স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ প্রধানমন্ত্রীর
ঘোষণাকে উদ্বৃতি করে ঋণের সুদহার কমানোর ঘোষনা দিচ্ছে ব্যাংকগুলো। সংবাদ সম্মেলন করে মালিকরা
সুদহার কমানোর ঘোষণা দিয়েছেন। ঘোষণা অনুযায়ী আজ থেকে (পহেলা জুলাই) সুদহার কমানো হচ্ছে বলে কয়েকটি বিজ্ঞাপন
প্রচার করছেন। কিন্তু হঠাৎ করে সুদহার কমানো
অসম্ভব বলে মনে করছেন অনেক। ব্যাংকাররা বলছেন, পর্যায়ক্রমে সুদহার কমানো হবে। এক্ষেত্রে বেশকিছু খাতে কম সুদ
রয়েছে। সেটিকেও প্রথম কমানো হয়েছে বলে
প্রচার করবে ব্যাংকগুলো। এর পর ধারাবাহিকভাবে কমানো হবে। তবে এ ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত অর্থের জোগান থাকাটা অন্যতম চ্যালেঞ্জ। অর্থ না থাকলে ব্যাংকগুলো শেষ
পর্যন্ত কোনো ঋণ বিতরণ করতে পারবে না।
গত ২০ জুন এক
বৈঠক থেকে ঋণের সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার ঘোষণা দেয় বেসরকারি ব্যাংকের
উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি)। সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়,
আগামী ১ জুলাই থেকে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদে ঋণ এবং ছয় শতাংশ
সুদে তিন মাস মেয়াদি আমানত নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ
ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ব্যাংকের মালিকদের এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন অনেক কঠিন হবে। আমানতের সুদহার এত কমানো উচিত হবে না। কমালেও আমানত সংগ্রহ করাটা
চ্যালেঞ্জ হবে। সুদহার ৯-৬ শতাংশে নামিয়ে আনা
বাস্তবসম্মত নয়।
তিনি আরও বলেন,
ঋণের সুদহার কমিয়ে আনতে আমানতের সুদহার কমানো যুক্তিসঙ্গত
নয়। বরং ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণ,
বিলাসী খরচ, উচ্চ মুনাফার লক্ষ্যমাত্রা
কমিয়ে আনতে হবে। তা হলে ঋণের সুদহার অনেক কমানো সম্ভব নয়। কিন্তু আমানতের সুদহার কমিয়ে ঋণে সুদহার কমানোর
লক্ষ্য বাস্তবসম্মত নয়।
বিএবি সভাপতি ও
এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, সুদহার কমানোর বিষয়ে আমরা কাজ করছি। সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়েছে। সব ব্যাংককে এ সিদ্ধান্ত মেনে চলতে হবে। কেননা সবাই মিলে আমরা
প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর কাছে সুদ কমাতে রাজি হয়েছি।
অ্যাসোসিয়েশন
অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ঢাকা ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর
রহমান বলেন, সুদহার কমানো হবে এটি আমাদের সিদ্ধান্ত। যা-ই ঘটুক সুদহার আমরা কমিয়ে
আনব। তবে এটির পেছনে বাস্তবসম্মত
কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। ১০ থেকে ১২ শতাংশ সুদের আমানত রয়েছে। কস্ট অব ফান্ড যোগ করলে আরও বেশি। এ ছাড়া অনেক ব্যাংকের ঋণ-আমানত অনুপাত (এডিআর) শেষ
সীমায় রয়েছে। তারাও ঋণ বিতরণ করতে পারছে না। সব মিলিয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জের
মধ্যে এটি করতে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, সুদহার কমাত আমরা সবাই একমত। এ বিষয়ে প্রত্যেক ব্যাংক নিজ
নিজ বোর্ড মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। সুদহার কার্যকরের ক্ষেত্রে বেসরকারি ব্যাংকগুলোয় সরকারি আমানত এবং রাষ্ট্রীয়
ব্যাংকের আমানত রাখার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তা প্রয়োজন হবে।
এদিকে আগামীকাল
(সোমবার) ব্যাংকার্স সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এখানে ব্যাংকের এমডিদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন বাংলাদেশ
ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। ওই বৈঠকেও সুদহার কমানোর বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে।
এদিকে এ বিষয়ে
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, সুদহার নির্ধারণের বিষয়টি ব্যাংকগুলোর ওপর ছেড়ে দেওয়া আছে। সুদহার সহনীয় পর্যায় রাখতে
আমরা সবসময় বলে থাকি। ব্যাংকগুলো নীতিগত ছাড়ের সুবিধা ভোগ করছে। ওই ছাড় দেওয়ার সময় শর্ত ছিল সুদহার কমানো। কিন্তু যেভাবে কমানোর ঘোষণা
আসছে, এটি বাস্তবসম্মত নয়। তবে যেহেতু এটি সরাসরি আমাদের এখতিয়ারভুক্ত নয়। তাই আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ
করছি।
সুদহার কমানোর
বিষয়ে গত ২৭ জুন বৈঠকে বসেন ব্যাংকের এমডিরা। তারা সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনতে রাজি আছেন। তবে তবে ১ জুলাই থেকে সব ঋণের
সুদহার ৯ শতাংশ হবে না। প্রথম পর্যায়ে শুধু শিল্প ঋণের সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে নামানো হবে। পর্যায়ক্রমে অন্য ক্ষেত্রেও
সুদহার কমানো হবে। তবে ক্রেডিট কার্ড বা অন্য ভোক্তা ঋণের সুদহার ৯ শতাংশে নামিয়ে আনার সম্ভাবনা
কম। এর জন্য শুধু তিন মাস নয়,
সব আমানতের ক্ষেত্রে সুদহার হবে সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ।
এপ্রিলে
ব্যাংকগুলোর ঘোষিত সুদহার বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, কৃষি ও রপ্তানির ঋণের সুদহার ৭ থেকে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ। শিল্প খাতে চলতি ও মেয়াদে ঋণের ৯ থেকে ১১ শতাংশ
পর্যন্ত সুদে ঋণ দেওয়া হচ্ছে। এর বাইরে কোনো কোনো ব্যাংক ১৭ শতাংশ পর্যন্ত সুদ আদায় করছে। কিন্তু এসএমই ঋণ, ভোক্তা ঋণের সুদ হার ১৫ থেকে ২২ শতাংশ পর্যন্ত রয়েছে। এ ছাড়া ক্রেডিট কার্ডের সুদহার
রয়েছে সাড়ে ৩১ শতাংশ পর্যন্ত।
একাধিক
ব্যাংকারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ব্যাংকিং খাতে
খেলাপি ঋণ অনেক বেশি রয়েছে। খেলাপি ঋণের কারণে কস্ট অব ফান্ড বেশি হচ্ছে। এর বাইরে সঞ্চয়পত্র সুদহার অনেক বেশি। ব্যাংকগুলোর এখন পর্যাপ্ত
তহবিল নেই। আমানতে ৬ শতাংশ সুদ হলে
ব্যক্তিপর্যায়ের অনেক গ্রাহক ব্যাংক থেকে টাকা তুলে সঞ্চয়পত্র কিনবেন। এতে সুদ কমালেও ঋণ দেওয়ার মতো
অর্থ থাকবে না ব্যাংকগুলোর হাতে। বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণ ও আমানতের সুদহারের ব্যবধান স্প্রেড ৪ শতাংশ পর্যন্ত
অনুমোদন করছে। কিন্তু সুদহার কমলে স্প্রেড
থাকবে ৩ শতাংশ। স্প্রেড এত কম হলে অনেক
ব্যাংকই লোকসানে পড়বে। ব্যাংকের মালিকরা বিষয়টি রাজনীতির মতো ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু বাস্তবে এই ঘোষণা কার্যকর করা অনেক কঠিন।
খবর বিভাগঃ
জাতীয়
0 facebook: