স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ৮ ফেব্রুয়ারি। কী হতে পারে এই ৮ ফেব্রুয়ারি?
এ নিয়ে এখন চলছে জোর আলোচনা ও গুঞ্জন। এ রায় নিয়ে মুখোমুখি দেশের বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও
বিএনপি। সঙ্গত কারণেই এই দিনটি নিয়ে
আতঙ্কে রয়েছে সাধারণ মানুষ।
রায় বিপক্ষে
গেলে কঠোর কর্মসূচি দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোট রাজপথে থাকার ঘোষণা দিয়েছে। সে মোতাবেক দলীয় সব
নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড। এদিকে বিএনপির সিদ্ধান্ত দেখার
অপেক্ষায় রয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বিএনপি কোনো ধরনের নেতিবাচক সিদ্ধান্ত নিলে পাল্টা জবাব
দেয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে দলটি। এজন্য দলের সব নেতাকর্মীকে সতর্কাবস্থায় থাকার বার্তা দিয়েছে শীর্ষ নেতারা।
রোববার রাতে
গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দেড় ঘণ্টাব্যাপী ২০ দলীয় জোটের শরিকরা
মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন। ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা
জিয়ার মামলা ইস্যুতে রাজপথে থাকবে ২০ দলীয় জোটের শরিকরা। যে কোনো কর্মসূচি ঐক্যবদ্ধভাবে পালন করা হবে। খালেদা জিয়াকে ছাড়া কোনো
নির্বাচনে অংশ নেবে না ২০ দলীয় জোট। সেই নির্বাচনও হতে দেয়া হবে না। তা প্রতিহত করা হবে।
এদিকে ৮ ফেব্রুয়ারির
খালেদা জিয়ার রায় পরবর্তী বিএনপির কর্মসূচি ও সার্বিক পরিস্থিতি নিয়েও অনানুষ্ঠানিক আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা। এমন কি প্রধানমন্ত্রী ও দলীয়
সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গেও কয়েকজন নেতার আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। দলীয় সূত্র জানায়, এসব আলোচনায় আদালতের রায়ের পর বিএনপির সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়
থাকার বিষয়ে নেতারা একমত হয়েছেন।
রায়ে বেগম
জিয়ার সাজা হতে পারে এমন আশংকা করছে বিএনপি। আর সাজা হলে আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি রাজপথের সর্বাত্মক
আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন দলের নেতা-কর্মীরা। পাশাপাশি স্বেচ্ছায় কারাবরণ, হরতাল-অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে দলটির মধ্যে চলছে আলোচনা। সাংগঠনিক, নির্বাচনী প্রস্তুতিসহ যাবতীয় কার্যক্রম আপতত বন্ধ রেখে এখন
আন্দোলনের প্রস্তুতি চলছে দলটির ভিতরে।
খালেদা জিয়ার
মামলার রায়কে সামনে রেখে দলের সিনিয়র নেতারা প্রকাশ্যে হুমকি-ধমকি দিলেও ভেতরে
ভেতরে ভিন্ন কৌশল নিয়ে এগোচ্ছে বিএনপির হাইকমান্ড। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে আর ভুল করতে চায় না
দলটি। রায় যাই হোক না কেন তারা
সরকারের ফাঁদে পা দেবে না।
তবে দলের কর্মসূচি
নিয়ে দলের ভেতর কিছুটা ভিন্নমতও রয়েছে। দলের কট্টরপন্থি নেতারা কঠোর কর্মসূচি দেয়ার পক্ষে। অন্যদিকে এ ধরনের কর্মসূচি
দিয়ে নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের সুযোগ না দেয়ার পক্ষে অপর পক্ষ। শনিবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক ও রোববার ২০ দলীয়
জোটের বৈঠকে কর্মসূচি নিয়ে কট্টরপন্থী এবং প্রবীণ নেতারা তাদের মতামত তুলে ধরেন। তবে কোনো অভিমত দেননি দলের
চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
শনিবার (২৮ জানুয়ারি)
গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে রাতে স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়। সেখানে খালেদা জিয়াকে ছাড়া
আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপির
সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটি। বৈঠক শেষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা
ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, খালেদা জিয়াসহ কয়েকজন নিরাপরাধ
ব্যক্তিকে মিথ্যা, বানোয়াট ও রাজনৈতিক
উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা দিয়ে সরকারের আইন-আদালতের নিয়মনীতির বিরুদ্ধ আচরণের তীব্র
নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এ ব্যাপারে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে বিচারের
নামে সরকারি ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া আহ্বান জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার (২৫
জানুয়ারি) রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, খালেদা জিয়ার
সাজা হলে দেশে আগুন জ্বলবে। বিএনপি খালেদা জিয়াকে ছাড়া নির্বাচনে যাবে না। বয়কট করবে।
একই দিন
প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন,
৮ ফেব্রুয়ারি নিয়ে যেটা আমরা আশঙ্কা করছি, নেতিবাচক কোনো সিদ্ধান্ত সরকার কর্তৃক আদিষ্ট হয়ে যদি আদালত
থেকে প্রকাশ পায়, তাহলে গণতন্ত্রবিহীন বর্তমান
সরকারের পতনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হবে। সেদিন কোনো কিছু ঘটবে না, এমন নিশ্চিয়তা আমরা দিতে পারি না।
ওই অনুষ্ঠানেই
বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যেন ও কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শামসুজ্জামান দুদু বলেন, আগামী ৮ ফেব্রয়ারি হচ্ছে একদিক থেকে ফয়সালার দিন। এই দিনে বেগম খালেদা জিয়ার
গায়ে যদি ফুলের আঁচড়ও পড়ে বাংলাদেশের মানুষ গর্জে উঠবে। আমরা কি করলাম না করলাম এতে কিছু যাবে আসবে না। বাংলাদেশ কখনও বসে থাকবে না।
এদিকে খালেদা
জিয়ার রায় নিয়ে আওয়ামী লীগ ধীরে চলো নীতিতে চলছে। দলটির নেতারা সব পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে। বিএনপির কর্মসূচির ওপর নির্ভর
করে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবে ক্ষমতাসীন দল। দলীয় সূত্র জানায়, নির্বাচনী বছরের শুরুতেই দলটি কোনোভাবেই দেশে সহিংস পরিস্থিতি সহ্য করবে না। তাই সহিংসতায় জড়িতদের ব্যাপারে
রাজনীতি ও আইনিগত ব্যবস্থা নেবে। এ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ ও এর বিভিন্ন অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনকে প্রয়োজনীয়
নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগের
অন্য একটি সূত্র জানায়, নির্বাচনের আগে বিএনপিকে চাপে
রাখতে কৌশলের অংশ হিসেবে সম্ভাব্য সব পরিকল্পনা প্রয়োগ করবে সরকার। মূল উদ্দেশ্য, বিএনপিকে অপ্রস্তুত রেখে নির্বাচন করা। এ ক্ষেত্রে বছরের শুরুতে খালেদা জিয়ার মামলা নিয়ে
বিএনপিকে চাপে রাখতে পারলে দলটির নেতা-কর্মীরা নির্বাচনের আগে মনোবল হারাবে।
সূত্র জানায়,
সম্ভাব্য সব পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছে সরকার। আদালতের রায় ঘোষণার পর
পরিস্থিতি বুঝে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে। দলের নেতাকর্মীরা সতর্ক থাকবেন। পাশাপাশি সাংগঠনিকভাবে জনমত তৈরি করা হবে। এর অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগের
কেন্দ্রীয় নেতারা দেশব্যাপী সাংগঠনিক সফর শুরু করেছেন। তারা জনমত তৈরির পাশাপাশি তৃণমূল কর্মীদের
রাজনৈতিকভাবে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় থাকার
নির্দেশ দিচ্ছেন।
ঢাকেশ্বরী
মন্দিরে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল কঠোর
হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট
দুর্নীতির মামলার রায়কে ঘিরে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে কঠোর
ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীকে আগের নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে তুলনা করা চলবে না। তারা জনগণের বন্ধু, তারা পেশাদার পুলিশ। কাজেই বিশৃঙ্খলা কিংবা ধ্বংসাত্মক কিছু ঘটলে আমাদের
নিরাপত্তা বাহিনী ব্যবস্থা নেবে।
আওয়ামী লীগের
সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, খালেদা জিয়ার রায় নিয়ে আদালতের কর্মকাণ্ডে সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ নেই। খালেদা জিয়ার সাজা হলেও তাদের
কিছু করার নেই। এক্ষেত্রে রাজনীতির
প্রতিহিংসার কোনো যোগসূত্র নেই।
আওয়ামী লীগের
প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, খালেদা জিয়ার মামলার রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে দেশে অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা
চলছে। তবে দুর্নীতির মামলায় খালেদা
জিয়ার কারাগারে যাওয়ার প্রেক্ষিতে কিংবা আলাদলের মাধ্যমে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার
ঘটনায় আগুন জ্বালালে সেই আগুনে তাদের নিজেদেরই পুড়তে হবে। অতীতেও তারা আগুন জ্বালিয়ে সেই আগুনে তারাই জ্বলেছেন।
আওয়ামী লীগের
উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আবদুর রাজ্জাক বলেন, খালেদা জিয়ার মামলার রায় কী হবে, তা জানি না। তবে মামলার গতিবিধি এবং
সাক্ষ্য-প্রমাণ পর্যবেক্ষণ করলে বুঝা যায় এই মামলায় খালেদা জিয়া শাস্তি এড়াতে
পারবেন না। তাই তার সাজা হলে খুব
স্বাভাবিকভাবে বিএনপি সহিংস প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ কাউকে মাঠ ছেড়ে দেবে না। আমাদেরও কর্মসূচি থাকবে। কর্মসূচি হবে জনগণের জানমাল
রক্ষায় এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহায়তা করা।
আওয়ামী লীগ
সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম জানিয়েছেন, কেউ রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করলে সেটা কঠোরভাবে
নিয়ন্ত্রণ করবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। সেই সঙ্গে বিরাজমান পরিস্থিতি মোকাবেলায় দলীয়ভাবেও প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি থাকবে।
সব মিলিয়ে দেশ
এখন অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। দেশের সবাই এখন ৮ ফেব্রয়ারি নিয়ে উৎকণ্ঠিত। দেশের বড় দুই দল মুখোমুখি অবস্থান নিলে ফের উত্তপ্ত
হয়ে উঠবে রাজনৈতিক অঙ্গন। ফের সহিংস হয়ে উঠবে রাজপথ। বাংলাদেশের মানুষ আর রক্ত দেখতে চায় না। এখন দেখার বিষয় কী হয় ৮ ফেব্রুয়ারি। ওই দিনটির দিকে তাকিয়ে আছে দেশের মানুষ।
0 facebook: