06 July 2018

অভিযানের মধ্যেও ত্রিপুরা থেকে আসছে গাঁজা


স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ মাদকবিরোধী অভিযানের মধ্যেও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সীমান্ত হয়ে গাঁজা ঢোকে বাংলাদেশেগাঁজা ব্যবসায়ীরা সীমান্তরক্ষী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে বিশেষ কায়দায় গাঁজা আনছেন বলে অভিযোগ উঠেছে

সম্প্রতি ভারতের এক নাগরিকসহ গ্রেপ্তার হওয়া চার মাদক ব্যবসায়ীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) এসব তথ্য পেয়েছে

গত ২০ মে ডিবির উত্তর বিভাগের একটি দল ডেমরার পাড়া ডগাইরে অভিযান চালিয়ে ৮০ কেজি গাঁজাসহ চার মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করেতাঁরা হলেন ভারতের নাগরিক হযরত আলী (৩২) এবং বাংলাদেশের শহীদুল ইসলাম (৩৮), লেবু মিয়া (৩০) ও বিল্লাল হোসেনএ ঘটনায় তাঁদের বিরুদ্ধে ডেমরা থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেছে ডিবিমামলাটি ডিবিই তদন্ত করছে

ডিবি সূত্র বলছে, গ্রেপ্তার ভারতীয় নাগরিক হযরত আলীসহ চার ব্যক্তি জিজ্ঞাসাবাদে ত্রিপুরা থেকে বাংলাদেশে গাঁজার চালান ঢোকার বর্ণনা দিয়েছেনডিবির জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা বলেন, ত্রিপুরার সিপাইজলার কুলুমচোরা থানার ডুহিরাবান, ননজলা, পুটিয়া, মানিকনগর, রুকিয়া ও সুতারমুরা পাহাড়ের পাদদেশে গাঁজার চাষ হয়রাজ্যের গাঁজা ব্যবসায়ী চাষিদের কাছ থেকে প্রতি কেজি গাঁজা ৭০০ থেকে ৮০০ রুপিতে কেনেনপরে তাঁরা এসব গাঁজা সীমান্তে সুবিধামতো স্থানে রাখেনদুই দেশের মাদক ব্যবসায়ীরা সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কিছু সদস্যকে ম্যানেজকরে বা চোখ ফাঁকিদিয়ে সাত-আট বছর ধরে গাঁজা পাচারের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেনএকেক চালানে ত্রিপুরা থেকে ৮০ থেকে ১২০ কেজি গাঁজা বাংলাদেশে ঢোকে

তদন্তসংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার হওয়া চার মাদক ব্যবসায়ী বলেছেন, সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনীর দেওয়া সময় অনুযায়ী বস্তাভর্তি গাঁজা পাহাড়ের ওপর থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলে তা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা ও আখাউড়া সীমান্তে মাদক ব্যবসায়ী রনি, ইকবালসহ অন্যরা গ্রহণ করেনএ সময় মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কিছু সদস্য সেখান থেকে সরে গিয়ে বা চোখ ফাঁকি দিয়ে গাঁজা গ্রহণে সুযোগ করে দেনবাংলাদেশের মাদক ব্যবসায়ীরা গাঁজার চালান নিরাপদ স্থানে রাখেনতারপর তাঁরা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনপরে মাদক ব্যবসায়ীদের পাঠানো মাইক্রোবাসে বা প্রাইভেট কারে গাঁজার বস্তা তোলেনগাঁজা বহনকারী গাড়ি চালান বকতিয়ার ও সোলাইমানতাঁদের পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারেনিগাঁজা বহনকারী প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাসের অন্তত দুই মাইল সামনে থাকে আরেকটি গাড়িওই গাড়ির দায়িত্ব হলো নিরাপদে গাঁজার চালানটি গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়াওই গাড়ির নির্দেশনামতো পেছনের গাঁজাভর্তি গাড়িটি এগোয়সীমান্ত থেকে গাঁজাভর্তি গাড়ি ছাড়তে ভোররাত চারটাকে নিরাপদ সময় হিসেবে বেছে নেন মাদক ব্যবসায়ীরাওই সময় রাস্তায় পুলিশের টহল থাকে না কিংবা থাকলেও তাঁরা ঘুমিয়ে থাকেনপরে এসব গাঁজা মাদক ব্যবসায়ী খাদেম আলী ও লেবু মিয়ার নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়ায় আখড়ায় পৌঁছে দেওয়া হয়একই সঙ্গে সীমান্ত থেকে আনা গাঁজা ঢাকা, ফরিদপুরসহ বিভিন্ন স্থানের মাদকের আখড়ায় গিয়ে পৌঁছে

ডিবি উত্তর বিভাগের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার মহরম আলী বলেন, গ্রেপ্তার মাদক ব্যবসায়ীরা জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, ত্রিপুরা থেকে বাংলাদেশ পর্যন্ত গাঁজার চালান আনতে চারটি চক্র সক্রিয় রয়েছেগাঁজা চাষ করে একটি চক্রসেখান থেকে গাঁজা কিনে নিয়ে আসে আরেকটি চক্র, সীমান্তে গ্রহণ করে অপর একটি চক্রআর দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দেয় আরেকটি চক্রতিনি বলেন, পলাতক গাঁজা ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তার করে সব চক্রকে শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে

ডিবির ওই কর্মকর্তা বলেন, ভারতের নাগরিক হযরত আলী মাদক ব্যবসা পরিচালনার সুবিধার জন্য তাঁর বোন রুবি আক্তারকে এ দেশের মাদক ব্যবসায়ী লেবু মিয়ার (বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া) সঙ্গে বিয়ে দেনএরপর লেবুর সঙ্গে রুমিও গাঁজা ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েনপ্রতি কেজি গাঁজার চালান নারায়ণগঞ্জে পৌঁছে দিলে তিন হাজার আর ঢাকায় পৌঁছে দিলে পাঁচ হাজার টাকা পেতেন তিনিগাঁজার চালানের টাকা নিতে এসে হযরত গ্রেপ্তার হন

ডিবির উত্তর বিভাগের উপকমিশনার মশিউর রহমান বলেন, ভারত-বাংলাদেশের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিভিন্ন সময় বৈঠক হয়সেখানে ত্রিপুরার মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকা করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা এবং গাঁজা চাষ বন্ধ করার প্রস্তাব দেওয়া হবে। 

সূত্রঃ প্রথম আলো


শেয়ার করুন

0 facebook: