15 September 2018

ভারতে পবিত্র ১০ই মুহররমে মুসলমানদের জন্য অস্ত্র প্রদর্শন নিষিদ্ধ


আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ ভারতের হিন্দু ঘেঁষা কতিপয় ইমাম পবিত্র মুহররম শরীফে মুসলমানদের জন্য অস্ত্র প্রদর্শন ইসলাম বিরোধী বলে ফতোয়া দিয়েছেন। আর তাই এবার ওই দিনে রাস্তায় অস্ত্র নিয়ে বের না হতেই বলেছেন কলকাতার সেই কথিত ইমামরা।

পবিত্র মুহররম শরীফ ইস্যুতে বারবার বিতর্ক তৈরি হয় পশ্চিমবঙ্গে। দুর্গা পূজার বিসর্জনের কাছাকাছি সময় মুসলিমদের এই পবিত্র মুহররম শরীফ উদযাপন করাকে ঘিরে বিতর্ক হতে দেখা যায়। সম্প্রতি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এব্যাপারে সতর্ক করেছেন যদিও হিন্দুরা যেকোন সময় তাদের ধর্মীয় অনুষ্টানে অস্ত্রের মহড়া দেয় এবং দিতে পারে কিন্তু যখনই মুসলমান একিই কাজ করতে যায় তখন হিন্দুরা বাধা দেয়।

এদিকে এবার হিন্দুদের সাথে হাত মিলিয়ে খোদ মুসলমানদের কথিত কিছু ইমাম মুহররম শরীফে মুসলমানদের অস্ত্র প্রদর্শন অনৈসলামিক বলে ফতোয়া দিয়েছেন, যাতে মুসলিমরা ধারাল অস্ত্র প্রদর্শন না করেন এই ধর্মীয় আচারে। এই ধরনের প্রথার সাথে ইসলামের কোনও সম্পর্ক নেই বলেও দাবি করেছেন সেইসব কথিত ইমাম।

হিন্দুস্তান টাইমস’-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, শাসক দল তৃণমূলের তরফে ইতিমধ্যেই মুসলমানদের এই ধর্মীয় রীতি থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মুসলিম ক্যালেন্ডারের হিসেবে প্রথম মাসের দশম দিনে পালিত হয় পবিত্র আশুরা মিনাল মুহররম।

সাধারণত প্রত্যেকবারই এই দিনে লাঠিতে পতাকা আর তলোয়ার হাতে প্রতীকী মিছিল বের করেন শিয়া সম্প্রদায় এবং মুসলিমদের একাংশ। হযরত আদম আলাইহিস সালামের জন্ম থেকে মৃত্যু সহ অসংখ্য ঘটনার সৃতি বিজড়িত এবং পবিত্র কারবালার ময়দানে এজিদের নির্দেশে শহিদ হওয়া হজরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দৌহিত্র হযরত হুসেইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সহ ঐতিহাসিক অসংখ্য ঘটনার সেই বিশেষ দিনে সেই হুসেইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর শাহাদাত কে স্মরণ করে, অস্ত্র নিয়ে পবিত্র মুহররম শরীফ পালন করা হয়। ধর্মীয় চেতনা শিক্ষার জন্য শিশুদের হাতে অস্ত্র থাকে অনেক সময় আর এতেই শুরু হয় বিতর্ক হিন্দুদের দ্বারা। অথচ হিন্দু এবং ইহুদি খ্রিস্টানরাও তাদের শিশুদের অস্ত্র চালনা শিক্ষা দেয় শিশু বয়সেই যদিও তা নিয়ে কেউ কোন বিতর্ক করেনা কখনো।

তৃণমূল কংগ্রেস এমপি ইদ্রিছ আলি জানিয়েছেন, ‘আমরা বিভিন্ন ইমামদের কাছে গিয়ে আবেদন জানিয়েছি, মুহররমে এমন কিছু যেনো না করা হয় যাতে অন্যান্য ধর্মের ভাবাবেগে আঘাত করে।

তিনি আরও বলেন, এই রীতির সাথে ইসলামের কোনও সম্পর্ক নেই। পাশাপাশি, এই ইস্যুকে বিজেপি হাতিয়ার করে বলেও এই রীতি থেকে বিরত থাকার কথা বলেন তিনি। অন্যদিকে, তৃণমূলের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে রাজ্য বিজেপি। যে ইস্যু নিয়ে রাজ্যে বারবার, রাজ্যের দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। এই ইস্যুতেই এবার দিলীপ ঘোষ বললেন, ‘এই সিদ্ধান্ত আমাদের নৈতিক জয়।

চলতি মাসেই রয়েছে পবিত্র মুহররম। আগামী ২১ সেপ্টেম্বর মুসলিমদের সেই বিশেষ দিন। তার আগে তলোয়ার ব্যবহার না করার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন একাধিক কথিত হিন্দুঘেষা ইমাম।

কলকাতার নাখোদা মসজিদের ইমাম মওলানা শফিক কাসমি এক অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে বলেন, ‘মুহররম আমাদের শোকের মাস। মিছিলে কেউ দয়া করে লাঠি বা তলোয়ার ব্যবহার করবেন না। এর সঙ্গে ইসলামের কোনও সম্পর্ক নেই। সাম্প্রদায়িক দলগুলি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে পারে, এমন কোনও কাজ করবেন না।

আসানসোলের কথিত ইমাম মৌলানা ইমদাদুল রশিদি মহরমে অস্ত্র প্রদর্শনকে অনৈসলামিক বলেও উল্লেখ করেছেন। এর আগে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী সংঘর্ষে নিজের ছেলের মৃত্যু হলেও শান্তির বার্তা দিয়েছিলেন সেই কথিত ইমাম রশিদি।

সম্প্রতি, ঝাড়গ্রামে প্রশাসনিক সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, রাজ্যে মুহররম কমিটির সঙ্গে পুজো কমিটিগুলির মধ্যে গোলমাল বাধানোর চক্রান্ত করা হয়েছিল।

গত দুবছর ধরেই মহাদশমীর পরদিনই পড়ে মুসলমানদের পবিত্র মুহররম। তাই এ নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল। রাজ্য সরকার মুহররম শরীফের জন্য দশমীর বিসর্জনে বিধিনিষেধ টেনেছিল। আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছিল বিতর্ক। কলকাতা হাইকোর্টে খারিজ হয়ে গিয়েছিল রাজ্যের আবেদন। আদালতের সমালোচনার মুখেও পড়তে হয়েছিল রাজ্যকে।


শেয়ার করুন

0 facebook: