জেলা প্রতিনিধিঃ নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলায় বিকাশ প্রতারক চক্রের মূলহোতা সহ ৩ জন সক্রিয় সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১১। এই সংঘবদ্ধ প্রতারকচক্র ভুয়া মোবাইল সিম ব্যবহার করে দেশের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী ও উচ্চপদস্থ চাকরিজীবিদের শীর্ষ সন্ত্রাসী পরিচয়ে মোবাইলে হুমকি দিয়ে চাঁদা দাবী করে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা করে আসছে।
নারায়ণগঞ্জের আদমজীনগরে অবস্থিত র্যাব-১১ এর অধিনায়ক লে. কর্ণেল কাজী শামশের উদ্দিন প্রেরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত বুধবার রাত সাড়ে ১১টায় আড়াইহাজার থানার অন্তর্গত নারায়ণগঞ্জ-নরসিংদী মহাসড়কের বান্টিবাজার হতে ওই তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। তারা হলেন সৈয়দ আকতার হোসেন লিটন (৪৫), মুকলেসুর রহমান ওরফে দয়াল বাবা (৫২) ও দুলাল ওরফে দুলাল পাগলা (৩২)।
র্যাব জানায়, ২৫ ফেব্রুয়ারী আড়াইহাজার থানার জনৈক মমতাজ হাসান র্যাব-১১ বরাবর লিখিত অভিযোগ জানান। এতে অভিযোগ করা হয় একটি অপরিচিত মোবাইল নাম্বার (০১৮৮০৮৭৭০৮৬) থেকে দেশের শীর্ষ-সন্ত্রাসী মিরপুরের শাহাদাত পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তি তাকে হুমকি দিয়ে চাঁদা দাবি করে।
প্রাপ্ত অভিযোগের সত্যতা যাচাই ও অনুসন্ধানে জানা যায়, ওই পরিচয়ে একই ব্যক্তি একাধিক সিম ব্যবহার করে দেশের বহু প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী এবং সরকারি ও বেসরকারি উচ্চ পদস্থ চাকরিজীবিদের মোবাইলে হুমকি দিয়ে চাঁদার দাবি করেছে। অনেকে নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তার বিষয় বিবেচনা করে বিকাশে চাঁদা দিয়েছে। অনেকে হুমকিতে ভীত ও অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আবার অনেকে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরীও করেছে।
র্যাব-১১ এর একটি আভিযানিক দল দীর্ঘদিন অনুসন্ধান ও গোয়েন্দা নজরদারীর মাধ্যমে এই প্রতারক চক্রকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত রাতে গোপনসূত্রে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে পরিচালিত অভিযানে নারায়ণগঞ্জ-নরসিংদী মহাসড়কের আড়াইহাজার থানার বান্টিবাজার থেকে ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ৪টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ ও প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা যায়, এই সংঘবদ্ধ প্রতারকচক্রের মূলহোতা সৈয়দ আকতার হোসেন লিটন। তার বাড়ি মাদারীপুর জেলার রাজৈর থানার আমগ্রামে। প্রতারণাই তার মূল পেশা আর মাজার ভক্তি তার নেশা। প্রায় একযুগ আগে গাজীপুরের কোনাবাড়ির এক মাজারে ফকির মোখলেসুর রহমানের সঙ্গে তার পরিচয়। লিটন ভক্তি করে ফকির মোখলেসুর রহমানকে ‘দয়াল বাবা’ উপাধি দেয়। দয়াল বাবার মুরীদ হিসেবে দুলাল পাগলার সঙ্গে লিটনের পরিচয় হয়। দীর্ঘদিন ধরে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে লিটন মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে। জ্বীনের বাদশা হয়ে প্রতারণা করার অপরাধে একবার গ্রেফতারও হয়েছিল। তারপরেও তার প্রতারণা থেমে থাকেনি।
প্রতারণার মাধ্যমে অর্জিত টাকা নিয়মিত গুরুদক্ষিণা হিসেবে দয়াল বাবাও পেত। সরকার মোবাইল সিম নিবন্ধনের আওতায় আনলে লিটনের প্রতারণা কিছুটা সংকুচিত হয়ে পড়ে। প্রায় ৩ মাস পূর্বে দয়াল বাবার নির্দেশে দুলাল পাগলা গাজীপুর চৌরাস্তার আজিজ নামের এক ভিক্ষুকের জাতীয় পরিচয়পত্র ও ফিংগার প্রিন্ট ব্যবহার করে ৪টি সিম তুলে লিটনকে দেয়। এই সিমগুলো দিয়ে বিকাশ ও নগদ একাউন্ট খোলা হয়। পরবর্তীতে এই সিম ও বিকাশ নাম্বার ব্যবহারের মাধ্যমে হুমকি ও প্রতারণা করে এই চক্র বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেয়।
খবর বিভাগঃ
অপরাধ
জেলা সংবাদ
0 facebook: