22 August 2019

কাশ্মিরীদের বর্তমান দুর্দশার জন্য শুধু ভারতই নয়, দায়ী আছে আরও কিছু লোক


চিফ রিপোর্টার।। তারা কারা? তারা হল কাশ্মীরের কিছু মুনাফিক নেতাবৃন্দ। স্বাধীনতা খয়রাতের মাল নয়, এটি অনেক খুন ঝরানো অতি কষ্টে অর্জিত একটি বিষয়। এজন্য অপরিহার্য হল, যোগ্য ও সৎ নেতৃত্ব এবং জনগণের কুরবানি। মুসলমানদের অপূরণীয় ক্ষতি শুধু অমুসলিম শত্রুরাই করেনি।

বড় বড় ক্ষতি করেছে মুসলমান নামধারি সেকুলাঙ্গার ও ইসলামের প্রতি প্রচন্ড বিদ্বেষী জাতীয়তাবাদী মুনাফিক নেতারা। আজ মুসলিম বিশ্ব যেরূপ বিভক্ত, শক্তিহীন ও ইজ্জতহীন তার কারণ তো তারাই।

বাংলা, পাঞ্জাব, সিন্ধু, সীমান্ত প্রদেশ ও বেলুচিস্তানের মুসলমানদের ন্যায় কাশ্মিরীদেরও স্বাধীন হওয়ার মোক্ষম সুযোগ এসেছিল। ভারতবর্ষের বুকে মুসলমানদের জন্য স্বাধীন দেশ রূপে যারা পাকিস্তানের স্বপ্ন দেখতেন তারা কাশ্মির নিয়ে যতটা ভাবতেন কাশ্মিরীদের নিজেদের নেতারাও ততটা ভাবেনি।

ক্যাম্ব্রিজের ছাত্র চৌধুরি রহমত আলী তার আবিস্কৃত পাকিস্তান শব্দটির অক্ষরটি নিয়েছিলেন কাশ্মিরের প্রথম অক্ষর থেকে। কিন্তু ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার একমাত্র যে ট্রেনটি নতুন স্বপ্নের লক্ষ্যে যাত্রা শুরু করে সেটি ধরতে তারা দারুন ভাবে ব্যর্থ হয়। এর জন্য দায়ী তাদের ইসলামের প্রতি বিদ্বেষী সেকুলাঙ্গার নেতারা। এ নেতাদেরই একজন হল শেখ আব্দুল্লাহ।

কাশ্মিরের অমুসলিম ডোগরা রাজার বিরুদ্ধে তুমুল গণ আন্দোলনের সূত্রাপাত হয় ১৯৩১ সালে এবং সেটি জম্মুতে রাজার সৈন্যদের দ্বারা পবিত্র কুরআনের অবমাননা হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে। তখন আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছিল মুসলিম কনফারেন্স এবং তার নেতা ছিল শেখ আব্দুল্লাহ। সে ছিল চিন্তা-চেতনায় সেকুলার এবং ইসলামে অঙ্গিকার শুন্য। পাকিস্তানের স্বপ্ন তার ভাল লাগেনি। অথচ পাকিস্তান গড়ার কাজ চলছিল তার ঘরের পাশে। তার ঘনিষ্ট বন্ধুত্ব ছিল কংগ্রেস নেতা জওহার লাল নেহেরুর সাথে।

নেহেরুও ন্যায় সেও মুসলিম লীগের দ্বি-জাতি তত্ত্বে বিশ্বাসী ছিল না। বিশ্বাসী ছিল ভারতীয় এক জাতি তত্ত্বে।ফলে মুসলিম লীগের সাথে সম্পর্ক না গড়ে সে সম্পর্ক গড়ে কংগ্রেসের সাথে। তার কাছে যেটি অধিক গুরুত্ব পায় সেটি কাশ্মিরের মুসলমানদের ঐক্য নয়, বরং সেটি কাশ্মিরের হিন্দু পন্ডিতদের সাথে একাত্ব হওয়া। ফলে দুই টুকরায় বিভক্ত হয় কাশ্মিরী মুসলমানেরা।

১৯৩৯ সালের ১১শে জুনে শেখ আব্দুল্লাহ মুসলিম কনফারেন্সের নাম পাল্টিয়ে রাখে ন্যাশনাল কনফারেন্স। এভাবে একতার গুরুত্ব যে সময়টিতে সর্বাধিক ছিল তখন অনৈক্যই তীব্রতর হয়। মুসলিম কনফারেন্স দ্বিখন্ডিত হয়ে যায়। ন্যাশনাল কনফারেন্সের বিপরীতে মুসলিম কনফারেন্সের নেতৃত্ব দেন চৌধুরি গোলাম আব্বাস এবং মির ওয়াইজ ইউসুফ শাহ। মুসলিম কনফারেন্স পাকিস্তানে যোগ দেওয়ার পক্ষে জোর দাবী জানায়।

১৯৪৭ সালে হিন্দু রাজা হরি শিংয়ের সাথে শেখ আব্দুল্লাহ কাশ্মির ভূক্তির পক্ষে সিদ্ধান্ত নেয়। মুসলিম স্বার্থের সাথে এরূপ বিশ্বাসঘাতকতার বিণিময়ে শেখ আব্দুল্লাহ কাশ্মিরের প্রধানমন্ত্রী হয়। এবং কারারুদ্ধ করা হয় পাকিস্তানপন্থি নেতা চৌধুরি গোলাম আব্বাসকে। কিন্তু বিশ্বাসঘাতক নিছক বিশ্বাসঘাতকই, তাদের গুরুত্ব বেশীকাল টিকে থাকে না। এমনকি যাদের কাছে নিজেদের বিক্রি করে তাদের কাছেও না।

নেহেরুও সাথে শেখ আব্দুল্লাহর সম্পর্কে ফাটল ধরতে থাকে। ১৯৫৩ সালে তার মনে কাশ্মিরকে স্বাধীন দেশ রূপে দেখার স্বপ্ন জাগে।ভারত সরকার তাকে এ স্বপ্ন দেখার শাস্তি স্বরূপ ১৯৫৩ সালের ৯ই আগষ্ট কারারুদ্ধ করে। শেখ আব্দুল্লাহ যখন জেলে তখন ভারতের শাসনতন্ত্রে কাশ্মিরের যে আলাদা মর্যাদা ছিল সেটিও বিনষ্ট করা হয়।

অবশেষে ১৯৭৫ সালে ইন্দিরা গান্ধি সরকার শেখ আব্দুল্লাহর সাথে চুক্তি করে এবং আবার তাকে কাশ্মিরের প্রধানমন্ত্রী করে। শেখ আব্দুল্লাহর মৃত্যুর পর একই চেতনার অনুসারি পুত্র ডাঃ ফারুক আব্দুল্লাহ প্রধানমন্ত্রী হয়।

আজকে কাশ্মিরি মুসলমানদের দুর্দশার মুলে মুনাফিক শেখ আবদুল্লাহ এবং তার পরিবারের সদস্যরা। যুগে যুগে মুসলমান নামধারী মুনাফিকেরাই মুসলমানদের দুর্দশার মুলে কাজ করেছে।


শেয়ার করুন

0 facebook: