16 January 2018

যে কারণে স্থগিত করা হলো পুলিশের কনস্টেবল নিয়োগ

স্বদেশবার্তা ড্স্কেঃ অতিমাত্রার বাণিজ্যের কারণেই স্থগিত করা হয়েছে পুলিশের কনস্টেবল পদে লোক নিয়োগএকের পর এক বাণিজ্যের খবরে সরকারের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারকদের বিরক্তির কারণেই এই নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে একাধিক সূত্রগত রবিবার পুলিশের মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) পক্ষে পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক মনিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এ-সংক্রান্ত জরুরি বার্তা পুলিশের অফিশিয়াল ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে প্রকাশ করা হয়এতে বলা হয়, পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত থাকবে

সাড়ে আট হাজার পুরুষ এবং দেড় হাজার নারীসহ মোট ১০ হাজার ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছিল গত বছরের ২১ ডিসেম্বর১৬ জানুয়ারি থেকে ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত জেলাওয়ারি এই নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কথা ছিল

তবে পুলিশ কনস্টেবলের নিয়োগপ্রক্রিয়া স্থগিত করা নিয়ে নানা আলোচনা শোনা যাচ্ছেস্থগিতের কারণ জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের সংস্থাপন শাখার অতিরিক্ত ডিআইজি হাবিবুর রহমান বলেন, দেশে তীব্র শীতএত শীতে প্রার্থীদের শারীরিক পরীক্ষার জন্য খালি গায়ে দাঁড়ানো কষ্টকরএসব পরিস্থিতি বিবেচনা করে উচ্চপর্যায় থেকে নিয়োগ স্থগিত করা হয়নিয়োগ আবার কবে শুরু হবে, তা এখন ঠিক হয়নি

তবে কেউ কেউ বলছেন, এখনই নিয়োগ না হলে প্রশিক্ষণ শেষ করে এসব পুলিশ সদস্য বর্তমান সরকারের মেয়াদে আর দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না

সূত্র বলছে, পুলিশে কনস্টেবল পদে লোক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর থেকেই দেশের বিভিন্ন এলাকায় শুরু হয় এই বাণিজ্যএকেকজন কনস্টেবলের জন্য ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা করে অগ্রিম নেওয়া হচ্ছিলঅনেক এলাকায় অর্ধেক টাকা নিয়োগের আগে, বাকি অর্ধেক নিয়োগ পাওয়ার পর এমন অলিখিত চুক্তির ভিত্তিতে চলছিল অর্থ আদায়বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয় এমপি ও মন্ত্রীদের পক্ষ থেকে প্রার্থী সংগ্রহ এবং বাণিজ্যের টাকা সংগ্রহের জন্য নিয়োগ করা হয়েছিল একাধিক বিশ্বস্ত এজেন্ট

পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সরকারের এমপি-মন্ত্রীরাও জড়িয়েছিলেন এই নিয়োগ-বাণিজ্যেবাণিজ্যের বিষয়টি রীতিমতো ওপেন সিক্রেট হয়ে পড়েছিল

অন্য একটি সূত্র বলছে, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মাধ্যমে বাণিজ্যের একটি ভাগ সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের একটি অংশে পৌঁছে যাচ্ছিলতবে কনস্টেবল নিয়োগে এমপি-মন্ত্রীদের ডিওলেটার বাণিজ্যের বিষয়টি এরই মধ্যে অবহিত হয়েছিল সরকারের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক মহলএকের পর এক এ ধরনের খবরে রীতিমতো বিরক্তি প্রকাশ করেন তারাএ বিষয়টি অবহিত করা হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হককে

এ বিষয়ে সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘আগে কি তদবির ছিল না? তবে গত কয়েক বছরে পুলিশ বাহিনীতে নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে নানা ধরনের কথা ওঠার কারণে এ বাহিনীর সাবেক প্রধান হিসেবে খুব বিব্রত বোধ করিএকটি ছেলে যখন টাকা দিয়ে নিয়োগ পাবে, তার প্রথম টার্গেটই হবে কীভাবে বিনিয়োগকৃত টাকাটা ওঠাবে৩০ থেকে ৩৫ বছরের চাকরিজীবনে সাধারণ মানুষ তার কাছ থেকে যন্ত্রণাই পাবেতবে কয়েকটা জেলার এসপিরা যথেষ্ট স্বচ্ছতার সঙ্গেই তাদের কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেনতাদের কাছ থেকে জনগণ সহায়তাও পাচ্ছে

তিনি বলেন, পুলিশের উচ্চপর্যায়ের অনেক কর্মকর্তাই সরকারের নীতিনির্ধারক পর্যায়ে নিয়োগসহ বিভিন্ন মৌলিক সমস্যা নিয়ে কথা বলেন নাতবে তারা নিজেদের স্বার্থ নিয়ে কথা বলেনএ কারণে এসব সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করছে

প্রায় একই কথা বলেন আরেক সাবেক আইজিপি মুহম্মদ হাদিস উদ্দীনতিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক চাপ কোন সময় ছিল না! নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক চাপ থাকলেই কি সংশ্লিষ্ট এসপিকে তা শুনতে হবে? নৈতিকতার শক্তি থাকলে তিনি তা অগ্রাহ্য করবেন এটাই নিয়মএতে করে সরকারের ইমেজই বাড়বেওই জেলায় না থাকলে সমস্যা কীসর্বোচ্চ অন্য জেলায় বদলি হতে পারেন এই তো!’ 

নিজের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘আমি নিজেও ঢাকা জেলার এসপি ছিলামতৎকালীন এক প্রভাবশালী মন্ত্রীর তদবির না শোনার কারণে আমাকে অন্যত্র বদলি হতে হয়েছিলতবে আমি আমার তৎকালীন আইজিপি স্যারের কাছে কৃতজ্ঞ, তিনি ওই মন্ত্রীর কথা অনুযায়ী তত্ক্ষণাৎ আমাকে বদলি করেননিকরেছিলেন ছয় মাস পর

হাদিস উদ্দীন বলেন, নিয়োগের বিষয়টি মনিটরিংয়ের জন্য পুলিশ সদর দফতরের পক্ষ থেকে উচ্চ একটি শক্তিশালী কমিটি গঠন করে দেওয়া উচিতপ্রয়োজনে তারাই পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন জেলায় নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনা করবেএতে করে সংশ্লিষ্ট জেলার এসপিরা কোনো চাপে থাকবেন না

পুলিশ বাহিনীর কনস্টেবল নিয়োগ নিয়ে সব সময়ই নানা দুর্নীতি ও অবৈধ আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ ওঠেএবারও তার ব্যতিক্রম হয়নিনিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর থেকেই রাজনৈতিক দলের স্থানীয় কিছু নেতার কাছে চাকরিপ্রার্থীরা ধরনা দিতে শুরু করেনসরকারের উচ্চপর্যায়েও এ খবর চলে যায়গত রবিবার বিকেলে চট্টগ্রাম নগরের লালদীঘি ময়দানে আয়োজিত শোকসভায় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘পুলিশ কনস্টেবলের চাকরির টাকার ভাগাভাগিতে অংশ নেওয়া নেতা আওয়ামী লীগে প্রয়োজন নেই

পুলিশ সদর দপ্তরের কর্মকর্তারা মনে করছেন, বর্তমান আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক আগামী মাসে স্বাভাবিক অবসরে যাচ্ছেনএরপর নতুন আইজিপি দায়িত্ব নেবেননিয়োগের তারিখ পেছানোর ক্ষেত্রে এ বিষয়টিও কারণ হিসেবে থাকতে পারে


শেয়ার করুন

0 facebook: