24 December 2017

মেয়ের জন্য পাত্র পছন্দ না হওয়ায় মামলা

স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ মেয়ের জন্য অনেক সাধ করে জামাই খুঁজতে বেরিয়েছিলেন বাবা৷ সাবেক আমলের ঘটক নয়, পাত্র খুঁজতে মেয়ের জীবনবৃত্তান্ত তৈরি করে দিয়েছিলেন নামী পাত্র-পাত্রীর সন্ধানদাতা একটি সংস্থার হাতে৷ মেয়ের জন্য মন মতো পাত্র খুঁজে দেবে তারাই৷

মেয়ের জীবনবৃত্তান্তের সঙ্গে মিলিয়ে ১০ জন হবু পাত্রের তালিকাও বাবার হাতে তুলে দিয়েছিল সংস্থাটি৷ কিন্তু পছন্দ হয়নি পাত্র৷ তাই ওই ম্যাট্রিমোনিয়াল সংস্থার বিরুদ্ধে ক্রেতা আদালতের দ্বারস্থ হলেন বাবা৷ বিবাহ অভিযান ঘিরে ক্রেতা আদালতে এমন মামলার নজির সাম্প্রতিক অতীতে নেই বলেই মনে করছেন আইন বিশেষজ্ঞেরা৷

কলকাতা জেলা ক্রেতাসুরক্ষা আদালতে মেয়ের বাবার অভিযোগ ছিল, ম্যাট্রিমোনিয়াল সাইটের কাছ থেকেও তো পরিষেবা পাওয়ার আশায় টাকা দিয়েছিলেন তিনি৷ পরিষেবা না পেলে তো সংস্থাটি ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য৷ মেয়েকে তো যার-তার হাতে তুলে দিতে পারেন না৷ শম্ভুনাথ চট্টোপাধ্যায় ও শেখ আবদুল আনসারের নেতৃত্বাধীন কলকাতা জেলা ক্রেতাসুরক্ষা আদালত (ইউনিট-১) অবশ্য বাবার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে৷

মেয়ের জন্য পাত্র পছন্দ না-হওয়ায় বাবা ক্রেতা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন, এমন ঘটনায় রীতিমতো তাজ্জব আইনজীবীরাও৷ শনিবার জেলা ক্রেতা আদালতের অবসরপ্রান্ত সদস্য অজিত বসু বলেন, ‘আমি এরকম অভিযোগের কথা আগে শুনিনি৷ এমন ক্ষেত্রে যদি টাকা নেয়ার পরও সংস্থাটি যদি পাত্রীর বিজ্ঞাপন না-ছাপে , কোনও পাত্রের হদিস না-দেয়, তা হলে পরিষেবায় ঘাটতির অভিযোগ হতে পারে৷ কিন্তু পাত্র পছন্দ-অপছন্দের বিষয়টি পরিষেবার আওতায় পড়বে না৷ কারণ সংস্থাটি পাত্র খুঁজে এনে দিলেও যদি তা পাত্রীর পছন্দ না-হয়, তা হলে তা থেকে পরিষেবায় ঘাটতি আইনিভাবে প্রমাণ করা খুব কঠিন৷

রানিকুঠির বাসিন্দা পাত্রীর বাবা অবশ্য এমন যুক্তি মানতেই রাজি নন৷ ঘটনাটি বছর আড়াই আগেকার৷ ২০১৫ -এর মার্চে মেয়ের জন্য পাত্র খুঁজে দেওয়ার জন্য আমহার্স্ট স্ট্রিটের একটি ম্যাট্রিমোনিয়াল সংস্থার কাছে৷ সেজন্য দুহাজার টাকা দিয়ে তার মেয়ের নাম রেজিস্ট্রেশনও করেন বাবা৷ দিন কয়েক বাদে ১০ জন সম্ভাব্য পাত্রের ছবি ও বয়োডেটা সমেত সিডি সংস্থার তরফ থেকে বাবাকে দেয়া হয়৷ বিপত্তি বাধে এরপরই৷

বাবার অভিযোগ, যে সিডিটি সংস্থার তরফ থেকে দেয়া হয়েছিল, সেটি ঠিকমতো খোলাই যায়নি৷ যতদিনে আবার নতুন করে ওই সম্ভাব্য পাত্রদের তথ্য-তালাশ শুরু করেন তিনি, ততদিনে ওই ১০ জনেরই বিয়ে হয়ে গিয়েছে৷ এভাবে কি মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে পারে সংস্থাটি? তাই আদালতে নালিশ করেন বাবা৷

আদালতে তার দাবি, রেজিস্ট্রেশন ফি বাবদ দুহাজার টাকা তো ফেরাতে তো হবেই , পাশাপাশি মানসিকভাবে হেনস্থার দায়ে আরও ১০ হাজার এবং মামলার খরচ বাবদ আরও পাঁচ হাজার টাকা দিতে হবে সংস্থাটিকে৷ আদালতে শুনানি চলাকালীন সংস্থার তরফ থেকে লিখিতভাবে জানানো হয়, বাবার চাহিদামতো পাত্রের জীবনবৃত্তান্ত খুঁজে সিডি দিয়েছিল তারা৷ কিন্তু পাত্রীর বাবার তা না-পছন্দ৷ তারা তো বড়জোর পাত্রীর জন্য উপযুক্ত পাত্রের সন্ধান দিতে পারে৷ বিয়ে তিনি করবেন কি না, তা তো ঠিক করে দিতে পারে না সংস্থাটি৷

সিডিতে যে কয়েকজন পাত্রের ছবি ও জীবনবৃত্তান্ত দিয়েছিলেন তারা, সেগুলি পছন্দ না-হওয়ায় আরও পাত্রের খোঁজ তারা দেবেন বলেও আশ্বাস দেয়া হয়েছিল পাত্রীর বাবাকে৷

ম্যাট্রিমোনিয়াল সংস্থার পাল্টা অভিযোগ, পাত্রীর বাবা তাতে আর রাজি হননি৷ তিনি বলে দেন, আর তাদের কাছ থেকে পরিষেবা তিনি চান না৷ টাকা ও ক্ষতিপূরণ দিতে হবে৷ আদালত দুপক্ষের সওয়াল-জবাব শুনে জানায়, পাত্রীর বাবা নিজেই বলেছেন, পাত্র খুঁজে দেয়ার জন্য যে রেজিস্ট্রেশন ফি নিয়েছিল সংস্থাটি, সেটা খুবই সামান্য৷ শর্ত বলাই হয়েছিল, তা ফেরতযোগ্য নয়৷ আর সিডিতে যে কয়েকজন সম্ভাব্য পাত্রের তথ্য দেয়া হয়েছিল, তা পছন্দ না-হলেও সংস্থাটি আরও পাত্রের খোঁজ দিতে রাজি হয়েছিল৷ কিন্তু অপেক্ষা না করে সাড়ে চার মাসের মধ্যে টাকা ফেরত চান বাবা৷ মেয়ের জন্য পাত্রের খোঁজ দিতে সাড়ে চার মাস কি খুব পর্যাপ্ত সময়, এ প্রশ্নও তুলেছে আদালত৷


শেয়ার করুন

0 facebook: