-রোমাঞ্চের কমতি নেই যুগ যুগ ধরে তারা সাগরের বুকে ভেসে বেড়াচ্ছে এক এক করে সাগরজল আর সাগরতলের রহস্য ভেদ করে চলেছে কিন্তু সাগরতলে বসবাস? এমনটাও কি সম্ভব? হয়তো আপনি ঘুমাচ্ছেন, আর আপনার পাশ দিয়েই সাঁতার কেটে বেরিয়ে যাচ্ছে মাছের ঝাঁক হ্যাঁ, এটাও সম্ভব সে আয়োজন করা হচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে দেশটির রাজধানী দুবাই থেকে আড়াই মাইল দূরে, পারস্য উপসাগরে সেখানে তৈরি করা হচ্ছে হার্ট অব ইউরোপনামের কৃত্রিম দ্বীপপুঞ্জ সেই দ্বীপপুঞ্জকে কেন্দ্র করে বানানো হচ্ছে মোট ১৩১টি বিলাসবহুল ভিলা আর সেই ভিলাগুলোতেই থাকছে সাগরতলে বসবাসের বন্দোবস্ত আশা করা হচ্ছে, সামনের বছরেই এই প্রজেক্টের কাজ শেষ হয়ে যাবে
 


সে লক্ষ্যে কাজ করে যাছেন ২৫টি দেশের ২০০-এরও বেশি মানুষএই মেগাপ্রজেক্টের বিপুল খরচ অবশ্য আমিরাত সরকারকে জোগাতে হচ্ছে নাকারণ, হার্ট অব ইউরোপ আমিরাতের সরকারি কোনো প্রকল্প নয়এর মালিকানা থেকে শুরু করে বাস্তবায়ন-সব কিছুর হর্তাকর্তা রিয়েল এস্টেট কম্পানি ক্লাইনডিনস্ট গ্রুপতারা এই প্রকল্পের কাজ শুরু করেছিল ২০০৩ সালেমূল পরিকল্পনাটি ছিল বিশ্বমানচিত্রের আদলে কতগুলো কৃত্রিম দ্বীপ তৈরি করাপ্রকল্পটিতে বিশ্বমানচিত্রের আদল তৈরি করতে দেড় হাজার থেকে সাড়ে চার হাজার বর্গফুটের শ তিনেক কৃত্রিম দ্বীপ তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়কিন্তু এরই মধ্যে শুরু হয়ে যায় ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক মন্দাফলে প্রকল্পের কাজ অসমাপ্ত থেকে যায়পরে ২০০৯ সালে প্রকল্পটি খানিকটা বদলে আবার শুরু করা হয়এবার আর শুধু দ্বীপ নয়, সেই দ্বীপগুলোকে কেন্দ্র করে বিলাসবহুল রিসোর্ট তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়মূল দ্বীপ সাজানো হয় ইউরোপের মতো করেআর বাইরের দ্বীপগুলোকে ইউরোপের পাঁচটি দেশ বা জায়গার মতো-মোনাকো (ফ্রান্স), জার্মানি, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড ও সেন্ট পিটার্সবার্গ (রাশিয়া)

 

এই দ্বীপগুলোর পাশেই নির্মাণ করা হচ্ছে বিলাসবহুল ভিলাগুলোইতিমধ্যে কাজ বেশ এগিয়েও গিয়েছেতিনতলা এই ভিলাগুলোর নিচতলা পানির নিচে, দ্বিতীয় তলা সমুদ্রপৃষ্ঠের সমতলে, আর ওপরতলা সাগরের ওপরেওপরতলায় একটি ডেকে হট টাবে শুয়ে-বসে সাগরের সৌন্দর্য তো উপভোগ করা যাবেই, দূর থেকে উপভোগ করা যাবে ছবির মতো সাজানো দুবাই শহরওএই হট টাবটি আবার স্বচ্ছ কাচের তৈরিমানে ওখান থেকে নিচের লিভিংরুমে কী কী হচ্ছে, সেদিকেও চোখ রাখা যাবেআরো আছে রিল্যাক্সেশন এরিয়া, এক্সটার্নাল শাওয়ার, ছোট্ট একটি রান্নাঘর, আর একটি মিনি বাররিল্যাক্সেশন এরিয়াটাকে চাইলে আবার আউটডোর বেডরুমও বানিয়ে ফেলা যায়দ্বিতীয়তলাটি বেশ খোলামেলাতাতে আছে একটি করে লিভিংরুম, ডাইনিংরুম, রান্নাঘর ও বাথরুমএ ছাড়া সূর্যস্নানের জন্য একটি ডেকও থাকছেসেই সঙ্গে একটি মইওপরতলায়-নিচতলায় যাওয়ার জন্যতবে এই ভিলাগুলোর সবচেয়ে বিলাসবহুল অংশ একদম নিচের তলাটিস্বাভাবিকভাবেই মাস্টার বেডরুমটিও সাগরতলের এই তলায়ইসঙ্গে আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন একটি বাথরুমপাশাপাশি বাথরুমসহ একটি গেস্টরুমও পাবেন নিচের তলায়এই দুই বেডরুমের বিছানায় শুয়েই সাগরতলের জগত্ দেখা যাবেবেডরুম দুটিতে সে জন্য ছাদ থেকে মেঝে পর্যন্ত বিস্তৃত বিশেষ জানালাও রাখা হচ্ছে
  
এই ভিলাগুলোর নাম দেওয়া হয়েছে ফ্লোটিং সিহর্স ভিলাআয়তন প্রায় চার হাজার বর্গফুট করেশুধু সাগরতলের অংশটিরই আয়তন প্রায় ৮৬১ বর্গফুটআর ভিলাগুলোর চারপাশে যে প্রবালবাগান গড়ে তোলা হচ্ছে, তার আয়তন ৬০০ বর্গফুটেরও বেশিসব মিলিয়ে মোট ১৩১টি ভিলা বানানো হচ্ছেভিলাগুলোর পারস্পরিক যোগাযোগের জন্য সেগুলোর মধ্যে আক্ষরিক অর্থেই গড়ে দেওয়া হয়েছে সেতুবন্ধনতবে সেগুলো সবই পায়ে চলার সেতুপুরো দ্বীপেই কোনো গাড়ি চলার বন্দোবস্ত নেইযাকে বলে কার-ফ্রিদ্বীপপুঞ্জআর এই পুরো হার্ট অব ইউরোপে একসঙ্গে থাকতে পারবে মোট ১৬ হাজার মানুষ

 

কৃত্রিম দ্বীপ হলে কী হবে, ভিলাগুলোতে কিন্তু আরাম-আয়েশের কোনো খামতি থাকছে নাআছে বিলাসের সব বন্দোবস্তসাধারণ হোটেলের মতো রুম সার্ভিস তো থাকছেই, চাইলে নেওয়া যাবে খানসামা সার্ভিসওএমনকি খাস বাবুর্চিও নেওয়া যাবেথাকছে আধুনিক সব প্রযুক্তিওহাইস্পিড ইন্টারনেট, স্যাটেলাইট টিভি আর এয়ারকন্ডিশনিং তো থাকছেইএমনকি পাবেন লাইটিং, হিটিং ও কুলিংয়ের জন্য ওয়ান টাচ অটোমেটেড সিস্টেমওআর পুরো দ্বীপপুঞ্জকে বিবেচনায় নিলে সেখানে হোটেল-রিসোর্টের পাশাপাশি রেস্টুরেন্ট, বার, সুইমিংপুল, স্পা, এমনকি শপিং করার বন্দোবস্তও থাকছেপাশাপাশি বিনোদনের প্রাকৃতিক অনুষঙ্গগুলোও থাকছে, যেমন বালুকাময় সাদা সৈকত, লেগুন, উদ্যান ইত্যাদিএমনকি এখানে তৈরি করা হচ্ছে পৃথিবীর প্রথম আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণ করা যাবে এমন রাস্তামানে অতিথিদের ইচ্ছামাফিক সে রাস্তায় বৃষ্টি পড়বে কিংবা তুষার ঝরবেসব মিলিয়ে কাজ শেষ হলে কৃত্রিম এই দ্বীপপুঞ্জ যে পর্যটকদের জন্য এক টুকরো মানবসৃষ্ট স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠবে, তাতে আর সন্দেহ নেই






শেয়ার করুন

0 facebook: