![]() |
আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ ইন্দোনেশিয়ার পালু শহরে ভূমিকম্প ও সুনামিতে মৃত ব্যক্তিদের গণকবর দেওয়া শুরু হয়েছে। ১ হাজার ৩০০ মরদেহ সমাহিত করার মতো করে গণকবর খোঁড়া হয়েছে। গত শুক্রবার ভূমিকম্পের পর সুনামির আঘাতে এখন পর্যন্ত মৃত মানুষের সংখ্যা ৮৪৪–এ পৌঁছেছে। যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় কিছু দুর্গম এলাকায় এখনো উদ্ধারকর্মীরা পৌঁছাতে পারেননি; সে ক্ষেত্রে মৃত মানুষের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিবিসি অনলাইনের খবরে জানানো হয়, স্বজনদের জন্য লাশ ব্যাগে মুড়িয়ে সারি সারি করে রাখা হয়েছিল। কিন্তু লাশগুলো থেকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ায় ইন্দোনেশিয়ার দুর্যোগবিষয়ক সংস্থা গণকবরের সিদ্ধান্ত নেয়। গত রোববার রাতে একটি গণকবর খোঁড়া হয়েছে। ওই কবরে কমপক্ষে ৩০০ মরদেহ সমাহিত করা হবে বলে জানানো হয়।
গতকাল সোমবার কমলা, হলুদ ও কালো রঙের ব্যাগে মুড়িয়ে লাশগুলো ট্রাকে করে গণকবরের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। মৃতদেহগুলো কবরে রাখার পর খননযন্ত্র দিয়ে মাটিচাপা দেওয়া হয়। তবে এখনো প্রিয়জনের খোঁজে ছুটে বেড়াচ্ছেন স্বজনেরা।
ভারী যন্ত্রপাতির অভাবে উদ্ধারকাজ মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানা গেছে। ধসে পড়া বাড়িঘর, হোটেল ও শপিং মলে এখনো জীবিত কেউ কেউ আটকে পড়ে আছেন বলে মনে করা হলেও যন্ত্রপাতির অভাবে উদ্ধার করা যাচ্ছে না। পালুর শুধু রোয়া-রোয়া রিসোর্টের ধ্বংসস্তূপেই বেশ কয়েকজন আটকে পড়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গত শুক্রবার ইন্দোনেশিয়ার সুলাওয়েসি দ্বীপের পালু শহরে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ছয়টার দিকে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প হয়। ভূমিকম্পের পর সুনামির ফলে সৃষ্ট প্রায় ২০ ফুট উঁচু ঢেউ পালু শহরকে ভাসিয়ে দেয়। শহরের যেদিকে চোখ যায় শুধু ধ্বংসস্তূপ। লোকজন খোলা স্থানে অবস্থান করছেন। আহত ব্যক্তিদের হাসপাতালে বাইরে খোলা স্থানে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। পালু শহরের দক্ষিণে সিগি এলাকায় একটি গির্জার ধ্বংসস্তূপ থেকে ৩৪ শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ইন্দোনেশিয়ার রেডক্রসের মুখপাত্র অলিয়া আরিয়ানি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ওই শিশুরা বাইবেল ক্যাম্পে যোগ দিয়েছিল।
ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় দুর্যোগ প্রশমন সংস্থা স্বীকার করেছে, সুলাওয়াসিতে সুনামি আঘাত হানার আগে সতর্কতা জারির ব্যাপারে কেউ কাজ করছিল না।
তাৎক্ষণিক সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে তা তুলে নেওয়া হয়। এ কারণে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে ইন্দোনেশিয়ার আবহাওয়া সংস্থা।
জাতীয় দুর্যোগ প্রশমন সংস্থার মুখপাত্র সুতোপো পুরও নুগ্রহ বিবিসিকে বলেন, গভীর সমুদ্রের সেন্সরগুলোর সঙ্গে যুক্ত ২১টি ভাসমান শনাক্তকরণ ইউনিট নষ্ট করে ফেলা হয়েছে বা চুরি করা হয়েছে। এরপরও সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়েছিল। কিন্তু এটা ঢেউয়ের ভয়াবহতা কতখানি, তা অনুমান করতে পারেনি।
ভূকম্পনের কারণে বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় পালুর অনেক বাসিন্দা সতর্কতার কোনো তথ্য পাননি। উপকূল এলাকায় সতর্কতামূলক সাইরেনও বাজানো হয়নি। ওই সময় পালু সৈকতে একটি উৎসবে যোগ দিতে অনেক লোক জড়ো হয়েছিল। তারা সুনামির ফলে সৃষ্ট ২০ ফুট উঁচু ঢেউয়ে ভেসে যায়।
বার্তা সংস্থা এএফপিকে আদি নামের একজন ভুক্তভোগী জানান, তিনি ও তাঁর স্ত্রী সৈকতে ছিলেন। ওই সময় উঁচু ঢেউ ধেয়ে এলে তাঁরা একে অপরকে জড়িয়ে ধরেন। কিন্তু ঢেউয়ের আঘাতে কয়েক মুহূর্তের মধ্যে তাঁর কাছ থেকে স্ত্রী বিচ্ছিন্ন হয়ে যান। আদিকে ৫০ মিটার পর্যন্ত ভাসিয়ে নিয়ে যায় ঢেউ। পরদিন ঘটনাস্থলে গিয়ে তিনি স্ত্রীর খোঁজে যান। সেখানে গিয়ে তাঁর মোটরসাইকেল ও স্ত্রীর ব্যাগ পড়ে থাকতে দেখেছেন, কোথাও খুঁজে স্ত্রীকে পাননি।
দুর্যোগকবলিত এলাকায় খাবারের সংকটও দেখা দিয়েছে। যে খাবার নেওয়া হচ্ছে, তা ভুক্তভোগীরা লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। ফলে, পাহারা দিয়ে সেখানে খাবার নেওয়া হচ্ছে। ক্যাথলিক রিলিফ সার্ভিসের একজন কর্মী ইয়েননি সুরইয়ানি জানান, পালু এয়ারপোর্ট মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ভূমিধসের কারণে সড়কে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, অধিকাংশ জায়গায় বিদ্যুৎ নেই—এমন অবস্থায় দুর্যোগ এলাকায় সহায়তা পাঠানোর জন্য লোক পাচ্ছে না সংস্থাগুলো।
পানি, খাবার ও জ্বালানির জন্য দোকান লুটপাট করা শুরু করেছে অনেক ভুক্তভোগী।
রয়টার্স জানিয়েছে, চুরি ঠেকাতে সাহায্য নিয়ে যাওয়া সংস্থাগুলোকে পুলিশ পাহারায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
গত মাসে ইন্দোনেশিয়ার লমবক দ্বীপে সিরিজ ভূমিকম্প হয়। এর মধ্যে ৫ আগস্টের ভূমিকম্পে দেশটিতে ৪৬০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়। ভূমিকম্পপ্রবণ দেশটিতে ২০০৪ সালে ভূমিকম্পের পর ভয়াবহ সুনামি আঘাত হানে। এতে লাখো মানুষের প্রাণহানি ঘটে।
খবর বিভাগঃ
আন্তর্জাতিক
0 facebook: