একজন শিক্ষকের
তত্ত্বাবধানে পরিচালিত ছাত্রীদের এ অ্যাসেম্বলির একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম
ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। ২ মিনিট ৫৮ সেকেন্ডের এ ভিডিওতে দেখা যায়, ইউরোপের
অন্যতম ব্যান্ড ‘ভেঙ্গাবয়েজ’র একটি বহুল
প্রচলিত ‘আই ওয়ান্ট এ কিস কিস’ শিরোনামের গানের তালে তালে অ্যাসেম্বলি করছে স্কুলছাত্রীরা।
এটির তদারকি
করছেন একজন শিক্ষক। মাঝে-মধ্যে শরীর দোলাচ্ছেন তিনিও। ভিডিও’র ১ মিনিট
৪৫ সেকেন্ডের দিকে লাইনে দাঁড়ানো এক ছাত্রীকে হাত ধরে টেনে অ্যাসেম্বলির মঞ্চে
নিয়ে আসতেও দেখা যায় ওই শিক্ষককে।
এ নিয়ে তুমুল
আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে ফেসবুকে। যদিও গানটি ‘কিডস কিডস’
শিরোনামের
বলে দাবি করেছে স্কুল সংশ্লিষ্টরা।
‘সচেতন নাগরিক’
নামক
একটি গ্রুপে প্রথমে ভিডিওটি শেয়ার করেন ইফতেখার আলম ইফতি। তিনি লিখেছেন, ‘ইংলিশ
গানের (তাও অশ্লীল) সঙ্গে নাচানাচি করাটা যদি ডিজিটাল অ্যাসেম্বলি হয়, তাহলে
স্কুলে আমরা জাতীয় সংগীত গেয়ে যে অ্যাসেম্বলি করেছিলাম সেটা কি ছিল? চট্টগ্রামের
গরিব এ নেওয়াজ উচ্চ বিদ্যালয়ের নতুন প্রাক্তন শিক্ষার্থী সবাই দেখুন আর শেয়ার করুন।
এমন কর্মকাণ্ডের জন্য স্কুলের শিক্ষকদের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। একটা কথা বলতে চাই,
একটি
বিদ্যালয় মানুষ গড়ার কারখানা, কোনো সার্কাস মঞ্চ নয়।’
ভিডিওটি নিজের
টাইমলাইনে শেয়ার করে শহিদ হিরো নামের একজন লিখেছেন, ‘চলিতেছে সার্কাস।’
ভিডিও’র
পোস্টে কমেন্টও করেছেন অনেকে।
শারমিন আলম নামের
একজন কমেন্টে লিখেছেন, ‘হারমোনিয়াম টা শো! গানটা মাইকে ছাড়া হইছে হয়তো কোন
মোবাইল থেকে! আর টিচার যেভাবে একজন ছাত্রীকে এনে মঞ্চে দাঁড়া করালো তাও বা কতটুকু
দৃষ্টিনন্দন? বুঝলাম না।’
স্কুল
কর্তৃপক্ষের ভাষ্যমতে, আগামীকাল বুধবার (২৪ জানুয়ারি) স্কুলের বার্ষিক
ক্রীড়া অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে ডিসপ্লেতে অংশ নেবে ছাত্র-ছাত্রীরা। আর ডিসপ্লের
রিহার্সেল চলছিল কদিন ধরে। রিহার্সেলে এ গানটির তালে তালে শারীরিক কসরতের মহড়া দেয়
ছাত্রীরা। কসরত ও ডিসপ্লের পুরো কার্যক্রমের তত্ত্বাবধানে রয়েছেন স্কুলের ক্রীড়া ও
স্কাউট শিক্ষক মমতাজ উদ্দিন তালুকদার।
তবে এ ধরনের গানে
যে রিহার্সেল চলছিল তা জানতেন না বলে দাবি করেছেন, স্কুলের প্রধান
শিক্ষক রফিকুল ইসলাম। জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক বলেন, গানটি কিন্তু
কিডস কিডস শিরোনামের। তারপরও এমন গান দিয়ে ডিসপ্লের রিহার্সেল করানোর বিষয়টা আমি
জানতাম না।
পরে জানতে পেরে
বিষয়টি নিয়ে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও সদস্যসহ আমরা বসে আলোচনা করেছি। আর গানটি
রিহার্সেল থেকে বাদ দিতে বলেছি। অবশ্য ভিডিওটি এখনো দেখেননি বলে জানিয়েছেন প্রধান
শিক্ষক।
স্কুলের
ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ফয়েজুল হকও দাবি করেছেন গানটি কিডস কিডস শিরোনামের। এরপরও
এরকম গানে মেয়েদের রিহার্সেল করানোর বিষয়টি জানতেন না দাবি করে সভাপতি বলেন,
এটা
দিয়ে দু’দিন রিহার্সেল হয়েছে। আমরা জানার পরপরই এটা বন্ধ করে দিয়েছি। এখন আর ওই গান
দিয়ে রিহার্সেল হচ্ছে না।
তবে স্কাউটের
বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গানটি ব্যবহার হয় বলে স্কাউটের শিক্ষক মমতাজ উদ্দিন তালুকদার
জানিয়েছেন বলে মন্তব্য করেন ফয়েজুল হক।
স্থানীয় সূত্রে
জানা গেছে, চট্টগ্রামের হালিশহরের বর্তমান বিডিআর হলের পাশে ১৯৮০
সালে প্রতিষ্ঠা পায় গরিবে নেওয়াজ স্কুলটি। ১ম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান চলে
এ স্কুলে। দুই শিফটে স্কুলটিতে বর্তমানে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজার। ছাত্রীর
সংখ্যা মোট শিক্ষার্থীর অর্ধেক। সে হিসেবে কম হলেও ১২ শতাধিক ছাত্রী রয়েছে এ
স্কুলে।
বার্ষিক ক্রীড়া
অনুষ্ঠান উপলক্ষে বেশ কদিন ধরে চলছে কসরত ও রিহার্সেল। ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য আলাদা
করে এ রিহার্সেল চলছে। তবে প্রশ্নবিদ্ধ গানটি ছাত্রীদের রিহার্সেলে ব্যবহার করা
হলেও ছাত্রদের রিহার্সেলের তালিকায় ছিল না। এরকম ইংলিশ গানে ছাত্রীদের শারীরিক
কসরত করানোর বিষয়টি অশোভনীয় মন্তব্য করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন খোদ স্কুলটির সাবেক
শিক্ষার্থীরা।
ছাত্রীদের
রিহার্সেল দেয়া হলেও গানটি ছাত্রদের রিহার্সেলের তালিকায় না থাকার বিষয়টি স্বীকার
করেছেন ক্রীড়া ও স্কাউট শিক্ষক মমতাজ উদ্দিন তালুকদার। তবে গানটি মেয়েরা সিলেকশন
করেছে বলেও দাবি করেছেন তিনি।
এদিকে, স্কাউটের
পাশাপাশি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক ক্রীড়া অনুষ্ঠানে যোগ দিলেও
ডিসপ্লের জন্য এরকম গান বাছাই করতে কোথাও দেখেননি ও শুনেননি বলে জানান শিক্ষা
বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক কাজী নাজিমুল ইসলাম।
তিনি বলেন,
সচরাচর
শিক্ষনীয় বা দেশাত্মবোধক কোনো গান ডিসপ্লের জন্য বাছাই করা হয়ে থাকে। যেগুলোর মধ্য
দিয়ে শিক্ষার্থীরা দেশ, মুক্তিযুদ্ধ ও দেশীয় সংস্কৃতি সম্পর্কে জানা ও শেখার
সুযোগ পায়। ওই ওমন গান ব্যবহার করা হয়ে থাকে তাহলে কর্তৃপক্ষ কাজটি ঠিক করেনি।
তবে আমাদের
অনুসন্ধানে যা বেরিয়ে এসেছে তা হলো গানটি কিডস কিডস শিরোনামের নয় বরং কিস কিস
অর্থাৎ সোজা বাংলায় চুমু।
খবর বিভাগঃ
অপরাধ
চট্টগ্রাম বিভাগ
শিক্ষা
0 facebook: