17 February 2018

নতুন মোড় নিতে যাচ্ছে সিরিয়া যোদ্ধের


একটি নতুন দিকে মোড় নিয়েছে সিরিয়ার যুদ্ধগেল শনিবার সিরিয়া থেকে ছোড়া গোলার আঘাতে ইসরাইলের একটি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হয়েছেসিরিয়ার গত সাত বছরের গৃহযুদ্ধে ইসরাইল এর আগে কখনও জড়িত হয়নিএই প্রথম এ যুদ্ধে ইসরাইল তার বিমান হারালইসরাইলের সিরীয় সংকটে জড়িয়ে যাওয়া এবং বিমান হারানোর ঘটনা ঘটল এমন এক সময় যখন তুরস্ক সিরিয়ার অভ্যন্তরে কুর্দি অঞ্চলে সামরিক আগ্রাসন চালিয়েছেএক সময় ধারণা করা হয়েছিল, সিরিয়া ও ইরাক থেকে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সন্ত্রাসীদের উৎখাতের পর হয়তো সেখানে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবেকিন্তু সেখানে যুদ্ধ পুরোপুরি বন্ধ হয়েছে, তা বলা যাবে নামার্কিন ও রুশ বিমানবহর সেখানে সীমিত কিছু টার্গেটের ওপর বোমাবর্ষণ অব্যাহত রেখেছেসিরিয়ার যুদ্ধ এখন দেশটির সীমান্ত ছাড়িয়ে লেবানন পর্যন্ত বিস্তৃত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে

ইসরাইলের বিমান ধ্বংস হওয়ার পর ইসরাইল লেবাননের হিজবুল্লাহ জঙ্গিগোষ্ঠীর ওপর এবং একইসঙ্গে ইরানি অবস্থানের ওপর বিমান হামলার হুমকি দিয়েছেহিজবুল্লাহ গোষ্ঠী ইরান ও সিরিয়ার সমর্থনপুষ্টঅন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনী সিরিয়ার সেনাবাহিনীর একটি ঘাঁটিতে বিমান হামলা চালিয়েছেএর আগে সিরিয়া থেকে পাঠানো ইরানের একটি ড্রোন ইসরাইলের আকাশসীমায় প্রবেশ করলে সেটিকে ভূপাতিত করা হয়এর পরপরই সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানি লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা শুরু করে ইসরাইলএ হামলা চালাতে গিয়েই ইসরাইল তার বিমানটি হারায়উল্লেখ্য, একটি এফ-১৬ বিমানের দাম ১৪ দশমিক ৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার

সিরিয়া যুদ্ধে এখন কয়েকটি ফ্রন্টের জন্ম হয়েছেযুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, তুরস্ক, ইরান- সবারই সিরিয়ায় স্বার্থ রয়েছেএখন যোগ হল ইসরাইলযুদ্ধবিমান হারানোর পর ইসরাইল এটাকে হালকাভাবে নেবে, এটা মনে করার কোনো কারণ নেইতুরস্ক সিরিয়ার কুর্দি অধ্যুষিত আফরিন দখল করে নিয়েছেএর মধ্য দিয়ে তুরস্কের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের অবনতি ঘটেছেঅথচ দুটি দেশই ন্যাটোর সদস্যতুরস্কের সঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়ার সম্পর্কের উন্নতি হয়েছেরাশিয়া থেকে অস্ত্রও কিনছে তুরস্কএ অস্ত্র কেনার বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্র ভালো চোখে দেখছে নাএ পরিপ্রেক্ষিতে আফরিনে তুরস্কের সামরিক আগ্রাসন যুক্তরাষ্ট্রের ভালো না লাগারই কথাতুরস্কে সাম্প্রতিক সময়ে যেসব সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ড হয়েছে, তা কুর্দি সন্ত্রাসীদের কাজ বলে আংকারার অভিযোগকিন্তু সমস্যা হচ্ছে কুর্দি অঞ্চল মানবিজকে নিয়েমানবিজ সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলের একটি শহরএখানে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর একটি ক্ষুদ্র অংশের অবস্থান রয়েছে, যারা সেখানে উপদেষ্টাহিসেবে কর্মরততুরস্ক মানবিজ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেকিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ডের প্রধান জেনারেল জোসেফ ভোগেল সিএনএনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, তিনি সেনা প্রত্যাহারের ব্যাপারে আদৌ কোনো চিন্তাভাবনা করছেন নাতিনি এটাও স্পষ্ট করেছেন, পেন্টাগন সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সের প্রতি তাদের সমর্থন অব্যাহত রাখবেএ ফোর্স আফরিন শহরকে মুক্ত করার জন্য তুরস্কের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধকরছেফলে সিরিয়া সংকট নতুন একটি মোড় নিয়েছেআপাতদৃষ্টিতে আফরিন অঞ্চল থেকে কুর্দি বিদ্রোহী গোষ্ঠী ওয়াইপিজি উচ্ছেদ হলেও তারা পাল্টা লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছে

তুরস্কের সামরিক আগ্রাসন সিরিয়ার শান্তি প্রক্রিয়াকে আরও বিঘ্নিত করবেজেনেভায় জাতিসংঘের উদ্যোগে যে শান্তি আলোচনা চলে আসছিল, তা কোনো ফল বয়ে আনতে পারছিল নাঅন্যদিকে রাশিয়ার সোচিতে ২৯ জানুয়ারি যে শান্তি আলোচনার আহ্বান করা হয়েছিল, সিরিয়ার বিরোধী পক্ষ তাতে যোগ না দেয়ায় কার্যত সেই উদ্যোগও এখন প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছেফলে সঙ্গতকারণেই এ প্রশ্ন উঠেছে যে, সিরিয়ার রাজনীতি এখন কোন পথে? সিরিয়া থেকে আইএসের মতো জঙ্গিগোষ্ঠী একরকম উচ্ছেদ হয়েছেবিশেষ করে বছর দুয়েক আগে মার্কিন ও রুশ বিমান হামলার পর আইএস সিরিয়ায় দুর্বল হয়ে যায়তারা ২০১৪ সালের পর থেকে যেসব এলাকায় তাদের নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছিল এবং যেসব এলাকায় তারা তথাকথিত একটি খিলাফতপ্রতিষ্ঠা করেছিল, ওই বিমান হামলায় তা ধ্বংস হয়ে যায়ফলে আইএস সিরিয়া থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়কিন্তু রাশিয়ার বিমান হামলা নিয়ে প্রশ্ন ওঠেঅভিযোগ ওঠে, রাশিয়ার বিমান হামলায় ধ্বংস হয়ে গেছে আসাদবিরোধী বেশকিছু বিদ্রোহী গ্র, যারা আইএসের সঙ্গে জড়িত ছিল নাএই যখন পরিস্থিতি, তখন আফরিনে তুরস্ক সামরিক আগ্রাসন চালালতুরস্ক তার সামরিক আগ্রাসনের পক্ষে যুক্তি দেখিয়েছেতুরস্ক বলছে, তারা শহরটিকে সন্ত্রাসীদের করিডোর হিসেবে ব্যবহৃত হতে দেবে নাএ সামরিক আগ্রাসনের ঘটনা ন্যাটোভুক্ত যুক্তরাষ্ট্র ও তুরস্কের মধ্যে এক ধরনের আস্থাহীনতা সৃষ্টি করেছেতুরস্কের সামরিক আগ্রাসনের একদিন আগে সিরিয়ার তুরস্ক সীমান্তবর্তী এলাকায় কুর্দিদের নিয়ে শক্তিশালী সীমান্তরক্ষী বাহিনী গড়ে তোলার পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছিল যুক্তরাষ্ট্রকুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির (পিকেকে) নেতৃত্বেই যুক্তরাষ্ট্র এ পরিকল্পনা করেপিকেকে তুরস্কে নিষিদ্ধওয়াইপিজে হচ্ছে পিকেকের সামরিক শাখাসাম্প্রতিক সময়গুলোতে তুরস্কের অভ্যন্তরে যেসব সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটেছে, তার পেছনে পিকেকের হাত রয়েছে বলে তুরস্ক অভিযোগ করেছিল

আফরিনে তুরস্কের সামরিক অভিযানে সিরিয়ার জটিল রাজনৈতিক ও সামরিক সমীকরণ আরও বেশি জটিল হয়ে উঠেছেযুক্তরাষ্ট্রের মিত্র কুর্দি ওয়াইপিজি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে এ হামলা ট্রাম্প প্রশাসনকে ন্যাটোভুক্ত তুরস্কের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছেগত বছরের অক্টোবরে সিরিয়ার রাকা শহর থেকে আইএসকে উৎখাতে ওয়াইপিজির সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র সেখানে বিমান হামলা চালিয়েছিলকিন্তু তুরস্ক ওয়াইপিজি-যুক্তরাষ্ট্র সমঝোতাকে ভালোভাবে নেয়নিতুরস্কের ভয় ছিল কুর্দি বিদ্রোহীরা ভবিষ্যতে মার্কিন সহযোগিতা নিয়ে তুরস্ক, সিরিয়া ও ইরাকের অংশবিশেষ নিয়ে একটি স্বাধীন কুর্দি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করবেসিরিয়ার কুর্দিরা বেশিরভাগই দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বসবাস করেওয়াইপিজি ২০১২ সালে ইউফ্রেটিস নদীর পূর্বপাড়ের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর থেকেই তুরস্ক একধরনের অস্বস্তিতে ছিলবলা ভালো, ১৯৮৪ সাল থেকেই পিকেকে তুরস্কের বিরুদ্ধে গেরিলাযুদ্ধ চালিয়ে আসছেতুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান তাদের সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করেছেন
অনেকের স্মরণে থাকার কথা, কুর্দি শহর কোবানিকে আইএসের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ২০১৪ সালে সেখানে বিমান হামলা চালিয়েছিলমার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী টিলারসনের বক্তব্য যদি আমরা সত্য বলে ধরে নিই, তাহলে এটা স্পষ্ট যে যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ায় তাদের উপস্থিতি রাখতে চায়তারা সিরিয়ায় দুই হাজার সামরিক উপদেষ্টা পাঠাতে চায়আর তাই তারা ব্যবহার করতে চায় ওয়াইপিজিকেসমস্যাটা তৈরি হয়েছে এখানেতুরস্কের এটা পছন্দ নয়ওয়াইপিজি যদি শক্তিশালী হয়, তাহলে তা দেশটির (তুরস্ক) সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকিস্বরূপএক সময় ওয়াইপিজির সঙ্গে রাশিয়ার ভালো সম্পর্ক ছিলঅভিযোগ আছে, রাশিয়ার উপদেষ্টারা আফরিনে ওয়াইপিজির পক্ষে কাজ করতকিন্তু ওয়াইপিজি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি দ্বিতীয় ফ্রন্ট ওপেন করায় রাশিয়া কুর্দিদের ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয়সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, আফরিনে তুরস্কের সামরিক অভিযানের ব্যাপারে রাশিয়ার কোনো আপত্তি ছিল নাএখানে বৃহৎ শক্তি ও আঞ্চলিক শক্তিগুলোর একটি ভূমিকা লক্ষ করার মতোসিরিয়ার রাজনীতিকে কেন্দ্র করে স্পষ্টতই দুটি পক্ষ দাঁড়িয়ে গেছেএটা স্পষ্ট যে রাশিয়ার কারণেই আসাদ সরকার টিকে গেলএখানে রাশিয়া-ইরান-সিরিয়া একটি পক্ষআর যুক্তরাষ্ট্র আসাদবিরোধীঅর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান রাশিয়া-ইরান-সিরিয়া জোটের বিরুদ্ধেতুরস্ক তার জাতীয় স্বার্থের কারণেই রাশিয়া-ইরান-সিরিয়া শিবিরে অবস্থান করছে
তাহলে সিরিয়া সংকটের সমাধান হবে কোন পথে? সেখানে একটি সংবিধান প্রণয়ন করা অত্যন্ত জরুরিক্ষমতায় আসাদকে রাখা না রাখা নিয়ে একটি বিতর্কআছেসিরিয়ায় আসাদবিরোধী অনেক পক্ষরয়েছে, যারা একদিকে আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধকরছে, অন্যদিকে ক্ষমতা দখলের জন্য নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে লিপ্তদুটি বড় শক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়াও সিরিয়া সংকটে নিজেদের জড়িত করেছেজাতিসংঘের উদ্যোগে জেনেভায় একটি শান্তি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ে আসছেকিন্তু ওই সম্মেলনে এখন অব্দি একটি শান্তি ফর্মুলা উপস্থাপন করা সম্ভব হয়নিএকইসঙ্গে রাশিয়ার উদ্যোগে সোচিতে আসাদবিরোধীদের নিয়ে একটি শান্তি সম্মেলনের আয়োজন করে আসছে রাশিয়াকিন্তু সেখানেও কোনো সমাধান বের করা সম্ভব হয়নিসর্বশেষ সোচি বৈঠক বয়কট করেছে আসাদবিরোধী পক্ষ, যাদের কেউ কেউ জেনেভা সম্মেলনেও অংশ নিয়েছিলজেনেভা সম্মেলনে যোগ দিতে বিরোধী দলগুলোর উদ্যোগে একটি হাই নেগোসিয়েশন্স কমিটি’ (এইচএনসি) গঠিত হয়েছিলকিন্তু এ কমিটির মধ্যেও দ্বন্দ্ব আছেএইচএনসি সৌদি আরব সমর্থিততবে কুর্দিদের প্রতিনিধিত্বের প্রশ্নে এখানে দ্বন্দ্ব আছেবস্তুত ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর জন্ম হওয়া এইচএনসির কোনো ভূমিকা নেই

তাহলে সমাধানটা হবে কীভাবে? সিরিয়ার পরিস্থিতি সত্যিকার অর্থেই জটিল হয়ে পড়েছেএখানে কার্যত দুটি বড় শক্তির অবস্থান পরস্পরবিরোধীযুক্তরাষ্ট্র স্পষ্টতই কুর্দিদের নিয়ে সিরিয়ায় আসাদবিরোধী একটি ফ্রন্ট গড়ে তুলতে চায়অর্থাৎ আসাদবিরোধী একটি পক্ষকে সমর্থন দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ায় তার অবস্থান ধরে রাখতে চায়কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, এ ক্ষেত্রে তুরস্কের সমর্থন পাওয়া যাচ্ছে নাকুর্দিদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সহাবস্থান ও সমর্থন তুরস্ক ভালো চোখে দেখছে নাযুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি স্ট্র্যাটেজি হচ্ছে সিরিয়ায় ইরানি প্রভাব কমানোএ ক্ষেত্রে সুন্নি ধর্মাবলম্বী তুরস্ক যুক্তরাষ্ট্রের স্বাভাবিক মিত্র হতে পরতকিন্তু তা হয়নিবরং তুরস্ক ও ইরান একধরনের অ্যালায়েন্সে গেছেরাশিয়া আইএসবিরোধী অভিযানে যুক্তরাষ্ট্রের পাশে ছিলকিন্তু রাশিয়া চায় না আসাদ অপসারিত হোকআসাদকে রেখেই রাশিয়া একধরনের সমাধান চায়এ ব্যাপারে তুরস্কের আপত্তি থাকলেও বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে তুরস্ক আজ রাশিয়ার মিত্ররাশিয়া নিজ উদ্যোগে সিরিয়ায় একটি রাজনৈতিক সমাধান বের করতে চায়সেজন্যই সোচিতে সিরিয়ার সব দল ও মতের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি সম্মেলনের আহ্বান করেছিল, যাকে তারা বলছিল সিরিয়ান কংগ্রেস অব ন্যাশনাল ডায়ালগকিন্তু আগেই বলেছি, সিরিয়ার বিরোধীপক্ষ এ সম্মেলনে অংশ নেয়নিসিরিয়া সংকটের মূলে রয়েছে সব মত ও পথকে একটি কাঠামোর অধীনে আনতে না পারাসেখানে সুন্নি, শিয়া মতাবলম্বীসহ বিভিন্ন সামরিক গ্রপও রয়েছেআসাদ সমর্থকরাও একটি পক্ষকিছু ইসলামিক গ্রুপও রয়েছে, যারা আইএসের বিরোধিতা করেছিলসবাইকে নিয়ে একটি সমাধান বের করা সহজ কাজ নয়যদিও সোচিতে সবাই সিরিয়ার অখণ্ডতা রক্ষায় একমত হয়েছেনএকইসঙ্গে গণতান্ত্রিক ধারা ও নির্বাচনের প্রশ্নে সবাই একমত হয়েছেনতারপরও কথা থেকে যায়- বড় বিরোধী দলের অবর্তমানে এ সমঝোতা আদৌ কাজ করবে কিনা?

এই যখন পরিস্থিতি তখনই ইসরাইলি বিমান ভূপাতিত হওয়ার ঘটনা ঘটলইসরাইল এ ঘটনার জন্য ইরানকে দায়ী করেছেইসরাইলের যুদ্ধবাজ প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু হুমকির সুরে বলেছেন, তার দেশের বিরুদ্ধে এ ধরনের হুমকিযদি অব্যাহত থাকে, তাহলে তা কোনোভাবেই সহ্য করা হবে নানিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরাইল এ ঘটনার প্রতিশোধ হিসেবে সিরিয়া ও ইরানের কোনো কোনো প্রশিক্ষণ শিবিরে বিমান হামলা চালাতে পারেএর অর্থ হচ্ছে সিরিয়ায় একটি সর্বাÍক যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ালেবাননের ইন্সটিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যাফেয়ার্সের গবেষক সামি নাদেরের মতে, এ ঘটনার মধ্য দিয়ে ইরানের সঙ্গে ইসরাইলের যুদ্ধের আশঙ্কা বাড়লএতদিন দেশ দুটি লেবানন ও সিরিয়ায় একধরনের প্রক্সি যুদ্ধেনিয়োজিত ছিলএখন তারা সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে যেতে পারে

এ আশঙ্কা একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় নাইরানের ব্যাপারে ট্রাম্পের একধরনের নেতিবাচক ধারণা রয়েছেট্রাম্প জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি ইরানের সঙ্গে ৬ জাতি পারমাণবিক সমঝোতা মানেন নাইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্র তার চাপপ্রয়োগ অব্যাহত রেখেছেএখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি যোগ দিল ইসরাইলএর মধ্য দিয়ে সিরিয়ার সংকট নতুন একটি মাত্রা পেলতাতে করে সিরিয়ায় স্থিতিশীলতা ফিরে আসার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে আসছেসিরিয়ায় নতুন নতুন ফ্রন্টযুক্ত হচ্ছেএকদিকে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার স্বার্থ, অন্যদিকে তুরস্ক, ইরান ও ইসরাইলের নিজ নিজ স্বার্থসব মিলিয়ে দেশটি এখন বহুমাত্রিক স্বার্থের দ্বারা আষ্টেপৃষ্ঠে আবদ্ধগত বছর আইএস সেখান থেকে উৎখাত হয়েছে, কিন্তু যুদ্ধ সেখানে থামেনিআগামীতেও থামার সম্ভাবনা কম

ড. তারেক শামসুর রেহমান: প্রফেসর ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক


শেয়ার করুন

0 facebook: