15 August 2019

যে কারণে ভারতের স্বাধীনতা দিবসে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে পালিত হচ্ছে ‘কালো দিবস’


আন্তর্জাতিক ডেস্ক।। আজ ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৪তম শাহাদত বার্ষিকী।

১৯৭৫ সালের শোকাবহ এই কালদিবসে ভোররাতে সেনাবাহিনীর কিছুসংখ্যক বিপথগামী সদস্য ধানমন্ডির বাসভবনে শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে।

ঘাতকরা শুধু শেখ মুজিবুর রহমানকেই হত্যা করেনি, তাদের হাতে একে একে প্রাণ হারিয়েছেন তার সহধর্মিণী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, তার সন্তান শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শিশু শেখ রাসেলসহ পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল।

অনাকাঙ্ক্ষিত এই হত্যাকাণ্ড থেকে বাঁচতে পারেনি শেখ মুজিবুর রহমানের অনুজ শেখ নাসের, ভগ্নীপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তার ছেলে আরিফ, মেয়ে বেবি ও সুকান্তবাবু, শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে যুবনেতা ও সাংবাদিক, শেখ ফজলুল হক মনি, তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মনি এবং আবদুল নাঈম খান রিন্টু ও কর্নেল জামিলসহ পরিবারের ১৬ জন সদস্য ও ঘনিষ্ঠজন। এ সময় শেখ মুজিবুর রহমানের দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় প্রাণে রক্ষা পান।

একারণেই আজকে বাংলাদেশে শোকের মাতম হলেও প্রতিবেশী বন্ধু দেশ ভারতে চলছে স্বাধীনতা দিবসের ঈদি আমেজ। তবে চিরশত্রু মনে করা পাকিস্থানের চিত্র আজ ভিন্ন। অবৈধ দখলদার ভারত কতৃক কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন ও সাংবিধানিক মর্যাদা বাতিলের প্রতিবাদে ভারতের স্বাধীনতা দিবসে পাকিস্তানজুড়ে পালিত হচ্ছে কালো দিবস।

কাশ্মীরি জনগণের প্রতি সমর্থন জানিয়ে আজ ১৫ আগস্টে কালো দিবস হিসেবে পালনের ঘোষণা দিয়েছিলেন ইমরান খানের সরকার।

পাকিস্তানের প্রভাবশালী গণমাধ্যম ডন ও জিয়ো নিউজ জানায়, জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাশ্মীরে ভারতীয় আগ্রাসনের প্রতিবাদে দেশজুড়ে কালো দিবস পালিত হচ্ছে। বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে দেশের প্রায় সব এলাকায় বিক্ষোভ ও র‌্যালি বের করা হয়েছে।

এ উপলক্ষে পাকিস্তান ও আজাদ কাশ্মীরে ভারতীয় দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ হয়েছে। এ ছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও ভারতীয় দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ দেখানো হবে। সরকারি অফিসগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে দিনভর।

এর আগে গতকাল ১৪ আগস্ট পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবসকে এবার কাশ্মীর সংহতি দিবসহিসেবে পালন করেছে পাকিস্তান। এই দিনের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাশ্মীর সিদ্ধান্তের সমালোচনা করার পাশাপাশি কাশ্মীরিদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছেন।

গত ৫ আগস্ট নরেন্দ্র মোদির সরকার কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা (ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ) বাতিল করে দিয়েছে। একই সঙ্গে জম্মু-কাশ্মীরকে ভেঙে দুটি অঞ্চল কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠন করা হয়েছে।

কাশ্মীরী সংগঠনগুলো বলেছে, জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের অর্থ হলো সেখানকার অধিবাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা। আইনটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে উপত্যাটিকে কয়েক দিন আগে থেকেই কড়া নিরাপত্তা বলয়ে মুড়ে ফেলা হয়েছে।

বিক্ষোভ ঠেকাতে দেশের বাকি অংশের সঙ্গে হিমালয় অঞ্চলটির সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হিন্দুত্ববাদী সরকার কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের ঘোষণাকে সামনে রেখে কাশ্মীরের ফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়।

এই মুহূর্তে ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীর বিশ্বের সবচেয়ে সামরিকীকৃত এলাকায় পরিণত হয়েছে। সেনাবাহিনী, আধা-সামরিক বাহিনী ও পুলিশ সদস্য মিলিয়ে সেখানে ৭ লক্ষাধিক নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছে।

অস্থায়ী কারাগার বানানো হয়েছে হোটেল, গেস্ট হাউস, সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন ভবনকে। কাশ্মীরের পুরো উপত্যকাটি যেন পরিণত হয়েছে একটি কারাগারে।


শেয়ার করুন

0 facebook: