![]() |
স্টাপ রির্পোটারঃ গাজীপুরের টঙ্গীতে নাবালিকা মেয়েকে ধর্ষণ ও অন্তঃসত্ত্বা করার মামলায় ধর্ষক বাবাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে আসামিকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরো ছয় মাসের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে।
দণ্ডাদেশ পাওয়া ব্যক্তির নাম মুহম্মদ আইনাল মিয়া (৩৯)। তার বাড়ি শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার কোদালপুর গ্রামে।
আজ বুধবার সকালে গাজীপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা জজ) মেছবাহ উদ্দিন আহমেদ এ রায় দেন। রায় ঘোষণাকালে বিচারক বলেন, পিতা কর্তৃক নিজ সন্তান ধর্ষিত হওয়ার এমন ঘটনার পর একজন বাবা হিসেবে আমিও আমার মেয়েদের দিকে তাকাতে বিব্রত বোধ করছি।
গাজীপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পিপি মুহম্মদ শাহজাহান জানান, গাজীপুরে টঙ্গীতে স্ত্রী ও তিন মেয়েকে নিয়ে বসবাস করেন আইনাল মিয়া। স্ত্রী বানু বেগম মারা যাওয়ার পর আইনাল দ্বিতীয় বিয়ে করেন। বনিবনা না হওয়ায় দ্বিতীয় স্ত্রীও আইনালকে ছেড়ে চলে যান। এরই মধ্যে ২০১৫ সালের ১৫ এপ্রিল মধ্যরাতে আইনাল তার বড় মেয়েকে (১২) প্রলোভন ও ভয়ভীতি দেখিয়ে ধর্ষণ করেন। দিনের পর দিন ধর্ষণের ফলে ওই কিশোরী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার প্রায় পাঁচ মাস পর তার শারীরিক গঠন বৃদ্ধি পাওয়ায় এলাকার লোকজনের চোখে পড়ে। একপর্যায়ে এলাকাবাসীর জিজ্ঞাসাবাদে ভিকটিম স্থানীয় কাউন্সিলরের কাছে ঘটনার বিস্তারিত জানায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিবেশী রেখা বেগম বাদী হয়ে ধর্ষক বাবা আইনাল মিয়াকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ২০১৫ সালের ৩১ আগস্ট টঙ্গী থানায় একটি মামলা করেন। এ ঘটনায় আইনাল মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তদন্ত শেষে পুলিশ ওই বছরের ২৭ ডিসেম্বর আইনাল মিয়ার বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়। শুনানি শেষে ২০১৬ সালের ২ মার্চ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। ধর্ষণের শিকার ওই কিশোরী আদালতে জবানবন্দি দেয়। সাতজন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ ও শুনানি শেষে গাজীপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা জজ) মেছবাহ উদ্দিন আহমেদ বুধবার মামলার এ রায় দেন।
এ সময় মামলার আসামি আইনাল মিয়া আদালতের কাঁঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন।
রায় ঘোষণাকালে আদালতের বিচারক বলেন, বিচারকদের নির্মোহ থাকতে হয়। তারপরও এ রায় লিখতে গিয়ে একজন মানুষ হিসেবে আমি কষ্ট পাচ্ছি। আজ মাতৃহীনা মেয়েদের সাজা দিয়ে তাদের পিতৃহীন করা হলেও এ পিতার কাছে তার মেয়েরা নিরাপদ ছিল না।
বিচারক আরো বলেন, পিতা কর্তৃক নিজ সন্তান ধর্ষিত হওয়ার এমন ঘটনার পর একজন বাবা হিসেবে আমিও আমার মেয়েদের দিকে তাকাতে বিব্রত বোধ করছি। ধর্ষণের মাত্রা এ পর্যায়ে পৌঁছার কারণটি সমাজ বিজ্ঞানীদের ভেবে দেখা উচিত।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে গাজীপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পিপি মুহম্মদ শাহজাহান এবং আসামি পক্ষের আইনজীবী জাকির উদ্দিন মামলা পরিচালনা করেন।
খবর বিভাগঃ
অপরাধ
ঢাকা বিভাগ
ধর্ষণ
0 facebook: