ছবিঃ সংগৃহিত |
স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ মহাজোটের শরিক হয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়া জাতীয় পাটির (জাপা) অবস্থান কী হবে, তা এখনো চূড়ান্ত করতে পারেননি দলটির সিনিয়ার নেতারা। তবে এ বিষয়ে আজ সিদ্ধান্ত নেবে দলের পার্লামেন্টারি বোর্ড।
গতকাল পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদের রাজনৈতিক কার্যালয়ে নির্বাচন পরবর্তী জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্যদের প্রথম বৈঠক শেষে দলের মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান। সভায় দলের কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, মেজর জেনারেল (অব:) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম, এস এম ফয়সল চিশতী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। গত সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ এবং পরিবেশ ও বনমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে অবশ্য সভায় দেখা যায়নি।
সংসদের কার্যপ্রণালী বিধিতে বলা হয়েছে, সংসদের ‘বিরোধী দলীয় নেতা’ হবেন স্পিকারের বিবেচনামতে যিনি সংসদে ‘সরকারি দলের বিরোধিতাকারী সর্বোচ্চ সংখ্যক সদস্য নিয়ে গঠিত, ক্ষেত্রমতে দল বা অধিসঙ্গের নেতা’।
সংসদে বিরোধী দল হতে গেলে ১০ শতাংশ আসন থাকতে হয়, সেখানে জাতীয় পার্টির আছে ২২টি আসন। এ বিষয়ে এবং মন্ত্রিত্বের ব্যাপারে জাতীয় পার্টির অবস্থান কী হবে জানতে চাইলে জি এম কাদের বলেন, সার্বিক রাজনৈতিক অবস্থা বুঝে আমরা ব্যবস্থা নেবো। এই জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসন সংখ্যার দিক দিয়ে আওয়ামী লীগের পরই আমাদের অবস্থান। আমরা মহাজোটে ছিলাম, এখনো আছি। ভবিষ্যৎ বুঝে দেখা হবে। তিনি বলেন, আজ জাতীয় পার্টির নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যরা শপথ নিয়ে সংসদীয় দলের সভায় অংশ নেবেন। দেশ ও মহাজোটের স্বার্থ বিবেচনায় রেখে পার্টির সংসদীয় দলের সভায় সিদ্ধান্ত হবে সংসদে জাতীয় পার্টির কী ভূমিকা হবে।
জি এম কাদের বলেন, এরপর আলাপ-আলোচনা হবে মহাজোটের সাথে। কারণ, আমরা মহাজোটে ছিলাম, মহাজোটের শরিকদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নির্বাচন করেছি। আমাদের লক্ষ্য এবং কথা ছিল অভিন্ন। তাই আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়েই সব সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
জাপা সরকারে থাকছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে জি এম কাদের জানান, সম্ভাবনার কথা বলা যায় না। সব রকম সম্ভাবনাই আছে। জাতীয় পার্টি সংসদে যাওয়ার পর কারা মন্ত্রিত্ব পাবেন, এ নিয়ে এখনো কিছু ঠিক হয়নি। আমরা এটা নিয়ে পরে মহাজোটের সাথে আলোচনা করব। মহাজোটের সবচেয়ে বড় শরিক দল জাতীয় পার্টি ‘মহাজোটের স্বার্থেই’ কাজ করবে।
দলের সিনিয়র নেতারা যখন চেয়ারম্যানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বৈঠক করছিলেন, তখন ভবনের নিচে নেতাকর্মীরা ‘মন্ত্রিত্ব নয়, বিরোধী দল’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন। পরে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে জি এম কাদের বলেন, সংসদে অবশ্যই একটা শক্তিশালী বিরোধী দল দরকার। কিন্তু সরকার এখন এক শক্তিশালী অবস্থানে আছে। দুই-একটি আসন বাদে সব আসনই তাদের। এতে জনগণের ইচ্ছারই প্রতিফলন হয়েছে। তার ভাষায়, আদর্শের জায়গা থেকে অনেক কথা বলা যায়, কিন্তু থিওরিটিক্যাল কথা তো আর বাইরে বলা যাবে না।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান সাবেক সামরিক শাসক এরশাদ মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে তার উত্তরসূরী হিসেবে ছোট ভাই কাদেরের নামই ঘোষণা করেছেন। তবে নিজেকে এখনো দলের শীর্ষ নেতা ভাবতে চান না কাদের। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ নিয়ে আসলে এখনো কথা বলার সময় আসেনি। শারীরিক অসুস্থতার কারণে এরশাদ এ দিন দলের ‘নীতিনির্ধারণী’ সভায় আসেননি। সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদকেও পার্টি অফিসে দেখা যায়নি। রওশনের অনুপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তার জবাব দেননি কাদের ও রাঙ্গা।
প্রসঙ্গত, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি পেয়েছিল ৩৪টি আসন। পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ হয়েছিলেন সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা। আর চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ দূত। জাতীয় পার্টি থেকে একজনকে মন্ত্রী এবং দুইজনকে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
0 facebook: