আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির বুরারি এলাকার একটি বাড়িতে গত রোববার ঝুলন্ত ও চোখ-মুখ বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করা একই পরিবারের ১১ জনের চাঞ্চল্যকর মৃত্যুকে নিয়ে রহস্য ঘনিয়ে উঠছে।
‘মানুষের শরীর ক্ষণস্থায়ী। চোখ আর মুখ ঢেকে ভয়কে জয় করা যায়’ সংবাদ সংস্থা পিটিআইর দেওয়া তথ্য অনুসারে বাড়িটিতে এ রকম কথা লেখা চিরকুট খুঁজে পাওয়া গেছে।
তদন্ত কর্মকর্তারা বাড়িটিতে খুঁজে পাওয়া আরো বেশ কিছু চিরকুটের ওপর ভিত্তি করে মনে করছেন, আধ্যাত্মিক ও রহস্যময় কোনো রীতির চর্চায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ঘটানো এটি কোনো গণআত্মহত্যা হতে পারে।
নিহত ১১ জনের মধ্যে ৭৫ বছর বয়সী বৃদ্ধা নারায়াণ দেবী, তাঁর মেয়ে, দুই ছেলে, ছেলেদের স্ত্রী এবং ৩৩ থেকে ১৫ বছর বয়সী ৫ নাতি-নাতনি ছিল। একমাত্র নারায়ণ দেবী ছাড়া বাকিদের সবাইকে ঘরের ছাদ থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
ডেপুটি পুলিশ কমিশনার অলক কুমার বলেন, ‘হাত ও পা কীভাবে বাঁধতে হবে তেমন নির্দেশনা লেখা বেশ কিছু চিরকুট আমরা খুঁজে পেয়েছি। উদ্ধার করা ১০টি মৃতদেহ সেই নির্দেশনার সাথে মিল রেখেই বাঁধা হয়েছিল।’
পুলিশ আরো জানিয়েছে, চিরকুটগুলো থেকে মনে হচ্ছে, এ রকম কিছু চর্চার ভেতর দিয়ে ‘মোক্ষ’ লাভ করা যায় এমন কিছুকে উৎসাহিত করা হয়েছে। বেশ কয়েকবার ‘মোক্ষ’ শব্দের উল্লেখ আছে।
প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভাটিয়া পরিবার বলে পরিচিত মৃত এই পরিবারের লোকজন ধর্মপ্রাণ ছিলেন, কিন্তু তাঁরা এ ধরনের পূজা অর্চনা করা কোনো গোষ্ঠীর সদস্য ছিলেন কি না, তেমন কিছু তাঁরা জানেন না। এটি আত্মহত্যা হলে তার কারণ আধ্যাত্মিক না হয়ে অন্য কিছুও তো হতে পারে! কিংবা আত্মহত্যা না হয়ে হতে পারে এটি কোনো খুনের ঘটনাও!
নারায়াণ দেবীর মেয়ে সুজাতা ভাটিয়া পিটিআইকে জানিয়েছেন এটি আত্মহত্যা নয়, খুন। তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করতে পারছি না তারা আত্মহত্যা করেছে। সবাই তো খুব সুখে ছিল। কেউ না কেউ আমার পরিবারের লোকজনকে মেরে ফেলেছে। পুলিশের উচিত তাদের খুঁজে বের করা।’
পুলিশ জানায়, বাড়িটিতে বাইরে থেকে কারো জোর করে ভেতরে ঢোকার কোনো চিহ্ন নেই। ঘরের কোনো কিছুই নাড়াচাড়া করা হয়নি। নারীদের পরিহিত সোনার গহনাতেও কেউ হাত দেয়নি। মোবাইল ফোনসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি সব যথাস্থানেই ছিল।
একমাত্র জীবিত প্রাণী বাড়িটির পোষা কুকুর জ্যাকি, তাকে ঘটনার সময় বাড়ির চিলেকোঠায় আটকে রাখা হয়েছিল বলে জানা গেছে।
পিটিআই সংবাদ সংস্থা বলছে প্রাথমিক ময়নাতদন্তে আটজনের ঝুলে থাকার ফলে মৃত্যুর ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গেছে। প্রতিবেদন অনুসারে বৃদ্ধা নারায়াণ দেবীর মৃত্যু হয়েছে আংশিক ঝুলে থাকার ফলে। যদিও এটা স্পষ্ট নয় সে ক্ষেত্রে তাঁর গলায় কেন রশি ছিল না!
সারা ভারতজুড়ে হৈচৈ ফেলে দেওয়া এই শ্বাসরুদ্ধকর ঘটনার চূড়ান্ত প্রতিবেদন এখনো পাওয়া যায়নি।
খবর বিভাগঃ
আন্তর্জাতিক
0 facebook: