স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ বাংলাদেশ থেকে
রোহিঙ্গাদের দ্রুত ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারকে ‘বোঝাতে’ সিঙ্গাপুরের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা। সোমবার সিঙ্গাপুরের
প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুংয়ের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশের সরকারপ্রধান এ আহ্বান জানান।
সিঙ্গাপুরের
প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় ইস্তানায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে শেখ হাসিনা একই কার্যালয়ে সিঙ্গাপুরের
প্রেসিডেন্ট হালিমা ইয়াকুবের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
এদিন দুপুরে
ইস্তানায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সম্মানে সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রীর দেয়া
এক মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন। পরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি
সিয়েন লুংয়ের উপস্থিতিতে দুটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। এগুলো হল- পাবলিক-প্রাইভেট অংশীদারিত্ব (পিপিপি) বিষয়ক
সমঝোতা স্মারক এবং এয়ার সার্ভিস ম্যানেজমেন্ট সংক্রান্ত কনফিডেন্সিয়াল সমঝোতা
স্মারক।
বৈঠকে
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেহেতু আসিয়ানের সভাপতি
রাষ্ট্র সিঙ্গাপুর তারা যেন মিয়ানমার সরকারকে বোঝায় এদের (বাংলাদেশে আশ্রিত
রোহিঙ্গাদের) ফিরিয়ে নেয়ার মধ্যেই ওই এলাকার স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়ন নির্ভর করছে। পররাষ্ট্র সচিব মুহম্মদ শহীদুল হক বৈঠকের পর সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন, এ সময় প্রেস সচিব ইহসানুল করিমও উপস্থিত ছিলেন। শহীদুল হক জানান, প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা ইস্যুতে বলেছেন, বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী রোহিঙ্গারা আমাদের ওপর বোঝা হিসেবে দেখা দিয়েছে এবং
বাংলাদেশ ও মিয়ানমার আলাপ-আলোচনা করে এদের দ্রুত প্রত্যাবাসনের বিষয়ে ঐকমত্যে
পৌঁছেছে। কিন্তু নানাবিধ কারণে
প্রক্রিয়াটি বিলম্বিত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী তাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনে সিঙ্গাপুরের
হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
শহীদুল হক আরও
বলেন, একই সঙ্গে কানেকটিভিটি বিষয় নিয়ে দু’নেতার আলাপ হয়েছে। দু’দেশের মধ্যে আকাশপথে যোগাযোগ
বৃদ্ধির ওপরও তারা আলাপ করেছেন এবং সমুদ্রগামী নাবিকদের জাহাজ নোঙরের পর সিঙ্গাপুর
বন্দরে ওঠানামায় যে সমস্যা হয় সেই বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা সিঙ্গাপুরের রাষ্ট্রপতি হালিমা ইয়াকুব এবং প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন
লুংকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। দু’দেশের সুবিধাজনক সময়ে এই সফর
আয়োজনের বিষয়ে সিঙ্গাপুরের রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী সম্মত হয়েছেন বলেও
পররাষ্ট্র সচিব জানান।
শহীদুল হক বলেন,
প্রধানমন্ত্রী যেসব খাতে সিঙ্গাপুরের ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগ
আহবান করেছেন, তার মধ্যে রয়েছে খাদ্য ও মৎস্য
প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং জ্বালানি খাত। সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুং বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক
অঞ্চলগুলোতে বিনিয়োগের বিষয়ে আগ্রহ ব্যক্ত করেন। প্রধানমন্ত্রী এ সময় তার সরকারের গভীর সমুদ্রবন্দর
নির্মাণের উদ্যোগের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে সিঙ্গাপুরের সহযেগিতা কামনা করেন।
সিঙ্গাপুরের
প্রেসিডেন্ট হালিমা ইয়াকুবের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে সিঙ্গাপুরের প্রেসিডেন্ট
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন বলেও পররাষ্ট্র সচিব
জানান।
এদিকে
মধ্যাহ্নভোজে অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য সুষ্ঠু
কর্মপরিবেশ প্রদানে সিঙ্গাপুর সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের
শ্রমিকদের জন্য সিঙ্গাপুর ক্রমেই একটি অন্যতম পছন্দীয় গন্তব্যস্থল হয়ে উঠছে। আমি আশা করি, সিঙ্গাপুর এই
শ্রমিকদের জন্য বরাবরের মতোই সুষ্ঠু কর্মপরিবেশের নিশ্চয়তা অব্যাহত রাখবে। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ এবং সিঙ্গাপুর তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্বেষায় একে অপরকে সহযোগিতা
করতে পারে। সিঙ্গাপুরের পুঁজি, উন্নত প্রযুক্তি এবং তা ব্যবহারের দক্ষতা রয়েছে। আর আমাদের রয়েছে বিপুল কর্মক্ষম জনশক্তি। যাদের একটি বড় অংশই বয়সে নবীন এবং শিক্ষিত, যেই দক্ষতাকে উভয়ের পারস্পরিক সুবিধার জন্য কাজে লাগানো
যেতে পারে।
অন্যদিকে
সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুং বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিঙ্গাপুর সফর দু’দেশের মধ্যে অংশীদারিত্বের সম্পর্ক জোরদার করার একটি চমৎকার সুযোগ। তিনি বলেন, বাংলাদেশের
বিকাশমান বাজারে জ্বালানি এবং বন্দর খাতে উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনা থাকায়
সিঙ্গাপুরভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোর এ ব্যাপারে আগ্রহ রয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, দু’দেশের মধ্যে বিমান চলাচল চুক্তি নবায়ন সিঙ্গাপুর ও
বাংলাদেশের মানুষকে আরও কাছে আনবে, ব্যবসা-বাণিজ্যের পথ সুগম করবে
এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।
এর আগে স্থানীয়
সময় বেলা ১১টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইস্তানায় পৌঁছলে সিঙ্গাপুরের
প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুং তাকে অভ্যর্থনা জানান। ইস্তানায় সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ও অবস্থিত। পরে সিঙ্গাপুরের সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল
প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার প্রদান করে। প্রধানমন্ত্রী সশস্ত্র বাহিনীর অভিবাদন গ্রহণ করেন ও গার্ড
পরিদর্শন করেন। এ সময় দু’দেশের জাতীয় সংগীত বাজানো হয়। এরপর প্রধানমন্ত্রী সিঙ্গাপুরের প্রেসিডেন্ট হালিমা
ইয়াকুবের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। শেখ হাসিনা রোববার বিকালে চার দিনের সরকারি সফরে সিঙ্গাপুর পৌঁছেন। সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুংয়ের আমন্ত্রণে
তিনি এ সফর করছেন।
দুটি সমঝোতা
স্মারকে স্বাক্ষর : সিঙ্গাপুরের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় ইস্তানায়
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন
লুংয়ের উপস্থিতিতে দুটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন সচিব এসএম গোলাম ফারুক এবং
সিঙ্গাপুরের পরিবহন মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী সচিব তান গাই সেন উভয় দেশের এয়ার সার্ভিস
ম্যানেজমেন্ট সংক্রান্ত কনফিডেন্সিয়াল সমঝোতা স্মারকটি স্বাক্ষর করেন।
অন্যদিকে
প্রাইভেট পাবলিক পার্টনারশিপ অথরিটির (পিপিপিএ) সিইও সৈয়দ আফসর এইচ উদ্দিন এবং
সিঙ্গাপুরের আন্তর্জাতিক এন্টারপ্রাইজের সহকারী সিইও তান সুন কিম উভয় দেশের মধ্যে
স্বাক্ষরিত পাবলিক-প্রাইভেট অংশীদারিত্ব (পিপিপি) বিষয়ক অপর সমঝোতা স্মারকটিতে
স্বাক্ষর করেন। দ্য স্ট্রেইটস টাইমসে শেখ
হাসিনার একটি নিবন্ধ : সিঙ্গাপুরের সর্বোচ্চ বিক্রীত পত্রিকা দ্য স্ট্রেইটস
টাইমসে সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। ‘ক্রমবর্ধমান সম্পর্কের বন্ধনে জড়িয়ে আছে সিঙ্গাপুর ও
বাংলাদেশ’ শিরোনামে প্রকাশিত নিবন্ধে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন-
গত কয়েক দশকে সিঙ্গাপুরের যে বিস্ময়কর আর্থসামাজিক উন্নয়ন ঘটেছে ব্যক্তিগতভাবে আমি
তার প্রশংসা করি। বিগত ষাটের দশকে সিঙ্গাপুরের
মাথাপিছু মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন (জিডিপি) প্রতিবেশী অন্যান্য এশীয় দেশের মতোই ছিল। বর্তমানে সিঙ্গাপুর বিশ্বের অন্যতম সেরা ধনী দেশ। এটি সম্ভব হয়েছে সম্ভবত দেশটির বিচক্ষণ ও কঠোর
পরিশ্রমী জনগণ, রাজনৈতিক নেতাদের প্রজ্ঞা এবং
সর্বোপরি গণমুখী আর্থসামাজিক নীতির কারণে। মি. লি কুয়ান ইয়ের মতো বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিবুর রহমানেরও দেশকে শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করার স্বপ্ন ছিল। তার স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
মিয়ানমার থেকে
দশ লাখের অধিক রোহিঙ্গা পালিয়ে এসে আশ্রয় নেয়ায় বাংলাদেশকে কিছু অপ্রত্যাশিত সংকট
মোকাবেলা করতে হচ্ছে। আমি রোহিঙ্গা সংকট নিরসনের
উপায় খুঁজে বের করতে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করার জন্য আসিয়ানের বর্তমান চেয়ার
হিসেবে ভূমিকা রাখতে সিঙ্গাপুরের নেতৃত্বের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রীর
সিঙ্গাপুর বন্দর পরিদর্শন : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ততম
বাণিজ্য বন্দর পোর্ট অব সিঙ্গাপুর পরিদর্শন করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সেক্রেটারি ইহসানুল করিম বলেন,
প্রধানমন্ত্রী সোমবার দুপুরে পোর্ট অব সিঙ্গাপুর পরিদর্শন ও
এর স্বয়ংক্রিয় কর্মকাণ্ড প্রত্যক্ষ করেন।
খবর বিভাগঃ
জাতীয়
0 facebook: