স্বদেশবার্তা
ডেস্কঃ ভারতের বিজেপিশাসিত ঝাড়খন্ডে স্বঘোষিত গো-রক্ষকদের নৃশংস আক্রমণে
চিরাগউদ্দিন আনসারি (৩৫) ও মুর্তজা আনসারি (৩০) দু’জন মুসলিম যুবক নিহত হয়েছে। গত (বুধবার)
সকাল ৯ টা নাগাদ ওই ঘটনা ঘটে।
ঝাড়খন্ডের
গোড্ডা জেলার সংশ্লিষ্ট এলাকার ইসলামবিদ্বেষী উগ্রপন্থী হিন্দু গ্রামবাসীরা তাদের বিরুদ্ধে কথিত মোষ চুরির অভিযোগ তুলে হত্যা করে ফেলে। হিন্দুদের দাবি, তারা
১৩টি মোষ চুরি করে পালানোর সময় গ্রামবাসীদের হাতে ধরা পড়ে। কিন্তু নিহত নিরিহ এইসব সংখ্যালঘু মুসলিমদের পরিবার তাদের
বিরুদ্ধে করা কথিত পশু চুরির অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়ে এটি ‘পরিকল্পনামাফিক
ষড়যন্ত্রের ফল’ বলে
মন্তব্য করেছেন।
নিহত
মুর্তজা আনসারির বাবা হালিম আনসারি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এটা পুরোনো শত্রুতার ঘটনা। আমার ছেলেকে ধোঁকা
দিয়ে গ্রামে ডেকে নিয়ে গিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এটা কী ধরণের আইন যে, ছেলেকে
প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যা করা হল?
ও পশু চোর নয়,
বরং পশুর ব্যবসা করতো। এখন আমি তার ছোট ছোট তিন সন্তানকে কী বলব? তারা
তার বাবার পথ চেয়ে আছে।’
স্থানীয়
কংগ্রেস নেতা ও সাবেক জেলা সভাপতি দীপিকা পাণ্ডে বলেন, ‘এটা ঈদের
সামনে অশান্তি ছড়ানোর ষড়যন্ত্র। যখনই রাম মাধব ঝাড়খণ্ডে আসেন তখনই এধরণের কোনো না কোনো
ঘটনা ঘটে। আসলে বিজেপি সরকারের আমলে সংখ্যালঘুদের সঙ্গে সুবিচার করা হচ্ছে না। ওই ঘটনার
নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া উচিত।’
অন্যদিকে, বিজেপি’র জেলা
সভাপতি ইসলামবিদ্বেষী উগ্রপন্থী হিন্দু নেতা রাজেশ ঝা’র
দাবি নিহত মুসলিমরা পশু চোর ছিল। এ নিয়ে রাজনীতি করা উচিত নয়।
সংশ্লিষ্ট
এলাকার ইসলামবিদ্বেষী উগ্রপন্থী হিন্দুরা ওই দু’জনকে
গণপিটুনি দিয়ে এলোপাথাড়ি কিল-চড়-লাথি-ঘুষি মারে এবং নৃশংসভাবে বাঁশ ও লাঠি বেধড়ক
মারধর করে। সংজ্ঞাহীন অবস্থাতেও একজনকে বাঁশে বেঁধে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যেয়ে মারধর করা
হয়। ঘটনাস্থলেই ওই দুই যুবকের মৃত্যু হয়।
জেলা
পুলিশ কর্মকর্তা রাজীব রঞ্জন সিং বলেন, গ্রামবাসীরা গরু চোর সন্দেহে দু’জনকে
ধরে গণপিটুনি দিলে তাদের মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় সন্দেহভাজন চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
মুহম্মদ আব্দুস সামাদ |
এ ব্যাপারে
‘অ্যাসোসিয়েশন
ফর প্রোটেকশন অফ সিভিল রাইটস’
(এপিসিআর)-এর পশ্চিমবঙ্গের আহ্বায়ক মুহাম্মদ আব্দুস সামাদ আজ (বৃহস্পতিবার)
রেডিও তেহরানকে বলেন, ‘পশু
ব্যবসায়ী তো অনেকেই আছেন। তারা গবাদি পশুর ব্যবসা করে বলে তাদেরকে যেভাবে প্রকাশ্য
দিবালোকে হত্যা করছে, এটা
একটা চক্রান্ত। যদি চুরি করার অপরাধও থাকে তাহলে তা প্রশাসন বুঝবে। শাস্তিস্বরূপ হত্যা করা তো কোনো
জনসাধারণ করতে পারে না। প্রশাসনের আইনানুগ পদ্ধতিতে বিচার ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে তার
শাস্তি হবে।’
তিনি
বলেন, ‘প্রতিনিয়ত
ভারতের বিভিন্ন জায়গায় গবাদি পশুর নাম করে, গরু হত্যার নাম করে, গরু চুরির
নাম করে সংখ্যালঘু নিরীহ মুসলমানদের উপরে অত্যাচার চালানো হচ্ছে। আমরা মনে করি প্রশাসন এ দিকে
তীক্ষ্ণ নজর রাখুক এবং যারা এভাবে হত্যা করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিক।
খবর বিভাগঃ
আন্তর্জাতিক
ধর্মীয় বিদ্বেষ
ভারত
0 facebook: