স্বদেশবার্তা
ডেস্কঃ বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি থেকে প্রায় দেড় লাখ টন কয়লা গায়েবের ঘটনায় প্রাথমিকভাবে
খনির কর্মকর্তাদের দায়ী করছে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা। কয়লা গায়েবের ঘটনায় ইতোমধ্যে
দুই কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত,
এক এমডিকে অপসারণ এবং এক কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে। ১৯ কর্মকর্তার
বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। খনির চার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণও পেয়েছে
পেট্রোবাংলা গঠিত তদন্ত কমিটি। তাদের মধ্যেও একজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে
কয়লা ব্যবসায়ী ও দিনাজপুরের স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, খনির
দুর্নীতির মূলে রয়েছেন সদ্য বদলি হওয়া কোম্পানি সচিব ও মহাব্যবস্থাপক আবুল কাশেম প্রধানীয়া।
তার সময়েই খনিতে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয়েছে। তারা আরও বলেছেন, কয়লা
চুরির এই ‘নাটের
গুরু’ অগাধ
সম্পত্তিও গড়ে তুলেছেন।
শুধু
সাংবাদিকদের কাছেই নয়, সামাজিক
যোগাযোগ মাধ্যমেও খনির কর্মকর্তাদের ছবি দিয়ে তাদের বিষয়ে নানা অভিযোগ ও তথ্য তুলে
ধরছেন অনেকে। অভিযোগ উঠেছে,
দীর্ঘদিন ধরে কয়লা খনিতে চাকরি করার সুবাদে আবুল কাশেম প্রধানীয়া
বড় ধরনের সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছিলেন। খনির সব ধরনের কাজের কর্তা হিসেবে পরিচিত ছিলেন
তিনি। সদ্য বিদায়ী ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী হাবিব উদ্দিন আহমেদও দীর্ঘদিন চাকরি
করেছেন এখানে। এক সময় তিনিও ছিলেন এখানকার মহাব্যবস্থাপক। পরে পদোন্নতি পেয়ে ব্যবস্থাপনা
পরিচালক হন। একই সঙ্গে দুর্নীতির বড় অভিযোগ রয়েছে খনির ব্যবস্থাপক (জেনারেল সার্ভিসেস)
মাসুদুর রহমান হাওলাদার ও মহাব্যবস্থাপক (অর্থ ও হিসাব) গোপাল চন্দ্র সাহার বিরুদ্ধেও।
বৃহস্পতিবার
(২৬ জুলাই) বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি এলাকায় কথা হয় কয়লার ডাস্ট ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেনের
সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ
আট বছর ধরে বড়পুকুরিয়ায় কোম্পানি সচিব ও মহাব্যবস্থাপক হিসেবে চাকরি করেছেন আবুল কাশেম
প্রধানীয়া। যতসব নাটের গুরু তিনিই। কয়লা সরবরাহ, ব্যবস্থাপনা, চাকরি
দেওয়াসহ খনির যাবতীয় কার্যক্রম হতো তার ইশারায়। আবুল কাশেম প্রধানীয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ
করলেই চুরি যাওয়া কয়লার খোঁজ পাওয়া যাবে।’
কয়লা
দুর্নীতির তদন্তে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির চার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে
পেট্রোবাংলা গঠিত তদন্ত কমিটি। এই এমডি হলেন— খনির সদ্য সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাবীব
উদ্দিন আহমেদ, সাবেক
ব্যবস্থাপনা পরিচালক আওরঙ্গজেব,
আমিনুজ্জামান ও কামরুজ্জামান। বিদ্যুৎ, জ্বালানি
ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর
মধ্যে হাবিব উদ্দিন আহমেদকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
কয়লা
দুর্নীতির সঙ্গে যাদের নাম বেশি আলোচনায় এসেছে তাদের মধ্যে রয়েছেন খনির
ব্যবস্থাপক (জেনারেল সার্ভিসেস) মাসুদুর রহমান হাওলাদার ও মহাব্যবস্থাপক (অর্থ ও হিসাব)
গোপাল চন্দ্র সাহার নাম। অভিযোগ থেকে বাদ যাননি সাময়িক বরখাস্ত হওয়া খনির মহাব্যবস্থাপক
(মাইন অপারেশন) নুর-উজ-জামান চৌধুরী, উপ-মহাব্যবস্থাপক (স্টোর) একেএম খালেদুল
ইসলামও।
এদের
মধ্যে মাসুদুর রহমান বড়পুকুরিয়া খনিতে চাকরি করা কর্মকর্তাদের মধ্যে বেশ ক্ষমতাধর ছিলেন
বলে অনেকেই জানিয়েছেন। আন্দোলন-সংগ্রামে শ্রমিকদেরকে মারধর করার অভিযোগও রয়েছে তার
বিরুদ্ধে। আর গোপাল চন্দ্র সাহার বিরুদ্ধে এর আগেই ২০১৭ সালে ৩০০ টন কয়লা চুরির অভিযোগ
ছিল।
খনির
সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানা,
২০১৭ সালে খনি থেকে ৩০০ টন কয়লা চুরি হয়েছিল। বিষয়টি ফাঁস হয়ে গেলে
কর্মকর্তারা রাতারাতি সেই ৩০০ টন কয়লার টাকা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা দিয়ে সমন্বয় করেন।
এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে অর্থ ও হিসাব শাখার মহাব্যবস্থাপক গোপাল চন্দ্র
সাহার বিরুদ্ধে। সে সময়ে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও পরে আবারও আগের পদে বহাল হন
তিনি।
নাম প্রকাশে
অনিচ্ছুক এই সূত্র জানায়,
খনির বিদায়ী কোম্পানি সচিব ও মহাব্যবস্থাপক আবুল কাশেম প্রধানীয়া
দীর্ঘদিন ধরে চাকরির সুবাধে বিভিন্ন লোকজনের সঙ্গে আঁতাত করে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন।
আবুল কাশেম প্রধানীয়ার বাড়ি চাঁদপুর জেলায়। তবে ঢাকার কেরানীগঞ্জে বহুতলা ভবন ও পরীবাগে
একটি বাড়ি রয়েছে তার। স্ত্রী ও শ্বাশুড়ির নামে রয়েছে একটি পেট্রোল পাম্প।
ওই সূত্র
জানায়, মাদারীপুরে
বিলাসবহুল বাড়ি রয়েছে আরেক অভিযুক্ত মাসুদুর রহমান হাওলাদারের। এছাড়া,
৩/৪টি মাইক্রোবাস রয়েছে তার, যার একেকটির দাম অর্ধকোটি টাকারও বেশি। দীঘিপাড়া
কয়লা খনিতে কর্মকর্তাদের যাতায়াতের জন্য এসব মাইক্রোবাস পরিচালনা করেন মাসুদুর রহমান
। এজন্য তিনি মোটা অংকের ভাড়া পান।
বড়পুকুরিয়া
গ্রামের বাসিন্দা পলাশ বলেন,
‘দুর্নীতি হয়েছে যা তার বেশিরভাগের জন্যই দায়ী আবুল কাশেম প্রধানীয়া।
তার আচরণও খুবই খারাপ। বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির অসাধু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আঁতাত করে তিনি
কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য করেছেন। এতে করে কেউ কয়লা পেয়েছে চাহিদার কয়েকগুণ। আর কেউ
পায়নি এক ছটাকও।’
খনি থেকে
কয়লা চুরির ঘটনায় যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাদের ছবি ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ
মাধ্যমে। বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন দিনাজপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক এসএম নুরুজ্জামান
কোম্পানি সচিব আবুল কাশেম প্রধানীয়ার ছবি ফেসবুকে দিয়ে লিখেছেন, ‘বড়পুকুরিয়া
কয়লা খনির সুপারম্যান খ্যাত মহাব্যবস্থাপক আবুল কাশেম প্রধানীয়া। তাকে নাকি পশ্চিমাঞ্চল
গ্যাস কোম্পানিতে ( সিরাজগঞ্জে) বদলি করা হয়েছে।
বদলি নয়, কয়লা
চোরদের চাকরিচ্যুত ও কয়লার ডিও বাণিজ্যের হোতাদের আইনের আওতায় আনা হোক।’
এ বিষয়ে
কথা বলতে আবুল কাশেম প্রধানীয়ার মোবাইলে ফোনে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন
ধরেননি।
খবর বিভাগঃ
অপরাধ
জাতীয়
রংপুর বিভাগ
0 facebook: