![]() |
আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ তুরস্কের ইতিহাসে সবচেয়ে কঠিন ও সম্ভবত সবেচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হতে যাচ্ছে আজ। বর্তমান প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগানকে দ্বিতীয় মেয়াদে আরো পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতা দেয়া হবে কিনা সে বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিবেন দেশটির ভোটাররা।
রবিবার স্থানীয় সময় সকাল ৮টায় শুরু হয়ে টানা বিকেল ৫টা পর্যন্ত এই ভোটগ্রহণ চলবে।
নির্বাচনে এরদোগান জয়লাভ করলে তিনি ব্যাপক ক্ষমতার অধিকারী হবেন, যেটি সমালোচকরা বলছেন যে এটি গণতান্ত্রিক শাসনকে দুর্বল করবে।
যাইহোক, এরদোগানকে বামপন্থী রিপাবলিকান পিপলস পার্টির (সিএইচপি) মুহাররেম ইনসকে মোকাবেলা করতে হবে। নির্বাচনে তিনি এরদোগানের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িছেন।
এই নির্বাচন মূলত ২০১৯ সালের নভেম্বর অনুষ্ঠিত হওয়ার জন্য নির্ধারিত ছিল কিন্তু এরদোগান এক ঘোষণায় তা এগিয়ে আনেন।
প্রার্থীরা একে অপরের সম্পর্কে কী বলেছেন?
নির্বাচনের প্রচারণার শেষ দিনে শনিবার বিশাল সমাবেশ করেছেন প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান ও তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী মুহাররেম ইনস। সমাবেশে দুই নেতাই একে অপরকে আক্রমণ করে বক্তৃতা করেন।
ইনন জনগনের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘যদি এরদোগান নির্বাচনে জয়লাভ করেন, তবে তুর্কি মুদ্রা দুর্বল থেকে যাবে, দ্রব্যমূল্যের উচ্চ হার বৃদ্ধি পারে এবং ৩.৫ মিলিয়ন সিরিয়ান শরণার্থীদের বিষয়টি অমিমাংসিত থেকে যাবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘কিন্তু যদি ইনস জিতে, তবে তা কেবল ইনসের জয় হবে না। এটি হবে ৮০ মিলিয়ন জনগণের জয়! জয় হবে তুরস্কের।’
তিনি বলেন, ‘আগামীকাল আমাদের একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন তুরস্ক থাকবে। আগামীকাল সব বৈষম্যের অবসান ঘটবে।’
নির্বাচিত হলে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জরুরি অবস্থা তুলে নেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
অন্যদিকে, ইস্তাম্বুলের সমাবেশে এরদোগান বলেন, ‘আল্লাহ চাইলে আগামীকাল (রবিবার) সন্ধ্যায় আমরা একত্রে এই অভিজ্ঞতার উদযাপন করতে সক্ষম হবো। নির্বাচেন আমরা তাদের (বিরোধীদের) অটোমান খাপ্পর দিতে যাচ্ছি।’
এসময় তিনি জনতার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘আপনারা কি বড় বিজয়ের প্রস্তুত?’
সুষ্ঠুভাবে ভোটগণনা নিশ্চিত করতে রবিবার তুর্কি নির্বাচন কমিশনের সদরদপ্তরে ক্যাম্প স্থাপনের জন্য প্রতিজ্ঞা করেছেন বিরোধী নেতা ইনস। তার এই প্রতিজ্ঞার সমালোচনা করে এরদোগান বলেন, ‘মুহাররেম আপনাকে বলছি, আমরা একটি আইনি রাষ্ট্রে বসবাস করছি। ভোটের নিরাপত্তার জন্য সকল পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’
সাবেক পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক ১৬ বছর ধরে এমপি পদে থাকলেও রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রের কোনো সংস্থা পরিচালনার অভিজ্ঞতা তার নেই।
এ সম্পর্কে এরদোগান বলেন, ‘পদার্থবিজ্ঞান শিক্ষক হওয়া আর রাষ্ট্র পরিচালনা করা এক জিনিস নয়। প্রেসিডেন্টের অভিজ্ঞতার প্রয়োজন। একজন প্রেসিডেন্টের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের স্বীকৃতি প্রয়োজন রয়েছে।’
বিশ্লেষণ: তুরস্কের শক্তিশালী প্রেসিডেন্ট জন্য বিচারের দিন
তুরস্ক থেকে বিবিসির প্রতিবেদক মার্ক লোয়েন জানান, আধুনিক ইতিহাসে দেশটি কখনোই এতটা বিভক্ত হয়নি। একই সঙ্গে রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগানও কখনোই এতটা কঠিন নির্বাচনী লড়াইয়ের মুখোমুখি হননি।
আধুনিক তুরস্কের প্রতিষ্ঠাতা কামাল আতাতুর্কের পর দেশটির সবচেয়ে শক্তিশালী নেতা হচ্ছেন এরদোগান। এই নির্বাচনে তিনি বিজয়ী হলে আরো শক্তিশালী হয়ে উঠবেন।
![]() |
প্রধানমন্ত্রীর পদ বিলপ্ত হয়ে যাবে এবং পার্লামেন্টেরন ক্ষমতা হ্রাস পাবে। কিন্তু যদি তিনি প্রেসিডেন্সি ভোটে ৫০ শতাংশ ভোট পেতে ব্যর্থ হন, তাহলে তাকে দ্বিতীয় রাউন্ডে মুহাররেম ইনসকে মোকাবেলা করতে হতে পারে।
পার্লামেন্টারি নির্বাচনে একত্রিত বিরোধী দল আশা করছেন যে তারা পার্লামেন্টে এরদোগানের সংখ্যাগরিষ্ঠতা কেড়ে নিতে সক্ষম হবেন। অন্যদিকে, এরদোগানের সমর্থকরা আশা করছেন আজকের দিনটি এরদোগানের রায়ের দিবস।
কিভাবে ভোটদান প্রক্রিয়া চলবে?
প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট নির্বাচনে প্রায় পাঁচ কোটি ৬৩ লাখ ২২ হাজার ৬৩২ ভোটার তাদের রায় প্রদান করবেন। স্থানীয় সময় সকাল ৮টায় শুরু হয়ে ভোটগ্রহণ চলবে বিকাল ৫টা পর্যন্ত। ভোটাররা আইডি কার্ড বা যে কোনও শনাক্তকরণ নথি দেখিয়ে ভোট দিতে পারবেন।
নির্বাচনে মোট আটটি রাজনৈতিক দল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ছয়জন। তবে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বর্তমান প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেব এরদোয়ান এবং সিএইচপির প্রার্থী মুহাররেম ইনসে’র মধ্যে।
![]() |
ছয় প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হচ্ছেন রিসেপ তাইয়্যেব এরদোয়ান, মুহাররেম ইনস, ইয়ি বা গুড পার্টির মেরাল আকসেনার, কুর্দিদের সমর্থিত এইচডিপি’র সালাদিন দেমিরতাজ, ভাতান পার্টির ডোগু পেরিনজেক এবং সাদাত পার্টির তেমেল কারামুল্লাউলু।
পার্লামেন্ট নির্বাচনে জোটগতভাবে অংশ নিচ্ছে বড় দুই দল। এরদোয়ানের একেপি’র নেতৃত্বাধীন জোটে রয়েছে একে পার্টি, জাতীয়তাবাদী দল এমএইচপি।
কামাল আতাতুর্কের দল সিএইচপি’র জোটে রয়েছে সিএইচপি, ইয়ি পার্টি, ইসলামপন্থী দল সাদাত পার্টি এবং ডেমোক্র্যাটিক পার্টি।
নির্বাচনে কোনো প্রার্থী যদি ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পান, সেক্ষেত্রে তিনি সরাসরি নির্বাচিত হবেন। অন্যদিকে, কোনো প্রার্থী যদি তা অর্জনে ব্যর্থ হন, তবে শীর্ষ দুই প্রতিদ্বন্দ্বিকে দ্বিতীয় রাউন্ডে মোকাবেলা করতে হবে; আগামী ৮ জুলাই অনুষ্ঠিত হবে।
এরদোগান আশা করছেন যে তিনি প্রথম রাউন্ডেই জয়লাভ করতে সক্ষম হবেন। পার্লামেন্টরি নির্বাচনে তার একে পার্টি ৬০০ আসনের অ্যাসেম্বলিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখতে কঠিন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হবেন।
![]() |
নির্বাচনে কুর্দিপন্থী পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টির (এইচডিপি) ফলাফল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তুর্কি পার্লামেন্টে প্রবেশের জন্য ১০ শতাংশ ভোট পাওয়া বাধ্যতামূলক। যদি এইচডিপি প্রয়োজনীয় ১০ শতাংশ ভোট পেতে সক্ষম হয়, তাহলে এটি একে পার্টির আধিপত্য বজায় রাখার জন্য কঠিন হবে।
অন্যদিকে, তা অর্জনে ব্যর্থ হলে, এরদোগানের দল লাভবান হতে পারে। কেননা, তখন এইচডিপি’র ভোট দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা দলের পক্ষে চলে যাবে।
প্রধান নির্বাচনী ইস্যুগুলো কি?
সবচেয়ে বড় ইস্যু হচ্ছে অর্থনীতি। তুর্কি লিরার মুদ্রাস্ফীতি প্রায় ১১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এটি সাধারণ মানুষ জীবনমানকে অনেকটা সঙ্কুচিত করেছে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হচ্ছে সন্ত্রাসবাদ। সাম্প্রতিক সময়ে তুরস্ক কুর্দি ও ইসলামিক স্টেট জঙ্গিদের দ্বারা বারবার আক্রমণের শিকার হয়েছে। নির্বাচনে এটি একটি বড় ফ্যাক্টর।
যাইহোক, দেশটির জনগণ কয়েকভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। তাদের একটি হচ্ছে- কুর্দি ও জাতীয়তাবাদী পন্থী, অন্যটি হচ্ছে- ধর্মীয় এবং ধর্মনিরপেক্ষ মানুষ।
বিবিসি অবলম্বনে
খবর বিভাগঃ
আন্তর্জাতিক
0 facebook: