স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ বাড়ছে চালের
দাম অথচ এবার রেকর্ড পরিমাণ চাল উৎপন্ন হয়েছে। বোরো-আমন মিলিয়ে উৎপাদন ছাড়িয়েছে তিন কোটি টনের বেশি। তার ওপর গত এক বছরে প্রায় ৩৮ লাখ
টন চাল আমদানি হয়েছে। আমদানির প্রক্রিয়াধীন আছে আরো ৪৫ টন। বিশ্ববাজারেও চালের দাম এখন অনেক কম। গত এক মাসে কেজিতে ৪ টাকা দাম কমেছে ভারত ও
থাইল্যান্ডের বাজারে। কিন্তু সব তথ্য-উপাত্ত মিথ্যা প্রমাণ করে বাড়ছে ১৬ কোটি মানুষের প্রধান এ
খাদ্যপণ্যের দাম। এ নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে গরিব মানুষের। আর চালের দাম বাড়ায় প্রভাব পড়ছে অন্যান্য ব্যয়ের ওপর। বাজেটে চাল আমদানির ওপর ২৮ শতাংশ
শুল্ক পুনর্বহালে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে অজুহাত দেয়া হলেও যৌক্তিক কারণ
খুঁজে পাচ্ছেন না বাজার বিশ্লেষকেরা।
বিভিন্ন
পর্যায়ের পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের নতুন বাজেটে আমদানি শুল্ক পুনর্বহালের পর
থেকেই আমদানিকারক ও মিল মালিকেরা চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। সাথে যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি প্রজ্ঞাপন। গত ২৬ জুন জারি করা ওই প্রজ্ঞাপনে
বলা হয়, কোনো অবস্থায়ই শূন্য মার্জিনে অর্থাৎ বাকিতে চাল
আমদানির এলসি (ঋণপত্র) স্থাপন করা যাবে না। এতে আরো বলা হয়, ধান ও চাল
ব্যবসায়ীদের ঘূর্ণায়মান ঋণের েেত্র ৪৫ দিন পর অবশ্যই পুরো টাকা শোধ করতে হবে। আগে ৩০ দিনের মধ্যে ঋণ
সমন্বয়ের সুযোগ ছিল। ঋণপত্র খুলতে ব্যবসায়ীদের এখন ৪৫ দিন পর্যন্ত অপো করতে হবে। চাল আমদানি বাড়াতে ২০১৭ সালের
ডিসেম্বর পর্যন্ত বিনা মার্জিনে ঋণপত্র খোলার সুযোগ ছিল। এখন নগদ টাকায় ঋণপত্র খুলতে হবে ব্যবসায়ীদের।
চালের দাম অস্বাভাবিক
বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে খিলগাঁও বাজারের বিক্রেতা সোলায়মান নয়া দিগন্তকে বলেন,
বড় ব্যবসায়ীরা বলছেন, আগে চাল আমদানির ওপর কোনো শুল্ক ছিল না। এলসি খুলতে এত দিন কোনো টাকাই লাগত না। সামনে আমদানি হয়েছে, দামও কিছুটা সহনীয় ছিল। নতুন বাজেটে আমদানির ওপর ২৮ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। স্বাভাবিক কারণেই আমদানি প্রায় বন্ধ। সুযোগ বুঝে মিল মালিকেরা দাম
বাড়িয়ে দিয়েছেন। স্বাভাবিক কারণেই পাইকারি ও খুচরা বাজারে চালের দাম বাড়ছে। বাজেট ঘোষণার পর থেকেই চালের
দাম ধীরে ধীরে বাড়ছে জানিয়ে তিনি বলেন, এত দিন অনেকে
মনে করেছিলেন বাজেট পাসের আগে এ বিষয়ে কিছুটা হলেও সংশোধনী আনা হবে। কিন্তু সংশোধনী ছাড়াই বাজেট
পাস হওয়ায় নতুন করে দাম বেড়েছে কেজিতে তিন থেকে চার টাকা।
খুচরা বাজারে
গতকাল বৃহস্পতিবার মোটা স্বর্ণা চালের দাম ছিল প্রতি কেজি ৪২ থেকে ৪৫ টাকা;
যা গত সপ্তাহে ছিল ৩৮ থেকে ৪২। পাইজাম ৫০ থেকে ৫২ টাকায় বিক্রি হলেও আগের সপ্তাহে এই
চালের দাম ছিল ৪৮ থেকে ৫০ টাকা। মিনিকেট ৬০ থেকে ৬২ টাকা এবং নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে ৬৬ টাকা দরে। বিক্রেতারা বলছেন, গত সপ্তাহে চিকন চালের দাম কেজিতে আরো দুই থেকে চার টাকা কম
ছিল। গত বছর বন্যার আগে মোটা চালের
কেজি ছিল ৩৪ থেকে ৩৮ টাকা এবং চিকন চালের কেজি ৪০ থেকে ৪৪ টাকা। বন্যার পর মোটা চালের দাম
কমানোর জন্য যে পরিমাণ চাল আমদানি হয়েছে তাতে চালের দাম কিছুটা কমলেও আগের দামে আর
ফিরে আসেনি।
প্রাপ্ত
তথ্যানুযায়ী, দেশে এ বছর চালের চাহিদা সোয়া তিন কোটি টনের মতো। অথচ জোগান আছে প্রায় চার কোটি
টন। ল্যমাত্রা ছাড়িয়ে এবার বোরো
ধান উৎপাদন হয়েছে প্রায় দুই কোটি টন। আমন উৎপাদন হয়েছে প্রায় দেড় কোটি টন। গত এক বছরে আমদানি করা হয়েছে প্রায় ৩৮ লাখ টন চাল। আরো ৪৫ লাখ টনের এলসি খোলা
হয়েছে বাজেটকে মাথায় রেখে। মূলত বাজেটে চাল আমদানির ওপর শুল্ক আরোপ করা হচ্ছে এমন খবর যারা আগেই জানতে
পেরেছিলেন, এলসি খোলার ক্ষেত্রে তারা রয়েছেন এগিয়ে। অভিযোগ রয়েছে, জীবনে কখনো চালের ব্যবসায়ের সাথে যুক্ত ছিলেন না এমনও
অনেকেই এবার চাল আমদানিকারকের খাতায় নাম লিখিয়েছেন।
রাজধানীর
কয়েকটি পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, গত এক সপ্তাহে খুচরাপর্যায়ে প্রতি কেজি চালের দাম চার থেকে পাঁচ টাকা বেড়েছে। পাইকারি বাজারে বেড়েছে তিন
থেকে চার টাকা। কেজিতে দুই থেকে তিন টাকা
বাড়িয়েছেন মিল মালিকেরা। এর অর্থ দাঁড়ায় মিল মালিকেরা দাম যা বাড়িয়েছেন পাইকারি আড়তদারেরা বাড়িয়েছেন
তার চেয়ে বেশি। খুচরা বিক্রেতারা বাড়িয়েছেন
পাইকারদের চেয়েও বেশি। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ব্যাপার হলো, শুল্কমুক্ত উপায়ে আমদানি করে
মজুদ রাখা লাখ লাখ টন চালের দাম আমদানিকারকেরা কোনো কারণ ছাড়াই বাড়িয়ে দিয়েছেন। সেই সুযোগে মিল মালিকেরাও বাড়িয়ে
দিয়েছেন দেশী চালের দামও। অথচ যে কৃষকের স্বার্থের কথা ভেবে চাল আমদানির ওপর শুল্ক আরোপ করা হয়েছে,
তাদের ঘরে কোনো ধান নেই। ধান চলে গেছে মধ্যস্বত্বভোগী ও মিল মালিকদের
নিয়ন্ত্রণে।
খবর বিভাগঃ
জাতীয়
ব্যবসা ও বাণিজ্য
মতামত
0 facebook: