21 January 2018

রোমহষ্যক ঘঠনা, পানির নিচে ৩০ ঘন্টা থাকার পরও যেভাবে বেঁচে আছেন


স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ সোহাগ হাওলাদারের গাছমছমে সেই অভিজ্ঞতা আর উদ্ধার অভিযানের কথা থাকছে এই প্রতিবেদনে বালুবোঝাই একটি নৌযান ডুবেছিল নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীতেডুবন্ত নৌযানটির সব কর্মী তীরে এলেও বেরোতে পারেননি ইঞ্জিনচালক সোহাগ হাওলাদারএক দিন পর স্বজনেরা ডুবুরি ভাড়া করলেন মৃতদেহ খুঁজে পেতে৩০ ঘণ্টা চেষ্টার পর পাওয়া গেল তাঁকে, তবে তাঁর মৃতদেহ নয়, জীবিত সোহাগই উঠে এলেন

সোহাগ হাওলাদারের সকালটা শুরু হয়েছিল অন্য কোনো দিনের মতোইএমভি মুসা নূর নামের মালবাহী নৌযানে (বাল্কহেড) ততক্ষণে বালু বোঝাই করা হয়েছেহাতের কাজ সেরে ইঞ্জিনরুমে ঢুকে পড়েছেন সোহাগএকফাঁকে মুঠোফোনে কথাও বলেছেন মায়ের সঙ্গেগত ১০ বছরে এই কক্ষেই বেশি সময় কেটেছে তাঁর১১ অক্টোবর সকালে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার বৈদ্যের বাজার এলাকা থেকে তাঁদের গন্তব্য ছিল নারায়ণগঞ্জ বন্দর

১৭ অক্টোবর সোহাগ হাওলাদারের সঙ্গে কথা শুরু হয়েছিল ওই সকালের বর্ণনা দিয়েবরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার কেদারপুর ইউনিয়নের রাহুতকাঠি গ্রামে সোহাগের বাড়িযদিও মানুষ এখনো বিশ্বাস করতে পারে না সোহাগ ফিরে এসেছেন

আমরা তাঁর বাড়ির আঙিনায় বসে আবারও কান পাতি সোহাগের কথায়সেদিনের স্মৃতিচারণা করতে থাকেন সোহাগ—‘চলতে চলতে একসময় মনে হলো জাহাজের সামনের অংশ কোনো কিছুতে আটকে গেছেতখন আমি জাহাজ পেছন দিকে নেওয়ার (গন ব্যাগার) নির্দেশ পাইগন ব্যাগার দিয়ে আমি ইঞ্জিনরুম থেকে ওপরে উঠে আসিএ সময় জাহাজটি একদিকে হেলে পড়ছিলতখন সকাল ১০টাবন্দর উপজেলার ২ নম্বর ঢাকেশ্বরী সোনাচড়া এলাকায় বিআইডব্লিউটিসির ডকইয়ার্ডের সামনে ছিল এমভি মুসা নূর

ওপর থেকে ইঞ্জিন বন্ধ করার ঘণ্টাধ্বনি পান সোহাগসঙ্গে সঙ্গে আবার ইঞ্জিনরুমে গিয়ে ইঞ্জিন বন্ধ করে ওপরে ওঠার চেষ্টা করেন, কিন্তু ততক্ষণে দরজা দিয়ে প্রচণ্ড বেগে পানি ঢুকছেপানি ঠেলেই বের হওয়ার চেষ্টা করেন সোহাগ, কিন্তু কিছুতেই বের হতে পারলেন নাসাড়ে ১৬ হাজার বর্গফুট বালুভর্তি এমভি মুসা নূর ধীরে ধীরে ডুবে যায় শীতলক্ষ্যার পানিতেসেদিন নৌযানে কর্মী ছিলেন মোট ছয়জনসোহাগ হাওলাদার ছাড়া পাঁচজনই সাঁতরে তীরে ওঠেনএরপর? সোহাগ হাওলাদার অজানায় দৃষ্টি রাখেনশুধু বলেন, ‘আমার আর কিছুই মনে নেই

শুরু হলো উদ্ধারকাজ

সেদিন বিকেলেই শুরু হয় উদ্ধারকাজফায়ার সার্ভিস ও বিআইডব্লিউটিএর ডুবুরি দল নিখোঁজ সোহাগ হাওলাদারকে উদ্ধারের চেষ্টা করেনদীর্ঘ সময় চেষ্টার পরও উদ্ধার না হওয়ায় স্বজনেরা মরদেহ গ্রহণের প্রস্তুতি নেনডুবুরি দিয়ে খুঁজতে থাকেন মরদেহআনা হয় কফিন, চা-পাতা, সাদা কাপড়সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত চলল উদ্ধার তৎপরতাকিন্তু খুঁজে পাওয়া গেল না সোহাগের মরদেহসমাপ্ত ঘোষণা করা হলো উদ্ধার অভিযান

গ্রামে চলছিল জানাজার প্রস্তুতি

১২ অক্টোবরএর মধ্যেই পেরিয়ে গেছে ২৪ ঘণ্টাসোহাগের মরদেহ উদ্ধারের আশা ছেড়ে দিয়েছিল অনেকেতবে হাল ছাড়েননি স্বজনেরাএদিকে গ্রামবাসী প্রস্তুতি নেন গায়েবানা জানাজারকিন্তু বিকেল চারটায় থেমে গেল সব প্রস্তুতিশোকের কান্না রূপ নিল আনন্দের অশ্রুতেকারণ, তখন সোহাগের বাড়িতে পৌঁছে গেছে ডুবুরি জাহাঙ্গীরের কথা—‘বেঁচে আছে

ডাক পড়েছিল জাহাঙ্গীরের

ডুবুরি জাহাঙ্গীর আলম সিকদারের ডাক পড়েছিল ১২ অক্টোবর সকালেমাদারীপুরের শিবচরের এই ডুবুরি ৫০ বছর ধরে এ কাজ করছেনজাহাঙ্গীর আলম সিকদারের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হয়তিনি বলেন, ‘আমাকে বলা হয়েছিল ভেতরে একটি মৃতদেহ আছে, বের করতে হবেচুক্তি হয়, উদ্ধার করতে পারলে ২০ হাজার টাকা দেবেন, না পারলে ৫ হাজার

উদ্ধারকাজ করতে এসে জাহাঙ্গীর আলম সিকদার দেখেন বিআইডব্লিউটিএ ও স্থানীয় ডুবুরিরাও আছেনতাঁদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি বুঝে নেন তিনিউদ্ধারকাজে সহযোগী হিসেবে নেন বিআইডব্লিউটিএর উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয়’-এর ডুবুরি মাসুম মল্লিককে

শুরু হয় তাঁর উদ্ধারকাজজাহাঙ্গীর আলম সিকদার বলেন, ‘আমি ইঞ্জিনরুমে গিয়ে দেখি সামনে ও পেছনে দুটি দরজাই আটকানোপ্রথমে গিয়ে পেছনের দরজা ভাঙার চেষ্টা 


শেয়ার করুন

0 facebook: