10 March 2019

কেমিক্যাল নিয়ে নতুন করে ঝুঁকির আশঙ্কা


স্বদেশবার্তা ডেস্কঃ বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনের (বিসিআইসি) নিয়ন্ত্রণাধীন উজালা ম্যাচ ফ্যাক্টরি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধএ সুযোগে প্রভাবশালীরা ফ্যাক্টরির ভেতরের অধিকাংশ জায়গা দখল করে গড়ে তুলেছে ট্রাক স্ট্যান্ড

সেখানে বাংলাদেশ আন্তঃজেলা ট্রাকচালক ইউনিয়নের একটি অফিসও রয়েছেবিশাল এলাকাজুড়ে অন্তত ১০টি ইট ও খোয়ার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছেফ্যাক্টরির ৬ দশমিক ১৭ একর জমির প্রায় পুরোটাই প্রভাবশালীদের দখলেসামনের অংশে বিশাল ময়লার ভাগাড়ভেতরে একটি দোতলা ভবনে রয়েছে আনসার ক্যাম্পশুক্রবার উজালা ম্যাচ ফ্যাক্টরিতে গিয়ে এমন চিত্রই চোখে পড়ে

পুরান ঢাকা থেকে কেমিক্যাল গুদাম সাময়িকভাবে সরিয়ে নিতে টাস্কফোর্সের অভিযানের আগের দিন ২৭ ফেব্রুয়ারি দুটি স্থান নির্ধারণ করেছে শিল্প মন্ত্রণালয়এর একটি ঢাকার কদমতলীর শ্যামপুরের উজালা ম্যাচ ফ্যাক্টারিঅপরটি গাজীপুরের টঙ্গীর কাঁঠালদিয়ায় বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল কর্পোরেশনের (বিএসইসি) খালি জায়গা

জানা যায়, কাঁঠালদিয়ার স্থানটি খালি বলা হলেও সেখানে গড়ে উঠেছে বস্তিওই বস্তিতে প্রায় ৫০০ পরিবার বসবাস করছেকেমিক্যাল সরিয়ে নিতে নির্ধারিত জায়গা প্রস্তুত না করেই উচ্ছেদ অভিযানে নেমেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে গঠিত টাস্কফোর্সএ কারণে অভিযানের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে

কেমিক্যাল গোডাউন স্থানান্তরেরর নির্ধারিত দুটি স্থানের এ অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে শিল্প সচিব আবদুল হালিম বলেন, এটাকে আমরা বেদখল বলছি নাবিশেষ করে উজালা ম্যাচ ফ্যাক্টরিতে আমি নিজেও গিয়েছিসেখানে ট্রাক রাখা আছেট্রাকতো আর স্থায়ী কোনো স্থাপনা নয়সুতরাং এটাকে বেদখল বলা যাবে নাতাছাড়া দুটি স্থানকে কেমিক্যাল রাখার জন্য প্রস্তুত করতে সব ধরনের প্রচেষ্টা নিয়েছিদ্রুতই আমরা সেখানে কার্যক্রম শুরু করতে পারব

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জায়গা প্রস্তত না করে অভিযান চালানোর কারণে ব্যবসায়ীরা ঢাকার আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় কেমিক্যাল সরিয়ে নিচ্ছেনঅনেকে বাসাবাড়িতে কেমিক্যাল রাখছেনবিশেষজ্ঞরা বলছেন, জায়গা প্রস্তুত না করে এভাবে অভিযানে ঝুঁকি আরও বাড়ছেপুরান ঢাকা থেকে কেমিক্যাল সরিয়ে নেয়া যেমন জরুরি, তেমনি সেই কেমিক্যাল নতুন করে সমস্যার সৃষ্টি করছে কিনা তাও দেখতে হবেজায়গা প্রস্তত না করে অভিযানের কারণে ব্যবসায়ীরা যত্রতত্র কেমিক্যাল সরিয়ে নেয়া শুরু করায় ঝুঁকির আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কেমিকৌশল বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. ইয়াসির আরাফাত খান বলেন, একটা সুন্দর পলিসি তৈরির আগে যদি এভাবে অভিযান চলতে থাকে তবে ব্যবসায়ীরা কেমিক্যাল অন্যত্র রাখবেন; যা ঝুঁকিপূর্ণতাই অভিযানের আগে কেমিক্যাল রাখার জন্য স্থায়ী স্থাপনা তৈরি করা উচিতব্যবসায়ীদের নির্দিষ্ট করে নীতিমালার বিষয়টিও বুঝিয়ে দেয়া উচিতনতুন স্থানে কেমিক্যাল কিভাবে রাখতে হবে সেটা বলে দিতে হবেতড়িঘড়ি করে এভাবে অভিযান না চালিয়ে একটি পরিকল্পনা করে রোডম্যাপ তৈরি করে স্থানান্তরের কাজ সম্পন্ন করতে হবে

এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, ‘অতি দাহ্য ২৯টি কেমিক্যালের বিরুদ্ধে অভিযান চলছেঅন্যান্য কেমিক্যালের বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরে অভিযান চলবেসরেজমিন পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কেমিক্যাল সরিয়ে নেয়ার বিষয়টি এখনও তাদের কাছে স্পষ্ট নয়সরকার বলছে, দুটি স্থান নির্ধারণ করা হয়েছেকিন্তু কোন প্রক্রিয়ায় সেখানে কেমিক্যাল সরিয়ে নেয়া হবে এবং কারা নিতে পারবে- এ নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছেআবার স্থান নির্ধারণ করা হলেও সেখানে কেমিক্যাল স্থানান্তরের প্রক্রিয়া এখনও সরকার শুরু করেনি

অথচ কেমিক্যাল ও প্লাস্টিকের গোডাউনে টাস্কফোর্সের অভিযান চলছেতাই ব্যবসায়ীরা বাধ্য হয়ে যেখানে পারছেন সেখানেই গুদাম সরিয়ে নিচ্ছেনসোয়ারীঘাট এলাকার কেমিক্যাল ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন বলেন, সরকার কেমিক্যাল সরিয়ে নিতে সাময়িকভাবে স্থান নির্ধারণ করে দিয়েছেকিন্তু এ বিষয়ে ব্যবসায়ীদের স্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি

কারা সেখানে কেমিক্যাল সরাতে পারবে, কারা পারবে না এ বিষয়ে কিছু জানায়নিজায়গা প্রস্তুত কিনা তাও জানানো হয়নিএ অবস্থায় টাস্কফোর্সের অভিযান চলছেতিনি বলেন, পুরো কাজটি যথাযথ প্রক্রিয়ার মধ্যে হওয়া উচিতবহুমুখী চাপে অনেক ব্যবসায়ী ঢাকার আশপাশের বিশেষ করে কেরানীগঞ্জ, ডেমরা, টঙ্গী, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকার বাসাবাড়িতে কেমিক্যাল মজুদ করছেন

ব্যবসায়ীরা যে কোনো উপায়ে তাদের কেমিক্যাল রক্ষা করার চেষ্টা করছেনযারা পারছেন না তাদের কেমিক্যাল এখনও পুরান ঢাকাতেই আছেতবে তড়িঘড়ি কোনো কাজ ভালো ফল বয়ে আনবে নাজানতে চাইলে বাংলাদেশ এসিড মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক তারেক হোসেন বলেন, কেমিক্যাল উচ্ছেদে সরকারের আরও একটু সময় নেয়া দরকার ছিল

অভিযানের আগে সরকারের উচিত ছিল বিকল্প স্থানের বিষয়ে স্পষ্ট করাদুটি স্থান নির্ধারণ করে দিলেও সেখানে কিভাবে স্থানান্তর হবে এ বিষয়ে কিছুই বলা হয়নিআর অতি দাহ্য কেমিক্যালের বিরুদ্ধে অভিযানের কথা বলা হলেও অন্য কেমিক্যাল উচ্ছেদেও অভিযান চলছে


শেয়ার করুন

0 facebook: