![]() |
মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে দোয়া বা প্রার্থনা করার তিনটি পর্যায় রয়েছেঃ
২. মহান আল্লাহ পাকের কাছে ক্ষমা কামনা করা।
৩. মহান আল্লাহ পাকের কাছে দুনিয়ার কিছু চাওয়া। সর্বশেষ মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে দুনিয়ার যে-কোনো প্রয়োজনের জন্য দোয়া করা।
যেমন বিপদাপদ থেকে নিরাপত্তা কামনা করা, সুস্বাস্থ্য চাওয়া ইত্যাদি। এ সবকিছুই আমাদের দুনিয়ার জীবনে প্রয়োজনীয়। প্রতিটি মাধ্যমেই আমরা মহান আল্লাহর কাছে চাইতে পারি। সবগুলোই আমাদের প্রয়োজন হয়। দুনিয়ায় বেঁচে থাকতে হলে আমাদের সুস্বাস্থ্য, ধনসম্পদ, সন্তানসন্ততি সবই দরকার হয়। আবার এই সবকিছু পাওয়ার পর বান্দা হিসেবে মহান আল্লাহর প্রশংসা করতেই হবে। সেই সঙ্গে এসব নিয়ে চলাফেরা করতে হলে কিছুটা ভুলভ্রান্তি হয়ে গেলে সেজন্য তো ক্ষমা, দয়া এবং অনুগ্রহের প্রয়োজন অবশ্যই আছে।
বান্দা হিসেবে মহান আল্লাহর সাহায্য একান্ত প্রয়োজন। তাছাড়া সবধরনের সাহায্য, কামনাবাসনা, ক্ষমা প্রার্থনা ইত্যাদি সবকিছুর জন্যই মহান আল্লাহকে ডাকতে এবং আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে বলেছেন আল্লাহ নিজেই।
সেই সঙ্গে তাঁকে ডাকলে সাড়া দেওয়ার অঙ্গীকারও করেছেন তিনি। দোয়া করলে দোয়া কবুলের ওয়াদা করেছেন। পবিত্র কুরআন শরীফে তিনি বলেছেন ‘আর তোমাদের রব বলেছেন, তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব। নিশ্চয়ই যারা অহংকার করে আমার ইবাদত থেকে বিমুখ থাকে, তারা অচিরেই লাঞ্ছিত অবস্থায় জাহান্নামে প্রবেশ করবে।’ (সূরা মোমিন : ৬০)।
নবী করিম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনার উম্মতের বিশেষ সম্মানের কারণে তাদের দোয়া করতে বলা হয়েছে এবং তা কবুল করার ওয়াদা করা হয়েছে। হজরত কাব আহবার রদ্বিয়াল্লাহু তায়াল আনিহুর থেকে বর্ণিত আছে, আগেকার যুগে শুধু নবীদের বলা হতো দোয়া করার জন্য। তখন নবীরা দোয়া করতেন এবং তাঁদের দোয়া কবুল করা হতো। মহার আল্লাহ তায়ালা কেবল নবীদেরই বলতেন, ‘দোয়া করুন, আমি আপনার দোয়া কবুল করব।’ এখন এই আদেশ সবার জন্য ব্যাপক করে দেওয়া হয়েছে। এটা নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উম্মতের একক বিশেষ বৈশিষ্ট্য।
এই আয়াতের ব্যাখ্যা সম্পর্কে পবিত্র হাদিস শরীফে এসেছে হজরত নোমান বিন বাশির রাদিয়্যল্লাহু তাহালা থেকে বর্ণিত, নবি করিম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, দোয়া সবটাই ইবাদত। এরপর তিনি এই আয়াতটি পড়েছেন ‘আর তোমাদের রব বলেছেন, তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব। নিশ্চয়ই যারা অহংকার করে আমার ইবাদত থেকে বিমুখ থাকে, তারা অচিরেই লাঞ্ছিত অবস্থায় জাহান্নামে প্রবেশ করবে।’ (সূরা মোমিন : ৬০)।
পবিত্র হাদিস শরীফে দোয়াকে ইবাদত বলা হয়েছে। পবিত্র কুরআন শরীফের এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বিখ্যাত তাফসিরগ্রন্থ ‘তাফসিরে মাজহারি’তে বলা হয়েছে, এই হাদিসের অর্থ এটা হতে পারে, ইবাদতের নামই দোয়া। কিংবা প্রত্যেক ইবাদতই দোয়া। কারণ ইবাদত বলা হয় কারও সামনে নিজের চূড়ান্ত দীনতাহীনতা প্রকাশ করাকে। আর নিজেকে কারও মুখাপেক্ষী মনে করে, তার সামনে সওয়ালের হাত প্রসারিত করা সবচেয়ে বড় হীনতা, যা ইবাদতের অর্থ। এভাবে প্রত্যেক ইবাদতের সারমর্ম তো এই, মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা লাভ, জান্নাত কামনা, ইহকাল এবং পরকালে নিরাপত্তা প্রার্থনা করা। প্রকৃত অর্থেই একজন মানুষ যখন বিনীতভাবে মহান আল্লাহর কাছে নিজের অভাবের কথা জানায়, নিজের অক্ষমতা প্রকাশ করে এবং চাহিদার কথা বলে আল্লাহর অনুগ্রহে নিজের প্রয়োজন পূরণের আশা করে, একইসঙ্গে এই বিশ্বাস রাখে যে, মহান আল্লাহ তায়ালাই দাতা এবং দয়ালু, তিনি সবকিছু দিতে পারেন, তিনি সর্বশক্তিমান এবং সর্বশ্রেষ্ঠ দাতা, তিনি যত ইচ্ছা দিতে পারেন তিনি দিতে এবং মানুষের সব প্রয়োজন পূরণে সম্পূর্ণ সক্ষম, মানুষ তাঁর দানের মুখাপেক্ষী, তিনিই অদ্বিতীয়, অমুখাপেক্ষী, তিনি কারও মুখাপেক্ষী নন বরং সব সৃষ্টিই তাঁর মুখাপেক্ষী, এই বিশ্বাস নিয়ে একজন মানুষ যখন মহান আল্লাহর কাছে দু-হাত প্রসারিত করে, তখন তার দোয়া সবটাই ইবাদত হয়ে যায়।
নবীজি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, দোয়াই ইবাদত। কোথাও বলেছেন, দোয়া ইবাদতের মগজ। আবার বলেছেন, দোয়া মোমিনের হাতিয়ারস্বরূপ। সবচেয়ে বড় কারণ, দোয়ার মাধ্যমে মানুষের বড় বড় বিপদ দূর হয়ে যায়। চিরশত্রু শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে বেঁচে থাকা যায়। মানুষের দুশমনি থেকে নিরাপদ থাকা যায়। সর্বোপরি জালেম বা অত্যাচারী মানুষের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তাছাড়া মানুষ কল্যাণ-মঙ্গলের জন্য সারাজীবন যে চেষ্টা-প্রচেষ্টা চালিয়ে যায়, দুঃখকষ্ট এবং বিপদাপদ থেকে নিরাপদ থাকার জন্য যতরকম সাধনা করে এতসব আয়োজনের মধ্যে সবচেয়ে সহজ, সফল এবং কার্যকর ব্যবস্থা হলো দোয়া করা।
যে-কেউ দোয়া করতে পারে। একাকী, নিভৃতে কিংবা সবাইকে নিয়েও দোয়া করা যায়। ছোট-বড়, ধনী-গরিব, বৃদ্ধ-যুবক সবাই দোয়া করতে পারবে। তাই তো হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়্যাআল্লাহু তাহালা বলেন, ‘সবচেয়ে বড় কৃপণ সেই ব্যক্তি, যে সালাম দিতে কৃপণতা করে। আর সবচেয়ে বড় অক্ষম ব্যক্তি সেই লোক, যে দোয়া করতে অক্ষম।’ (মাজমাউজ জাওয়াইদ)।
দোয়া করতে খুব করে আয়োজনও করতে হয় না। শত্রুর হাত থেকে বাঁচার জন্য, বিপদাপদ থেকে নিরাপদ থাকার জন্য, ছোট-বড় সব প্রয়োজন পূরণের জন্য দোয়া করা হয় খুবই কম। অথচ সব ক্ষেত্রেই দোয়া করতে বলা হয়েছে। মহান আল্লাহর কাছে চাইতে বলা হয়েছে। কারণ দোয়াই এসব বিপদ থেকে নিরাপদ রাখতে পারে। আল্লাহর অনুগ্রহে দোয়ার মাধ্যমেই সব সমস্যার সমাধান হতে পারে খুব সহজেই। এসব কারণেই দোয়াকে মোমিনের হাতিয়ার বলা হয়েছে।
দোয়া মহান আল্লাহর কাছে নিজের অক্ষমতা এবং হীনতা প্রকাশের সবচেয়ে বড় মাধ্যম। মহান আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণের শ্রেষ্ঠ উপায়। মহান আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব এবং বড়ত্বের স্বীকৃতি এবং তাঁর করুণা কামনা করা। নিজের অপারগতা প্রকাশ করে তাঁর কাছে দোয়া করা তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের এক উত্তম পন্থা। আল্লাহ তায়ালা দোয়া করার জন্য বলেছেন, দোয়া কবুলের ওয়াদা করেছেন। আর নবীজি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবসময় দোয়া করার জন্য উৎসাহিত করেছেন। পবিত্র হাদিস শরীফে তিনি বলেছেন, ‘যার জন্য দোয়ার দরজা খুলে দেওয়া হয়েছে, তার জন্য রহমতের দরজা খুলে দেওয়া হয়েছে।’ (তিরমিজি)
মহান আল্লাহ তায়ালা মানুষের খুব কাছে থাকেন। মানুষ তাকে ডাকলে তিনি সে ডাকে সাড়া দেন। বর্ণিত আয়াত এবং হাদিসে এটাই দিবালোকের মতো স্পষ্ট। মানুষ আল্লাহর সম্পর্কে যেমন ধারণা করবে, আল্লাহ তার সঙ্গে তেমনই আচরণ করেন। বান্দা যদি ভালো ধারণা করে, তাহলে তিনি তাঁর বান্দার সঙ্গে ভালো আচরণ করেন। আল্লাহকে স্মরণ করলে তিনিও তাকে স্মরণ করেন। মানুষ যখন আল্লাহর কথা, আল্লাহর নেয়ামতের কথা প্রশংসা ও শোকরানা, তাঁর পবিত্রতা, বড়ত্ব এবং মহত্বের কথা আলোচনা করে, তখন তিনিও তার কথা আলোচনা করেন এর চেয়ে ভালো মজলিসে। অর্থাৎ সেই বান্দার কথা আলোচনা করেন ফেরেশতাদের মজলিসে। তিনি তাদের মাঝে বান্দার কথা আলোচনা করেন এবং তাকে নিয়ে গর্ব করেন। তাই আমাদের উচিত আল্লাহর সম্পর্কে ভালো ধারণা পোষণ করা এবং ভালো ধারণা ও তাঁকে স্মরণ করার মাধ্যমই তাঁর কাছ থেকে পেতে পারি দুনিয়া ও আখেরাতের সার্বিক কল্যাণ।
খবর বিভাগঃ
ইসলাম
ধর্ম ও জীবন
0 facebook: