স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ মেয়ের
জন্য অনেক সাধ করে জামাই খুঁজতে বেরিয়েছিলেন বাবা৷ সাবেক আমলের ঘটক নয়, পাত্র
খুঁজতে মেয়ের জীবনবৃত্তান্ত তৈরি করে দিয়েছিলেন নামী পাত্র-পাত্রীর সন্ধানদাতা একটি
সংস্থার হাতে৷ মেয়ের জন্য মন মতো পাত্র খুঁজে দেবে তারাই৷
মেয়ের
জীবনবৃত্তান্তের সঙ্গে মিলিয়ে ১০ জন হবু পাত্রের তালিকাও বাবার হাতে তুলে দিয়েছিল সংস্থাটি৷
কিন্তু পছন্দ হয়নি পাত্র৷ তাই ওই ম্যাট্রিমোনিয়াল সংস্থার বিরুদ্ধে ক্রেতা আদালতের
দ্বারস্থ হলেন বাবা৷ বিবাহ অভিযান ঘিরে ক্রেতা আদালতে এমন মামলার নজির সাম্প্রতিক অতীতে
নেই বলেই মনে করছেন আইন বিশেষজ্ঞেরা৷
কলকাতা
জেলা ক্রেতাসুরক্ষা আদালতে মেয়ের বাবার অভিযোগ ছিল, ম্যাট্রিমোনিয়াল সাইটের কাছ থেকেও তো পরিষেবা
পাওয়ার আশায় টাকা দিয়েছিলেন তিনি৷ পরিষেবা না পেলে তো সংস্থাটি ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য৷
মেয়েকে তো যার-তার হাতে তুলে দিতে পারেন না৷ শম্ভুনাথ চট্টোপাধ্যায় ও শেখ আবদুল আনসারের
নেতৃত্বাধীন কলকাতা জেলা ক্রেতাসুরক্ষা আদালত (ইউনিট-১) অবশ্য বাবার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে৷
মেয়ের
জন্য পাত্র পছন্দ না-হওয়ায় বাবা ক্রেতা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন, এমন ঘটনায়
রীতিমতো তাজ্জব আইনজীবীরাও৷ শনিবার জেলা ক্রেতা আদালতের অবসরপ্রান্ত
সদস্য অজিত বসু বলেন, ‘আমি
এরকম অভিযোগের কথা আগে শুনিনি৷ এমন ক্ষেত্রে যদি টাকা নেয়ার পরও সংস্থাটি যদি পাত্রীর
বিজ্ঞাপন না-ছাপে , কোনও
পাত্রের হদিস না-দেয়, তা
হলে পরিষেবায় ঘাটতির অভিযোগ হতে পারে৷ কিন্তু পাত্র পছন্দ-অপছন্দের বিষয়টি পরিষেবার
আওতায় পড়বে না৷ কারণ সংস্থাটি পাত্র খুঁজে এনে দিলেও যদি তা পাত্রীর পছন্দ না-হয়, তা হলে
তা থেকে পরিষেবায় ঘাটতি আইনিভাবে প্রমাণ করা খুব কঠিন৷’
রানিকুঠির
বাসিন্দা পাত্রীর বাবা অবশ্য এমন যুক্তি মানতেই রাজি নন৷ ঘটনাটি বছর আড়াই আগেকার৷ ২০১৫
-এর মার্চে মেয়ের জন্য পাত্র খুঁজে দেওয়ার জন্য আমহার্স্ট স্ট্রিটের একটি ম্যাট্রিমোনিয়াল
সংস্থার কাছে৷ সেজন্য দু’হাজার
টাকা দিয়ে তার মেয়ের নাম রেজিস্ট্রেশনও করেন বাবা৷ দিন কয়েক বাদে ১০ জন সম্ভাব্য পাত্রের
ছবি ও বয়োডেটা সমেত সিডি সংস্থার তরফ থেকে বাবাকে দেয়া হয়৷ বিপত্তি বাধে এরপরই৷
বাবার
অভিযোগ, যে
সিডিটি সংস্থার তরফ থেকে দেয়া হয়েছিল, সেটি ঠিকমতো খোলাই যায়নি৷ যতদিনে আবার নতুন
করে ওই সম্ভাব্য পাত্রদের তথ্য-তালাশ শুরু করেন তিনি, ততদিনে
ওই ১০ জনেরই বিয়ে হয়ে গিয়েছে৷ এভাবে কি মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে পারে সংস্থাটি? তাই আদালতে
নালিশ করেন বাবা৷
আদালতে
তার দাবি, রেজিস্ট্রেশন
ফি বাবদ দু’হাজার
টাকা তো ফেরাতে তো হবেই ,
পাশাপাশি মানসিকভাবে হেনস্থার দায়ে আরও ১০ হাজার এবং মামলার খরচ
বাবদ আরও পাঁচ হাজার টাকা দিতে হবে সংস্থাটিকে৷ আদালতে
শুনানি চলাকালীন সংস্থার তরফ থেকে লিখিতভাবে জানানো হয়, বাবার
চাহিদামতো পাত্রের জীবনবৃত্তান্ত খুঁজে সিডি দিয়েছিল তারা৷ কিন্তু পাত্রীর বাবার তা
না-পছন্দ৷ তারা তো বড়জোর পাত্রীর জন্য উপযুক্ত পাত্রের সন্ধান দিতে পারে৷ বিয়ে তিনি
করবেন কি না, তা
তো ঠিক করে দিতে পারে না সংস্থাটি৷
সিডিতে
যে কয়েকজন পাত্রের ছবি ও জীবনবৃত্তান্ত দিয়েছিলেন তারা, সেগুলি
পছন্দ না-হওয়ায় আরও পাত্রের খোঁজ তারা দেবেন বলেও আশ্বাস দেয়া হয়েছিল পাত্রীর বাবাকে৷
ম্যাট্রিমোনিয়াল
সংস্থার পাল্টা অভিযোগ,
পাত্রীর বাবা তাতে আর রাজি হননি৷ তিনি বলে দেন, আর তাদের
কাছ থেকে পরিষেবা তিনি চান না৷ টাকা ও ক্ষতিপূরণ দিতে হবে৷ আদালত
দু’পক্ষের
সওয়াল-জবাব শুনে জানায়,
পাত্রীর বাবা নিজেই বলেছেন, পাত্র খুঁজে দেয়ার জন্য যে রেজিস্ট্রেশন
ফি নিয়েছিল সংস্থাটি, সেটা
খুবই সামান্য৷ শর্ত বলাই হয়েছিল,
তা ফেরতযোগ্য নয়৷ আর সিডিতে যে কয়েকজন সম্ভাব্য পাত্রের তথ্য দেয়া
হয়েছিল, তা
পছন্দ না-হলেও সংস্থাটি আরও পাত্রের খোঁজ দিতে রাজি হয়েছিল৷ কিন্তু অপেক্ষা না করে
সাড়ে চার মাসের মধ্যে টাকা ফেরত চান বাবা৷ মেয়ের জন্য পাত্রের খোঁজ দিতে সাড়ে চার মাস
কি খুব পর্যাপ্ত সময়, এ
প্রশ্নও তুলেছে আদালত৷
খবর বিভাগঃ
অপরাধ
0 facebook: