আন্তর্জাতিক
ডেস্ক।। থমথমে পুরো জম্মু-কাশ্মীর। স্বাধীনতাকামীদের বড়সড় হামলার আশঙ্কায় স্তব্ধ উপত্যকাটি।
আগাম সতর্কতায় পর্যটক ও তীর্থ যাত্রীরা বাড়ি ফিরতে ব্যস্ত। ভীতসন্ত্রস্ত কাশ্মীরের
বাসিন্দারাও। ভূস্বর্গখ্যাত এ উপত্যকায় জয়েশ স্বাধীনতাকামীদের সদস্যরা ঢুকে পড়েছে সন্দেহে
শুরু হয়েছে জোর তল্লাশি।
আগেই
১০ হাজার ভারতীয় বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা
হয়েছে উপত্যকায়। রোববার আরও ২৫ হাজার সদস্য হাজির কাশ্মীরে। স্বাধীনতা দিবসের আগে রাজ্যের
নিরাপত্তা আঁটোসাঁটো করতেই এ ব্যবস্থা বলে দাবি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের।
এদিকে, কাশ্মীরের
কেরান সেক্টর দিয়ে চারবার অনুপ্রবেশের চেষ্টা করে পাকিস্তানি সেনার ‘বর্ডার
অ্যাকশন টিম’র
(ব্যাট) সদস্যরা।
এতে অবৈধ
ভারতীয় সেনার হাতে প্রাণ হারিয়েছে পাঁচ ব্যাট সদস্য। পাল্টা পাকিস্তানের দাবি, জেনেভা
কনভেনশন ভেঙে গত সপ্তাহে পাকিস্থানের আজাদ কাশ্মীরে গুচ্ছবোমা ছুড়েছে অবৈধ দখলদার ভারতীয়
সেনারা। এতে চার বছরের শিশু এবং এক নারী নিহত হয়েছেন।
এনডিটিভি
জানায়, কাশ্মীরের
উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ে ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশেই বৈঠক হয়েছে। ভারতের দাবি, জম্মু-কাশ্মীরে
বড় নাশকতা ঘটানোর লক্ষ্যে ইসলামাবাদ কাশ্মীরের স্বাধীনতাকামীদের অনুপ্রবেশ ঘটানোর জোর
চেষ্টা চালাচ্ছে, সে
ব্যাপারে আগেই গোয়েন্দা তথ্য পেয়েছে নয়াদিল্লি।
এ পরিস্থিতিতে
কাশ্মীরে জোরদার তল্লাশি অভিযানের পাশাপাশি ঘন ঘন কৌশল-বৈঠক শুরু হয়েছে নয়াদিল্লিতে।
রোববার রাষ্ট্রপতি ভবন রাইসিনা হিলে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল, গোয়েন্দা
সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইংয়ের (র) প্রধান সামন্ত গোয়েল, কেন্দ্রীয়
গোয়েন্দা বাহিনীর প্রধান অরবিন্দ কুমার এববং স্বরাষ্ট্র সচিব রাজীব গৌবাকে নিয়ে দীর্ঘ
বৈঠক করেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
পাশাপাশি
পরিস্থিতি দেখভালের জন্য আগামী সপ্তাহে অমিত শ্রীনগরে যাচ্ছেন বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে।
এছাড়া
সোমবার সকাল সাড়ে ৯টায় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির জরুরি বৈঠক ডেকেছেন প্রধানমন্ত্রী
নরেন্দ্র মোদি। সামগ্রিক প্রস্তুতি দেখে বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করছেন, বড় কোনো
অপারেশন শুরু হতে চলেছে কাশ্মীরে।
অমিত
শাহর নেতৃত্বে বৈঠক এবং মন্ত্রিসভা কমিটির জরুরি বৈঠকের ডাক সেই সম্ভাবনার পারদ আরও
চড়াচ্ছে। কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের কথায়, নব্বইয়ের দশকের পর কাশ্মীরে এত সেনা একসঙ্গে
কখনওই মোতায়েন করা হয়নি। শুধু অনুপ্রবেশ বন্ধ করার উদ্দেশ্য থাকলে এত সেনা মোতায়েন
প্রয়োজন ছিল বলেও মনে করা হচ্ছে না।
শুক্রবার
কাশ্মীরের অমরণাথ তীর্থযাত্রী ও পর্যটকদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এরপর থেকে ২০ হাজারেরও বেশি তীর্থযাত্রী ও ২ লক্ষাধিক
শ্রমিক কাশ্মীর ছেড়েছেন। উপত্যকায় বাড়তি আরও ২৫ হাজার আধা সামরিক বাহিনীর সদস্য মোতায়েন
করা হয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে
বৈঠকে বসেন কাশ্মীরের সব দলের নেতারা। রোববার সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতির ডাকে
ন্যাশনাল কনফারেন্সের চেয়ারম্যান ফারুক আবদুল্লাহর বাসায় এ বৈঠক হয়েছে। সাবেক মুখ্যমন্ত্রী
ওমর আবদুল্লাহসহ কংগ্রেস ও পিপলস মুভমেন্টের নেতারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
একইদিন
পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির বৈঠক ডাকেন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। সেখানে উপস্থিত
ছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পারভেজ খট্টক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরেশি, সেনাপ্রধান
কামার জাভেদ বাজওয়া ও অন্যান্য জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তারা।
বৈঠকে
তিনি বলেন, আজাদ
কাশ্মীরের বেসামরিক এলাকায় গুচ্ছবোমা ছুড়ে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন করেছে ভারত। ভারতীয়
হামলার নিন্দা জানিয়ে তিনি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে বিষয়টি বিবেচনায় নেয়ার আহ্বান
জানান। কূটনৈতিক সমাধানের সুরে পাক প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড
ট্রাম্পের মধ্যস্থতার প্রস্তাব খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন।
ইমরান
বলেন, অধিকৃত
কাশ্মীরে দীর্ঘকাল ধরে যে সমস্যা চলছে তার অবসান হওয়া প্রয়োজন। জাতিসংঘের নিরাপত্তা
পরিষদের ধারা অনুযায়ী কাশ্মীরের বাসিন্দাদের পৃথক রাজ্যের অধিকার রয়েছে।’ পাকিস্তানের
ইন্টার সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশনস (আইএসপিআর) একটি রিপোর্টে দাবি করে, ৩০ জুলাই
রাতে নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে আজাদ কাশ্মীরে ক্লাস্টার বোমা ছুড়েছে ভারত। মাহমুদ কোরেশির
দাবি, ট্রাম্প
কাশ্মীর সমস্যায় মধ্যস্থতা করতে চাইছেন বলে ভারত ভয় পেয়েছে।
খবর বিভাগঃ
আন্তর্জাতিক
কাশ্মীর
ভারত
0 facebook: