16 August 2019

এবার উগ্রপন্থী হিন্দু বিজেপির রোষাণলে আসামের মুসলিম গবেষক রেহানা সুলতানা


আন্তর্জাতিক ডেস্ক।। পাকিস্তানের জয়ে আজ গোমাংস খাচ্ছি। আমার স্বাদ-কোরকের উপর নির্ভর করবে আমি কী খাবো। বিতর্ক তৈরি করবেন না, বা বিফ নিয়ে আপনাদের কোনও মতামত দেবেন না।’ -বছর দুয়েক আগেরা উপরোক্ত কথিত ফেসবুক পোস্ট এর উত্তাপ ছাড়াচ্ছিলো গুয়াহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মুসলিম গবেষক রেহনা সুলতানার ফেসবুকে। যাকে কেন্দ্র করেই বিপত্তি।

পাকিস্তানকে সমর্থন ও গরুর গোশত খেতে উৎসাহিত করার অভিযোগ অাসাম পুলিশ রেহনার বিরুদ্ধে এফাইআর দায়ের করে। রেহানার অবশ্য দাবি ওই পোস্টটির ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই তা মুছে ফেলা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন গুয়াহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই গবেষক। পরে অবশ্য এক প্রকার বাধ্য হয়ে নিজেকে দোষী সাব্যস্থ করতে হয়েছে নিজেকে।

দুবছর আগে ডিলিট করার পরেও নতুন একটি পোস্টের জেরে সম্প্রতি দায়ের হওয়া মামলায় কার্যত হতভম্ব ওই মুসলিম গবেষক। যদিও তার দাবি, ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের তৈরি করা আসামের নাগরিকপঞ্জি থেকে বাদপড়া বাংলাভাষীদের নাগরিকত্ব ফিরে পাওয়া সংক্রান্ত কাজকর্মে যুক্ত থাকার জন্যই তাঁর বিরুদ্ধে প্রতিহিংসামূলক আচরণ করছে পুলিশ।

ওই গবেষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ, পাকিস্তানকে সমর্থনসূচক একটি পোস্ট তিনি করেন। বছর দুয়েক আগে একটি পোস্ট তিনি করেছিলেন, সে কথা স্বীকার করেছেন রেহনা। পাশাপাশি এটাও দাবি করেছেন যে, ওই পোস্ট করার কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি বুঝতে পারেন এটা উনার জন্য বিপদজনক হতে পারে সংখ্যাগুরু হিন্দুদের ভিড়ে। তাই সেটি ডিলিট করে দিয়েছিলেন। সেটা ২০১৭ সালের ঘটনা। তা ছাড়া পাকিস্তানকে সমর্থন করে কোনও কিছু তিনি লেখেননি, বরং ক্রিকেটপ্রেমী হিসেবে হতাশ হয়েই তিনি ওই পোস্ট করেছিলেন- দাবি করেছেন রেহানা। তাঁর ওই পোস্টের ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে বলেও দাবি করেন রেহনা।

পাকিস্তানের জয় বলতে কী বোঝাতে চেয়েছেন? রেহানার দাবি, ‘২০১৭ সালের জুন মাসে ভারত-পাকিস্তানের একটি ম্যাচ হয়েছিল। বিরাট কোহালি কোনও রান করতে পারেননি। এবং ম্যাচটা পাকিস্তান জিতেছিল। ভারতীয় ক্রিকেটের একজন ফ্যান হয়ে হারের হতাশা থেকেই ওই পোস্ট করেছিলাম।

কিন্তু দুবছর আগের সেই পোস্ট এখন কীভাবে সামনে এল? গুয়াহাটি পুলিশ জানিয়েছে, স্থানীয় একটি খবরের ওয়েবাসাইটে সম্প্রতি ওই পোস্ট নিয়ে একটি খবর প্রকাশিত হয়। তাতে বলা হয়েছিল, সম্প্রতি ইদ-উল-আজহা উপলক্ষে রেহানা ওই পোস্ট করেছেন। সেই খবরের সূত্র ধরেই রেহানার বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
   
আসাম পুলিশের ডিজি কুলধর সইকিয়া জানিয়েছেন, গুয়াহাটির পুলিশ কমিশনার নিজে ঘটনার তদন্ত করছেন। ডিজি বলেন, সোশ্যাল মিডিয়া যাতে ঘৃণা বা ভুয়া খবর ছড়ানোর মাধ্যম না হয়ে ওঠে, আমরা তার চেষ্টা করছি। পুলিশকে বিষয়টির উপর কড়া নজরদারি রাখতে বলা হয়েছে।

কাকতালীয় ভাবে আসামে এনআরসি-র বিরুদ্ধে একটি কবিতা শেয়ার করেছিলেন রেহানা। সেই ঘটনায় যে নয় জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছিল, তাতে রেহনার নামও ছিল। সেই সূত্র ধরেই রেহনা বলেন, ‘প্রকৃত ভারতীয়রা যাতে নাগরিকপঞ্জিতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন, তার জন্য তিনি কাজ করেন। শুনানিতে তাঁদের সাহায্যও করেন তিনি। তাঁর সেই কাজে তাঁর মনোবল নষ্ট করতেই এই ঘটনা টেনে আনা হচ্ছে।


শেয়ার করুন

0 facebook: