রাজীব খাজা।। কাশ্মীরে বন্দুকের নলের আগায় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করা হল! ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ, যেটা কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দেয়, তা তুলে দিয়েছে ভারত সরকার। এই ধারাটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ এর ভিত্তিতেই কাশ্মীর রাজ্য ভারতের অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। যে সমস্ত শর্তে স্বাধীন কাশ্মীরকে ভারতের সাথে যুক্ত করা হয়েছিল, বন্দুকের নলের আগায় সেই চুক্তি বাতিল করা হল।
ভারতের অন্যান্য তথাকথিত অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলি (AAP, TRS, BSP ইত্যাদি) এই সিদ্ধান্তকে বিনা শর্তে সমর্থন জানিয়েছে।
ভারতের আরও কয়েকটি রাজ্য বিশেষ সুবিধা ভোগ করে , যেমন - নাগাল্যান্ড (৩৭১ A), আসাম (৩৭১), মণিপুর (৩৭১C), সিকিম (৩৭১ F), মিজোরাম (৩৭১ G)
এই ধারাগুলির সাহায্যে রাজ্যগুলি কিছু সায়ত্তশাসন লাভ করে এবং বাইরের রাজ্যের ব্যক্তিরা রাজ্যগুলিতে জমি কিনে বসবাস করতে পারে না।
একইসঙ্গে কাশ্মীর থেকে ভেঙে আলাদা করে দেওয়া হল লাদাখকে। দুটি আলাদা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হচ্ছে জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখ। দু’টি জায়গাতেই দু’জন লেফটেন্যান্ট গভর্নর নিয়োগ করা হবে। জম্মু-কাশ্মীরের বিধানসভা থাকবে, কিন্তু লাদাখে বিধানসভা থাকবে না।
অর্থাৎ কাশ্মীর হারাল রাজ্যের মর্যাদা, এখন থেকে কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল। যার ফলে কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রীর প্রায় কোন ক্ষমতাই থাকবে না।
গত কয়েকদিনে কি কি হল কাশ্মীরেঃ
১। হঠাৎ করে একটা রাইফেল পাওয়া গেলো। (পড়ুন রাইফেল প্ল্যান্ট করা হল।) তারপর সেই রাইফেলের বাহানায় অমরনাথ যাত্রীদের যাত্রা বাতিল করা হল। তাদেরকে তড়িঘড়ি ফেরত পাঠানো হল। এটা করা হল একটা বিশেষ সেন্টিমেন্ট তৈরি করার জন্য।
২। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়া হল।
৩। বাইরের রাজ্যের পর্যটক ও নাগরিকদের রাজ্য ছাড়তে বলা হল।
৪। হোস্টেল থেকে বাইরের রাজ্যের ছাত্র ছাত্রীদের রাজ্য ছাড়তে বলা হল।
৫। কাশ্মীরে রয়ে গেলো কেবলমাত্র কাশ্মীরী নাগরিকরা।
৬। ল্যান্ড লাইন, মোবাইল ও ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হল।
৭। দুই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা ও মেহবুবা মুফতী - দুজনকেই হাউজ এরেস্ট করা হল।
৮। রাজ্যের একাধিক শীর্ষনেতাদের গৃহবন্দী করা হল।
৯। গ্রেফতার সিপিএম নেতা ইউসুফ তারিগামি এবং কংগ্রেস নেতা উসমান মজিদ।
১০। জারি হয়েছে ১৪৪ ধারা।
১১। অতিরিক্ত প্রায় ৫০ হাজার সেনা মোতায়েন করা হল। এমনিতেই প্রায় ৯ লাখ সেনা আছে।
এখন লক্ষ্য করার বিষয় হল - যে সমস্ত সাধারণ নাগরিক ও নেতারা তথাকথিত গণতন্ত্রে ও শান্তিতে বিশ্বাস রেখেছে, তাদেরকেও কিভাবে বন্দী করে একটা সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হল। কাশ্মীরের কোন নেতা ও মন্ত্রীর সাথে কোন প্রকার আলোচনা করা হল না।
পরবর্তীতে কি হতে চলেছে -
১। কাশ্মীরে হিন্দু বসতি গড়ে তুলে সেখানে মুসলিমদের সংখ্যালঘু করে দেওয়া হবে।
২। যেহেতু কাশ্মীর এখন কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল, কোন রাজ্য নয় - ভীষণভাবে বঞ্ছনার শিকার হবে কাশ্মীরের মুসলমানরা।
৩। এইভাবে জোর জবরদস্তি করে ৩৭০ অনুচ্ছেদ তুলে দেওয়া, কাশ্মীরকে রাজ্যের মর্যাদা কেড়ে নিয়ে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করার কাশ্মীরী মানুষদের মনে ক্ষোভের সঞ্চার হবে।
৪। যেভাবে গোটা সিস্টেমকে কব্জা করে কাশ্মীরকে একটি বধ্যভুমির রূপ দেওয়া হল, তাতে সেখানে রক্তপাত আরও বাড়বে।
তবে মূলত ভারতীয় সরকার কাশ্মীরিদের জন্য কূপ খুঁড়তে গিয়ে তারা নিজেরাই সেই কুপে অটোম্যাটিক পড়ে গেছে। অনুচ্ছেদ ৩৭০ না থাকার মূল অর্থ হল কাশ্মীরের ভারত ভুক্তির চুক্তিও আর রইলো না আজকের পর থেকে। এখন জাতিপুঞ্জ চাইলে কাশ্মীরকে স্বাধীন হিসাবে ঘোষণা করতে পারে, তাছাড়া কাশ্মীরইরাও নিজেদের স্বাধীন হিসাবে ঘোষণা করতে পারে যেটা বৈধ হিসাবে বিবেচিত হবে। কেবল কেউ একজন জোর গলায় মাথা উঁচিয়ে এই দাবী করতে হবে।
এখন একমাত্র গায়ের জোরেই কাশ্মীরকে ভারতের অংশ হিসাবে রাখা সম্ভব, কোন লিগ্যাল রাইট আর থাকলো না কাশ্মীরের প্রতি অবৈধ দখলদার ভারতের, ঠিক পাকিস্তানের মতোই। কাশ্মীরে এখন ভারত, পাকিস্তান ও চীন সবাই অবৈধ দখলদার।
খবর বিভাগঃ
আন্তর্জাতিক
কাশ্মীর
ভারত
মতামত
0 facebook: