18 January 2018

স্কুলকেন্দ্রিক ছাত্রলীগের রাজনীতির শিকার দশম শ্রেনির ছাত্র আদনান

স্টাফ রিপোর্টারঃ সরেজমিনে জানা যায় যে, চট্টগ্রামের সরকারি স্কুলগুলোতে ছাত্রলীগের একাধিক গ্রুপ ও উপ-গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে বর্তমানে। এসব গ্রুপের মধ্যে প্রতিনিয়ত সংঘাতের ঘটনা ঘটছে। এ সংঘাতের জেরে মঙ্গলবার কলেজিয়েট স্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্র আদনানকে খুন করা হয়। চট্টগ্রামের এই স্কুলকেন্দ্রিক ছাত্রলীগের রাজনীতি ও গ্রুপিংয়ের বলিই হয়েছে স্কুলছাত্র আদনান ইসফার। ঘটনাস্থলের ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহের পর তা যাচাই করে মাঈন উদ্দিন নামে একজনকে চিহ্নিত করেছে পুলিশ। নগরীর সরকারি স্কুলগুলোতে ছাত্রলীগের একটি গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছে কলেজছাত্র মাঈন। সিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, আদনান হত্যায় নেতৃত্ব দেয়া মাঈনকে গ্রেফতারে অভিযান চালানো হচ্ছে।

যদিও এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। তবে ঘটনাস্থল থেকে আটক তিন ছাত্রকে জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। মামলায় তাদের সাক্ষী করা হয়েছে। কোতোয়ালি থানার ওসি জসিম উদ্দিন জানান, ঘটনাস্থল থেকে আটক তিন স্কুলছাত্রের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, ঘটনাস্থলের ভিডিও ফুটেজে চিহ্নিত মাঈনকে গ্রেফতারে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), নগর গোয়েন্দা পুলিশ ও চকবাজার ও কোতোয়ালি থানা পুলিশ একযোগে কাজ করছে।

শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা জানান, কলেজিয়েট স্কুল, চট্টগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (গভ. হাই), সরকারি মুসলিম হাই স্কুল, নাসিরাবাদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের একাধিক গ্রুপ রয়েছে। স্কুল ছাত্রলীগের একটি গ্রুপের নেতৃত্ব দেন চন্দনপুরা এলাকার আবদুর রউফ নামে এক আওয়ামী লীগ নেতা। রউফের প্রতিদ্বন্দ্বী হলেন জামালখান এলাকার ছাত্রলীগ নেতা শাব্বির আহমদ। অভিযোগ করে তারা বলেন, ছাত্রলীগ নামধারী স্কুলের ছাত্ররা শিক্ষকদের কথা শোনে না। স্কুল ক্যাম্পাস এবং ক্যাম্পাসের বাইরে মারামারি ও সংঘাতে লিপ্ত হয়। স্কুলে এ ধরনের নোংরা ও সংঘাতময় রাজনৈতিক পরিবেশ নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা।

আদনানের একাধিক বন্ধু সাংবাদিকদের জানান, গ্রুপিংয়ের কারণে আদনানের প্রাণ গেছে। নবম শ্রেণীর ছাত্র হলেও মাঝেমধ্যে সে ছাত্রলীগের মিছিলে যেত। জামালখান এলাকার শাব্বিরের অনুসারী ছিল আদনান। তাদের বাড়িও পাশাপাশি। চন্দনপুরা এলাকার ছাত্রলীগ নেতা সাব্বিরের সঙ্গে জামালখান এলাকার শাব্বিরের দ্বন্দ্ব রয়েছে। কিছুদিন আগে চন্দনপুরার সাব্বিরের এক অনুসারীকে মারধর করে জামালখানের শাব্বিরের অনুসারী বাপ্পি। এ ঘটনার জের ধরে চন্দনপুরার সাব্বিরের অনুসারী মাঈনসহ কয়েকজন আদনানকে খুন করেছে। আদনানের বন্ধু শোয়াইব জানান, তাদের বাসা গণি বেকারির পশ্চিম গলিতে। মহসিন স্কুলের মাঠে মাঝে মাঝে তারা ফুটবল খেলে।

স্থানীয় লোকজন জানান, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত চন্দনপুরার সাব্বিরের গডফাদার রউফের বিরুদ্ধে খুন ও চাঁদাবাজির একাধিক মামলা রয়েছে। জামাল খান এলাকায় মেজ্জান হাইলে আইয়্যুনামের একটি রেস্তোরাঁয় বসে চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করে রউফের অনুসারীরা। ওই রেস্তোরাঁর ২০ গজের মধ্যে মঙ্গলবার আদনান খুনের ঘটনাটি ঘটে।

অভিভাবক রেজা মুহাম্মদ খান জানান, তার ছেলেও গ্রুপিংয়ে জড়িয়ে পড়েছিল। এজন্য তাকে ৩ মাস বাসায় আটকে রেখেছিলাম। স্কুল ছাত্র রাজনীতির নামে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের হাতে অস্ত্র তুলে দেয়া, সংঘাতে প্রশ্রয় দেয়া শিক্ষা ব্যবস্থায় মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে। এর পরিণতি খুব খারাপ হবে।

চকবাজার থানার ওসি নুরুল হুদা জানান, খুনের পরপরই ঘটনার ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। এটি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আদনানের মূল ঘাতক মাঈন উদ্দিন। তার সহযোগী ছিল কয়েকজন।


শেয়ার করুন

0 facebook: