চট্টগ্রাম
মহানগরীর বহদ্দারহাটের খুচরা বাজারে চাল কিনতে আসা রিকশাচালক হাবিবুর রহমান (৫৬) বলেন, চলতি বছরের শুরু থেকে বাজারে মোটা চালের দাম কেজিপ্রতি ২ থেকে
৩ টাকা বেড়ে গেছে। চিকন চালের দাম বেড়েছে ৫ টাকা পর্যন্ত।
ফলে
চাল কিনে খেতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এক বেলা খেয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে। তার উপর একই সময়ে পেঁয়াজের
কেজি আবার ১০ থেকে ১২ টাকা বেড়ে গেছে। এ যেন মরার উপর খাড়ার ঘা।
তিনি
বলেন, বাজারে এমনিতেই শাক-সবজি, লবন-মরিচ তেল-মসল্লা
সবকিছুর দাম বাড়তি। তার উপর চাল ও পেঁয়াজের দাম বাড়া মানে গরিবের পেটে লাথি মারা।
খোঁজ
নিয়ে জানা গেছে, শুধু খুচরা বাজারে নয়, নগরীর ব্যবসার প্রাণকেন্দ্র
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের পাইকারী বাজারেও বেড়েছে চাল ও পেঁয়াজের দাম।
খাতুনগঞ্জের
চালের আড়ত ইদ্রিস এন্ড সন্সের মালিক ইদ্রিস মিয়া বলেন, ভারত থেকে আমদানি মূল্য বাড়ায় দেশেও চালের মূল্য বেড়েছে। একইভাবে পেঁয়াজের আমদানি
মূল্য বেড়ে যাওয়ায় দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে বলে জানান চাক্তাইয়ের পেঁয়াজ
আড়তদার শাহ আমানত ট্রেডার্সের মালিক গণি মিয়া।
তারা
হতাশা প্রকাশ করে বলেন,
এই সময়ে দেশের বাজারে যেমন নতুন চাল আসছে। তেমনি পেঁয়াজও
আসছে। কিন্তু চাহিদার তুলনায় তা অপ্রতুল সেটা জেনে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা
তাদের ইচ্ছামত দাম বাড়িয়ে নিচ্ছে।
তারা
বলেন, বাংলাদেশের বাজারে ভোগ্যপণ্যের অধিকাংশই ভারতীয় পণ্য। আর এসব পণ্যের আমদানিতে
ভারত নির্ভর হওয়ায় তারা যা খুশি তা করছে। ভারতীয় ব্যবসায়ীদের হাতে বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা
জিম্মী হয়ে পড়েছে।
তাদের
মতে, পণ্য আমদানির জন্য প্রতিযোগীতামূলক বাজার সৃষ্টি না করা পর্যন্ত
ভারতীয় ব্যবসায়ীদের এ চক্র থেকে বেরিয়ে আসার কোন উপায় নেই।
ব্যবসায়ীরা
জানান, সপ্তাহ-দুয়েক আগে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের পাইকারী বাজারে ভারতীয়
পেঁয়াজের দাম ছিল ৪৫-৪৮ টাকা। নতুন বছরের শুরু থেকে বিক্রি হচ্ছে ৫৩-৫৪ টাকা। এর আগে ৯০টাকা পর্যন্ত
উঠেছিল ভারতীয় পেয়াজের দাম।
একইভাবে
এক সপ্তাহ আগে খুচরা বাজারে পেঁয়াজের কেজি ৫০-৫৫ টাকায় নেমে আসে। আর এখন এই পেঁয়াজ
বিক্রয় হচ্ছে ৬৫ টাকা কেজি দরে। এর আগে ১০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রয় হয়েছিল প্রতি কেজি পেঁয়াজ।
ক্রেতাদের
ভাষ্য, মাঝখানে দাম কমায় সবাই ভাবতে শুরু করেছিল পেঁয়াজ নিয়ে দুশ্চিন্তার
দিন বুঝি ফুরিয়ে এল। কারন বাজারে দেশি পেঁয়াজও আসতে শুরু করেছে। কিন্তু ভারতীয় পেয়াজের
দাম বাড়ায় দেশি পেয়াজের দামও কমছে না। চট্টগ্রামের বাজারে বর্তমানে দেশি পেয়াজ ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রয়
হচ্ছে।
একইভাবে
গত বছরের শুরুতে বেশ কিছুদিন স্থিতিশীল থাকার পর চলতি সপ্তাহে চট্টগ্রামে আবার বাড়তে
শুরু করেছে চালের দামও।
খোঁজ
নিয়ে জানা গেছে, চলতি সপ্তাহে ভারতীয় আমদানি করা চাল প্রতিবস্তায় বেড়েছে ১০০
থেকে ১৫০ টাকা। মিনিকেট ও কাজললতার দাম প্রতি বস্তায় বেড়েছে ২৫০ টাকা। আর খুচরা বাজারে ভারতীয়
চালের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ২ থেকে ৩টা। মিনিকেট ও কাজললতার দাম বেড়েছে ৫ টাকা পর্যন্ত।
খাতুনগঞ্জের
পাইকারী চালের আড়তদার ইদ্রিস এন্ড সন্সের মালিক ইদ্রিস মিয়া বলেন, পেঁয়াজের মতো ভারত থেকে
চালের আমদানি মূল্য বেড়ে যাওয়ায় চালের দাম বেড়েছে। চিকন চালের আমদানি
কমে যাওয়ায় ভারতীয় চাল আমদানি বাড়ার সুযোগে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে সে দেশের ব্যবসায়ীরা।
চট্টগ্রাম
মহানগরীর কাজীর দেউরি, বহদ্দারহাট,
পাহাড়তলি বাজারে মানভেদে প্রতিকেজি মিনিকেট
৫৭ থেকে ৬৩ টাকা, নাজির শাইল ৬৫ থেকে ৭০ টাকা এবং আটাশ চাল বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে
৫৭ টাকায়। মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪২ থেকে ৪৫ টাকা দরে বিক্রয় হচ্ছে।
চালের
দাম বাড়তে থাকায় এটা কিনে খাওয়া সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। চালে দাম বৃদ্ধি সাধারণ
মানুষের জন্য খুবই কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে বলে চট্টগ্রাম মহানগরীর সচেতন মহলের অভিমত।
নগরীর
বহদ্দারহাটে চাল কেনার সময় সামশুর রহমান (৫৭) নামে এক ক্রেতা হতাশা প্রকাশ করে বলেন, চাল,
পেয়াজ. মরিচ, মসল্লাসহ নিত্য প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ানো দেখে মনে হচ্ছে, দেশে আবারও দুর্ভিক্ষ নেমে আসছে।
খবর বিভাগঃ
চট্টগ্রাম বিভাগ
জাতীয়
ব্যবসা ও বাণিজ্য
0 facebook: